DA

ডিএ মামলায় ফের ধাক্কা খেল রাজ্য, রিভিউ পিটিশন খারিজ করল স্যাট

তবে এই মামলাকে হাইকোর্টে টেনে নিয়ে যাওয়ার পথও খুলে রাখল স্যাট।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৮ জুলাই ২০২০ ১৭:৩৪
Share:

রাজ্য হারলেও হাইকোর্টে যাওয়ার রাস্তা খোলা থাকল। —ফাইল চিত্র।

সরকারি কর্মীদের ডিএ (মহার্ঘ ভাতা) মামলায় আবার ধাক্কা খেল রাজ্য সরকার। বেতন কমিশনের নতুন সুপারিশ কার্যকর করার আগে মিটিয়ে দিতে হবে ডিএ বাবদ ২০০৬ সাল থেকে বকেয়া হতে থাকা যাবতীয় পাওনা-গণ্ডা, নির্দেশ দিয়েছিল রাজ্য প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনাল (স্যাট)। কিন্তু রাজ্য সরকার সে নির্দেশ পুরোপুরি মানেনি। বরং রিভিউ পিটিশন দাখিল করে রায় পুনর্বিবেচনা করার আর্জি জানায় স্যাটের কাছে। সে আর্জি বুধবার খারিজ হয়ে গেল।

Advertisement

রাজ্য সরকার যে সব কারণ দেখিয়ে রায় পুনর্বিবেচনা করতে বলছে, সেই কারণগুলি ভিত্তিহীন বলে স্যাট জানাল। তবে স্যাটের এই সিদ্ধান্ত পছন্দ না হলে যাতে হাইকোর্টে যেতে পারে রাজ্য, সে পথও খোলা রাখা হয়েছে এ দিনের নির্দেশে।

গত কয়েক বছর ধরেই ডিএ নিয়ে রাজ্য সরকারি কর্মীদের বিভিন্ন সংগঠনের সঙ্গে একনাগাড়ে টানাপড়েন চলছে রাজ্য সরকারের। কেন্দ্রীয় হারে ডিএ এবং বছরে দু’বার ডিএ ঘেষণার দাবি নিয়ে স্যাটে মামলা করেছিল একাধিক কর্মী সংগঠন। সে মামলা হাইকোর্ট পর্যন্ত গড়িয়ে যায়। কলকাতা হাইকোর্ট জানায়, ডিএ কর্মীদের ন্যায্য অধিকার, সরকারের দয়ার দান নয়। তবে কী হারে ডিএ দেওয়া হবে, সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত হাইকোর্ট নেয়নি। স্যাটে মামলা ফেরত পাঠিয়ে দেয় উচ্চ আদালত। ডিএ-র হার এবং সেই সংক্রান্ত অন্যান্য বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার ভার স্যাটকেই হাইকোর্ট দিয়ে দেয়।

Advertisement

আরও পড়ুন: সেনামুক্ত হটস্প্রিং, গালওয়ানে কাল শেষ হবে সেনা অপসারণ

২০১৯ সালের জুলাইতে স্যাট কিন্তু কর্মীদের তোলা দাবিদাওয়ার পক্ষেই রায় দেয়। সাম্প্রতিকতম রোপা-বিধি অনুযায়ী ২০০৬ সাল থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত যতটা ডিএ বকেয়া রয়েছে রাজ্য সরকারি কর্মীদের, তা মিটিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দেয় স্যাট। ধাপে ধাপে যে সময়ে যে পরিমাণ ডিএ প্রাপ্য ছিল, সেই সময়ে সেই পরিমাণ ডিএ না পাওয়ায় যা প্রাপ্য বকেয়া থেকে গিয়েছে, সে সবও মিটিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। বেতন কমিশনের নতুন সুপারিশ কার্যকর করার আগেই মিটিয়ে দিতে হবে ডিএ সংক্রান্ত যাবতীয় প্রাপ্য— এই নির্দেশও দিয়েছিল স্যাট। কিন্তু রাজ্য সরকার সে নির্দেশ পুরোপুরি মানেনি। ডিএ-র হার বাড়িয়ে দেওয়া হলেও প্রাপ্য বকেয়া আর মেটানো হয়নি। ২০২০ সালের ১ জানুয়ারি থেকে চালু করে দেওয়া হয়েছে নতুন বেতন কাঠামো।

রাজ্য সরকারের এই সিদ্ধান্তের তীব্র বিরোধিতা শুরু করে একাধিক কর্মী সংগঠন। আদালত অবমাননার মামলায় দায়ের করা হয় সরকারের বিরুদ্ধে। কর্মী সংগঠনগুলির দাবি, আদালত অবমাননার মামলা এড়াতেই রিভিউ পিটিশন দাখিল করে রাজ্য সরকার। স্যাট যে নির্দেশ দিয়েছে, তা কেন রাজ্য সরকারের পক্ষে মানা সম্ভব নয়, সে বিষয়ে কিছু যুক্তি তুলে ধরে রায়টি পুনর্বিবেচনা করার আর্জি জানানো হয়। বুধবার সেই আর্জিটাই স্যাট খারিজ করে দিল। রাজ্য সরকার যে সব কারণ দেখিয়ে রায় পুনর্বিবেচনা করতে বলছে, সেগুলো কোনও যুক্তিগ্রাহ্য কারণই নয়— এমনই জানাল বিচারপতি আর কে বাগ ও এস কে দাসের বেঞ্চ।

রিভিউ পিটিশন খারিজ হওয়ার অর্থ কী? এর অর্থ হল, স্যাটের আগের রায়ই বহাল থাকছে। কর্মীদের যাবতীয় বকেয়া প্রাপ্য মিটিয়ে দিতে দিতে রাজ্য সরকার বাধ্য। তবে এই নির্দেশের বিরুদ্ধে উচ্চতর আদালতে যাওয়ার পথও স্যাট-ই খুলে দিয়েছে। রাজ্য সরকার চাইলে উচ্চতর আদালতে রিভিউ পিটিশন দাখিল করতে পারে, লেখা হয়েছে স্যাটের নির্দেশে।

রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে লড়তে থাকা কর্মী সংগঠনগুলি এই রায়ে নিজেদের জয়ই দেখছে। তবে রাজ্য সরকারের সামনে আবার হাইকোর্টে যাওয়ার পথ স্যাট খুলে দেওয়ায় আইনি লড়াই ফের দীর্ঘায়িত হবে বলেও কর্মী সংগঠনগুলির নেতারা মনে করছেন। কর্মীদের পাওনা না মিটিয়ে আরও কিছু দিন টানাপড়েন চালিয়ে যাওয়ার সুযোগ রাজ্য সরকারকে করে দেওয়া হল বলে ওই সংগঠনগুলির মত।

আরও পড়ুন: কন্টেনমেন্ট জোনে লকডাউন থাকবে ৭দিন, বললেন মুখ্যমন্ত্রী

বিজেপির ছাতার তলায় থাকা সরকারি কর্মচারী পরিষদের রাজ্য আহ্বায়ক দেবাশিস শীলের কথায়, ‘‘এই রায় প্রত্যাশিত ছিল। আদালত অবমাননার যে ৩টি মামলার শুনানি আটকে ছিল, এই রায়ের ফলে সেই মামলাগুলোর শুনানি শুরু হওয়ার পথে আর কোনও বাধা রইল না। তবে আমাদের আশঙ্কা রাজ‌্য সরকার হাইকোর্টে এই রায় চ্যালেঞ্জ করে মামলা দায়ের করবে এবং টানাপড়েন চালিয়ে যেতে থাকবে।’’
বামেদের ছাতার তলায় থাকা কর্মী সংগঠন কোঅর্ডিনেশন কমিটির রাজ্য সাধারণ সম্পাদক বিজয়শঙ্কর সিংহ বলছেন, ‘‘আদালত কী রায় দিচ্ছে, সরকারি কর্মচারীরা সে দিকে তাকিয়ে নেই। আমরা জানি, আদালতে গিয়ে আমাদের দাবি আদায় হবে না। দাবি আদায় করতে হলে রাস্তায় নেমেই করতে হবে। এবং আমরা রাস্তায় নেমেই আমাদের ন্যায্য দাবি আদায় করব।’’

হাইকোর্টে যাওয়ার পথ খোলা থাকলেও স্যাটের এই রায় যে রাজ্য সরকারের জন্য ধাক্কা, তা নিয়ে সংশয় কমই। কিন্তু পরিস্থিতি এমনই যে, তৃণমূলের সরকারি কর্মী সংগঠন পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারি কর্মচারী ফেডারেশনও স্যাটের রায়ের বিরোধিতা করতে পারছে না। ফেডারেশনের মেন্টর গ্রুপের আহ্বায়ক মনোজ চক্রবর্তী এ দিন বলেন, ‘‘স্যাটের এই রায়কে রাজ্য সরকার সদর্থক ভাবে রূপায়ণ করবে বলেই আমার মনে হয়।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement