Sitaram Yechury Death

সীতারামের ভূমিকায় কে, বিষাদে সিপিএম

বাংলায় যেমন বিষাদ, সামগ্রিক ভাবে সিপিএমের সামনেও এই মুহূর্তে অন্ধকার। আর কয়েক মাস পরে দলের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে সীতারামের তৃতীয় দফার মেয়াদ ফুরোতো।

Advertisement

সন্দীপন চক্রবর্তী

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ০৮:২১
Share:

সীতারাম ইয়েচুরি। —ফাইল ছবি।

দিল্লির বাজারে তখন প্রবল গুঞ্জন। লোকসভা ভোটে এ বার কি তৃণমূল কংগ্রেসের সঙ্গে বাংলায় কংগ্রেসের জোট হতে চলেছে? তৃণমূলের দিল্লি-নিবাসী কিছু নেতা এবং কংগ্রেসের সর্বভারতীয় একাধিক নেতার কথায় সেই গুঞ্জনে নিয়মিতই ইন্ধন যোগ হচ্ছে। সেই সময়ে বহির্জগতের প্রায় অজান্তেই দিল্লি গিয়ে এআইসিসি-র সংশ্লিষ্ট প্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা সেরে এসেছিলেন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম। বাংলায় আসন সমঝোতা নিয়ে তখন তাঁর আলোচনা চলছিল প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীর সঙ্গে। বাইরে নানাবিধ জল্পনার মধ্যেও সেলিম এই প্রক্রিয়া এগিয়ে নিয়ে যেতে পেরেছিলেন, কারণ তাঁর দলের সাধারণ সম্পাদক কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীর সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছিলেন। রাহুলকে বোঝাতে পেরেছিলেন, জাতীয় স্তরে ‘ইন্ডিয়া’ মঞ্চের শরিক হলেও বাংলায় তৃণমূলের হাত ধরলে কংগ্রেসেরই ক্ষতি। বরং, লাভ বিজেপির। লোকসভায় শেষ পর্যন্ত সিপিএমের সঙ্গেই আসন-রফা করেছিল কংগ্রেস।

Advertisement

সীতারাম ইয়েচুরির আকস্মিক প্রয়াণে কয়েক মাস আগের ওই ঘটনাপ্রবাহ সিপিএম শিবিরে চর্চায় ফিরেছে। ওই পর্বের অন্যতম চরিত্র সেলিমের গলা ধরে আসছিল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায়, ‘‘সীতারাম নেই! আমাদের দলের জন্য, বাংলার পার্টির জন্য কত বড় ক্ষতি, কল্পনা করাও কষ্টকর।’’ অধুনা পলিটব্যুরোর সতীর্থ সেলিমকে ‘তুই’ সম্বোধনেই অভ্যস্ত ছিলেন সীতারাম। শুধু একা রাজ্য সম্পাদক নন, গোটা বাংলার সিপিএমেই এখন হাহাকার। এই রাজ্যে দলের স্বার্থ মাথায় রেখে কে লড়াই করবে জাতীয় স্তরে? দলের মধ্যে দক্ষিণী ‘লবি’র প্রাধান্য মোকাবিলা করে বাংলার মতকে কে প্রতিষ্ঠা করার জন্য লড়ে যাবে?

বাংলায় যেমন বিষাদ, সামগ্রিক ভাবে সিপিএমের সামনেও এই মুহূর্তে অন্ধকার। আর কয়েক মাস পরে দলের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে সীতারামের তৃতীয় দফার মেয়াদ ফুরোতো। ওই পদে থেকে সীতারামই দলে লড়াই করে যে কোনও কমিটির সম্পাদকের জন্য তিন বারের মেয়াদ এবং কমিটিতে বয়স-সীমা বেঁধে দেওয়ার নীতি চালু করিয়েছিলেন। সেই নীতি মেনে আগামী বছর মাদুরাই পার্টি কংগ্রেসে সীতারামকে সাধারণ সম্পাদকের ইনিংস শেষ করতে হত। কিন্তু তাঁর বিকল্প হিসেবে তেমন গ্রহণযোগ্য মুখ এখন নেই, এই যুক্তি সামনে রেখে সীতারামকে ব্যতিক্রমী ভাবে আরও এক বার সাধারণ সম্পাদক করার প্রস্তাব নিয়ে দলের অন্দরে প্রস্তুতি চালাচ্ছিলেন মূলত বাংলার নেতারাই। তার জন্য কেন্দ্রীয় কমিটির দুই-তৃতীয়াংশের সমর্থন লাগতো। এক ঝটকায় সে প্রস্তুতি জলে চলে গেল! সিপিএম সূত্রের ইঙ্গিত, আপাতত পলিটব্যুরোর অনুমোদন নিয়ে প্রকাশ বা বৃন্দা কারাটের মতো কেউ পার্টি কংগ্রেসের আগে কয়েক মাসের জন্য দলের কাজ চালাবেন। প্রসঙ্গত, এর আগে দায়িত্বে থাকাকালীন সিপিএমের কোনও সাধারণ সম্পাদক প্রয়াত হননি।

Advertisement

অন্তর্বর্তী ব্যবস্থার পরে কী হবে? দলের নানা মহলে জল্পনা রয়েছে, কেরলের প্রাক্তন মন্ত্রী মরিয়ম আলেকজ়ান্ডার বেবি দায়িত্ব পেতে পারেন পরবর্তী সাধারণ সম্পাদকের। আবার সংসদ এবং দিল্লির রাজনৈতিক ক্ষেত্রে কাজ করে আসা সেলিমকেও সর্বভারতীয় দায়িত্বে তুলে আনা হতে পারে। তখন এক দফার পরেই তাঁকে রাজ্য সম্পাদকের দায়িত্ব ছেড়ে দিতে হবে, বাংলায় নতুন নেতাকে ভার দিতে হবে। সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির এক সদস্যের কথায়, ‘‘কোনও সূত্রই বর্তমান পরিস্থিতিতে খুব সন্তোষজনক নয়। সীতারামের চলে যাওয়ার ক্ষতি অপূরণীয়!’’

কেন্দ্রীয় কমিটি, ভিন্ রাজ্যের দলীয় নেতৃত্বের আপত্তি ঠেকিয়ে বাংলায় সিপিএমের জন্য কংগ্রেসের সঙ্গে সমঝোতার ‘লাইন’ বার করে নিয়ে এসেছিলেন সীতারাম। রাজ্যে ২০১৬ সালের সেই বিধানসভা নির্বাচনে তাঁর লড়াইয়ে সঙ্গী ছিলেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। দু’বছর পরে হায়দরাবাদ পার্টি কংগ্রেসে সেই ‘লাইন’ সিলমোহর পেয়েছিল। ঘটনাচক্রে, মাসখানেকের ব্যবধানে সিপিএম হারাল বুদ্ধদেব ও সীতারামকে!

একের পর এক এমন ধাক্কায় বিহ্বল দলের প্রবীণ নেতা বিমান বসু। তবু আলিমুদ্দিন স্ট্রিটে হাজির নেতা-কর্মীদের নিয়ে সীতারামের প্রাথমিক স্মরণ-সভা করেছেন। দিল্লি যাওয়ার কথা শনিবার সকালে, স্নেহের সীতারামকে শেষ দেখা দেখতে। তার আগে আজ, শুক্রবার লালবাজার অভিযানেও থাকতে চান বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান হিসেবে। সেলিমের কথায়, ‘‘নো হলিডে ইন পিপল্‌স সার্ভিস, সীতারাম বলতো! শোক ভুলতে কাজই করতে হবে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement