দিনের পর দিন বেড়েছে বিমান। বেড়েছে যাত্রী সংখ্যা। আর শুধু বাড়াই নয়, গত বছরের তুলনায় যাত্রী সংখ্যা প্রায় ৬০ শতাংশ বেড়ে গিয়েছে। কিন্ত বাগডোগরা বিমানবন্দরে টার্মিনাল ভবন সেই একটিই। নতুন টার্মিনাল ভবন তৈরি না হওয়ায়, সেটিকে অদল বদল করে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ পরিস্থিতি সামাল দেন। তাতে যাত্রী ভোগান্তি চলছেই বলে অভিযোগ।
বিশেষ করে ‘সিকিউরিটি চেক ইন গেট’ এবং ‘সিকিউরিটি হোল্ড এরিয়া’ মাত্র একটি হওয়ায় দুপুরের পর থেকে অধিকাংশ দিনই লম্বা লাইন পড়ে যায়। অনেক সময় বিমান ধরতে না পারার মত উপক্রমের অভিজ্ঞতাও রয়েছে যাত্রীদের। এই অবস্থায় যাত্রীদের বড় অংশ তো বটেই বিভিন্ন সংগঠনের তরফেও দ্রুত বিমানবন্দরটির সম্প্রসারণের দাবি উঠেছে।
সমস্যার কথা স্বীকার করেছেন বিমানবন্দর অধিকর্তা রাকেশ সহায়ও। তিনি বলেন, ‘‘আমরা রেস্তোরাঁ সরিয়ে আরেকটি সিকিউরিটি চেক ইনের ব্যবস্থা করেছি। পরীক্ষামূলক ভাবে কাজ হচ্ছে। আশা করছি, আগামী মাসে তা চালু হবে।’’
তিনি জানান, বিমানবন্দরের সম্প্রসারণের পরিকল্পনা নিয়ে কাজ চলছে। আসলে দুপুরের পর একসঙ্গে একাধিক বিমান চলে আসলেই ভিড় হচ্ছে। তাঁরা পরিষেবা স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করে যাচ্ছেন।
বিমানবন্দর সূত্রের খবর, কলকাতা, দিল্লি, চেন্নাই, গুয়াহাটি, মুম্বই মিলিয়ে ২১ জোড়া বিমান রোজ বাগডোগরা আসা-যাওয়া করে। এর সঙ্গে ব্যাঙ্কক, পারোর একটি আন্তর্জাতিক বিমানও রয়েছে। সব মিলিয়ে কম করে ৬০০০-৬৫০০ যাত্রী রোজ বিমানবন্দরটিকে ব্যবহার করেন। যাত্রীরা অনেকেই জানিয়েছেন, সিকিউরিটি চেক ছাড়াও অনেক সময়ই শৌচালয়গুলি অপরিষ্কার থাকে।
এমনিতে রয়েছে দু’টি শৌচালয়। মাঝে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র ঠিকঠাক কাজ করছিল না। বসার চেয়ার না পেয়ে অনেকেই দাঁড়িয়ে থাকেন। নীচের তলায় লাগেজ নেওয়ার কনভেয়র বেল্টও দু’টি। তাতেও লাইন দিতে হয়। বিমানবন্দরে হাতে অতিরিক্ত সময় না নিলে গেলেই সমস্যা বাড়ে। ধাক্কাধাক্কি করে লাইনে এগিয়ে চলার অভিযোগ করেছেন অনেক যাত্রী।
শহরের পর্যটন সংস্থার কর্তা সম্রাট সান্যাল বলেন, ‘‘যখন এই বিমানবন্দরে ৪টি বিমান চলত, তখনও টার্মিনাল ভবনটি একটাই ছিল। পরিকাঠামো কিছু বাড়লেও আয়তন তো সেটি একই আছে। উল্টে যাত্রী, বিমান বেড়েই চলছে। দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে আগামীতে সমস্যা আরও বাড়বে।’’
শিল্পদ্যোগী তথা সিআইআই-র নর্থবেঙ্গল জোনের কর্তা সঞ্জিৎ সাহা বলেন, ‘‘বিমানবন্দরের বদলে কখনও কখনও স্টেশন বা বাসস্ট্যান্ড মনে হয়। ভিতরের সমস্যা তো রয়েছেই, বাইরে পার্কিং-এ চালকদের বসার ব্যবস্থা, ঠিকঠাক শৌচাগারও নেই। অথচ ৫৫ টাকা গাড়ি পার্কিং চার্জ নেওয়া হয়। সবই পরিবর্তন দরকার।’’
বিমানবন্দরের হিসাবে, ২০১৬ সালের এপ্রিল-অক্টোবর অবধি ৭ লক্ষ ৮৩ হাজার যাত্রী যাতায়াত করেছিল। সেখানে এ বার এপ্রিল-অক্টোবরে গিয়েছে ১২ লক্ষ ৪৮ হাজারের বেশি যাত্রী। শুধুমাত্র অক্টোবরেই বেড়েছে ৫০ হাজারের বেশি। আপাতত নতুন সিকিউরিটি চেক তৈরি করে, ৪টি বোর্ডিং গেট এবং ৪টি হ্যান্ড ব্যাগেজ এক্সরে মেশিন বসিয়ে অবস্থা সামাল দেওয়ার চেষ্টা চলছে।