দলের অন্দরে তিনি বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য, সূর্যকান্ত মিশ্রদের পক্ষেই ব্যাট করে আসছেন। এ বার প্রকাশ্য মঞ্চ থেকেও বঙ্গ ব্রিগেডের লাইনের পাশে দাঁড়ালেন সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি। সরাসরিই বললেন, নির্বাচনী রণকৌশল নিয়ে আবার ২০১৯ সালে ভাবা যাবে। এখন সব ধরনের গণতান্ত্রিক শক্তিকে একজোট করে বিজেপি তথা সঙ্ঘ পরিবারের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলাই প্রধান কর্তব্য। বাংলার রাজনীতিতে একই কাজ করতে হবে তৃণমূলের মোকাবিলায়। এই যুক্তি সামনে রেখেই দলের মধ্যে
প্রকাশ কারাটদের কংগ্রেস-বিরোধিতার লাইনের বিরুদ্ধে লড়াই চালাচ্ছেন সূর্যবাবুরা।
কংগ্রেস-প্রশ্নে অহেতুক বিতর্ক ছেড়ে বিজেপি বিরোধিতাই এখন সিপিএমের মূল রাজনৈতিক লাইন হওয়া উচিত বলে সওয়াল করে পলিটব্যুরোকে কড়া নোট পাঠিয়েছেন ইতিহাসবিদ ইরফান হাবিব। সরাসরি তাঁর নাম উল্লেখ করেও বুধবার কলকাতায় প্রমোদ দাশগুপ্ত স্মারক বক্তৃতায় ইয়েচুরি যা বলেছেন, তার নির্যাস হাবিবের যুক্তির সঙ্গেই মিলে যাচ্ছে।
ইয়েচুরি বোঝাতে চেয়েছেন, ধর্মনিরপেক্ষ গণতন্ত্র, অর্থনৈতিক স্বনির্ভরতা, সামাজিক ন্যায় এবং যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো— দেশের এই চার বৈশিষ্ট্যই বিজেপি ও সঙ্ঘ পরিবারের হাতে বিপন্ন। এর মোকাবিলায় এক দিকে যেমন মগজের লড়াই প্রয়োজন, তেমনই দরকার সব গণতান্ত্রিক শক্তির একজোট হয়ে দাঁড়ানো। ইয়েচুরি অবশ্য বলেছেন, ‘‘গণতান্ত্রিক শক্তির মধ্যে আমি কোনও রাজনৈতিক দলের নাম বলছি না। দলের বাইরে অনেক ব্যক্তিও এই শক্তির অংশ।’’
বাংলায় দিদিভাই সংখ্যালঘুদের তোষণের নীতি নিয়ে চলছেন আর তার উল্টো দিকে সংখ্যাগুরু ভাবাবেগের ফায়দা তুলে মোদীভাইয়ের দলের সুবিধা হচ্ছে বলে ইয়েচুরির বক্তব্য। বাংলার প্রসঙ্গ টেনেই তিনি এ দিন বলেছেন, ‘‘গণতন্ত্রের পক্ষে দাঁড়াতে গিয়েই সিপিএম এখানে আক্রান্ত। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে বাঁচাতে না পারলে যে কোনও দলের অস্তিত্বই যে সঙ্কটে পড়বে, এটা সকলকে বুঝতে হবে। এই পরিস্থিতির মোকাবিলায় যারা এগিয়ে আসবে, তারাই গণতান্ত্রিক শক্তি।’’
রাস্তার এই লড়াইয়ের পক্ষে সওয়াল করে সিপিএমের সাধারণ সম্পাদকের সংযোজন, ‘‘নির্বাচনী কৌশল নিয়ে আবার ২০১৯ সালে ভাবলেই চলবে!’’ বঙ্গ ব্রিগেডের লাইনে ইয়েচুরি এ ভাবে সিলমোহর দেওয়ার সময়ে সুর্যবাবু, বিমান বসু অবশ্য মঞ্চে ছিলেন না।
উপস্থিত ছিলেন পলিটব্যুরোর সদস্য মহম্মদ সেলিম।