Kolkata Doctor Rape and Murder

পুলিশ-চক্ষুর মধ্যেই শুরু ডাক্তার-অবস্থান

শুক্রবার হাই কোর্ট নির্দেশ দিয়েছিল, ৪০ ফুট লম্বা ও ২৩ ফুট চওড়া জায়গার মধ্যে মঞ্চ ও জমায়েত করতে হবে। এক সঙ্গে ২০০-২৫০ জনের বেশি সদস্য বা সাধারণ মানুষের জমায়েত করা যাবে না।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২২ ডিসেম্বর ২০২৪ ০৯:১৭
Share:

ধর্মতলায় জয়েন্ট প্লাটফর্ম অফ ডক্টরস এর অবস্থান চলছে। ছবি স্বাতী চক্রবর্তী

বিক্ষিপ্ত বৃষ্টি কিছুটা হলেও তাল কেটেছে। কিন্তু তাতেও আর জি করের ঘটনার প্রতিবাদে ধর্মতলার ডোরিনা ক্রসিংয়ের অবস্থান মঞ্চে উদ্দীপনায় ভাটা পড়েনি। বরং সকাল থেকে রাত পর্যন্ত স্লোগান তুলে বার বার মনে করিয়ে দেওয়া হয়েছে, ন্যায় বিচারের দাবিতে রাজপথে থাকতে হবে। অবস্থানে হাজির চিকিৎসক থেকে সাধারণ মানুষ এবং পথচলতি অনেকেই তাতে সুর মিলিয়ে দাবি তুলেছেন, ‘বিচার যত দেরি হবে, আন্দোলন তত তীব্র হবে।’

Advertisement

কলকাতা পুলিশ নাকচ করে দিলেও হাই কোর্টের অনুমতি নিয়ে শুক্রবার রাত থেকে ডোরিনা ক্রসিংয়ে অস্থায়ী মঞ্চ বেঁধে প্রতিবাদ-আন্দোলন শুরু করেছে ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল জয়েন্ট প্ল্যাটফর্ম অব ডক্টর্স’ এবং ‘অভয়া মঞ্চ’। আয়োজকেরা জানাচ্ছেন, আদালতের নির্দেশ ও শর্ত মেনেই তাঁরা মঞ্চ তৈরি করেছেন। লোকজন জমায়েতের দিকেও নজর রাখছেন। যদিও বৃষ্টির কারণে এ দিন সকালে তেমন ভাবে সাধারণ মানুষ অবস্থানে যোগ দেননি। তবে বিকেলের পর থেকে কিছুটা হলেও ভিড় বেড়েছে।

শুক্রবার হাই কোর্ট নির্দেশ দিয়েছিল, ৪০ ফুট লম্বা ও ২৩ ফুট চওড়া জায়গার মধ্যে মঞ্চ ও জমায়েত করতে হবে। এক সঙ্গে ২০০-২৫০ জনের বেশি সদস্য বা সাধারণ মানুষের জমায়েত করা যাবে না। এ দিন সকালে মঞ্চের চারিদিক ফিতে দিয়ে মাপেন পুলিশ আধিকারিকরা। তাতে সামনের দিকের লোহার গার্ডরেল ২ ফুট এগিয়ে এসেছে বলে জানানো হয় পুলিশের তরফে। পুলিশ সেই গার্ডরেল
পিছিয়ে দেয়।

Advertisement

আয়োজকদের অবশ্য দাবি, তাঁরা হাই কোর্টের শর্ত মেনে চলছেন। আয়োজকদের তরফে চিকিৎসক পুণ্যব্রত গুণ বলেন, ‘‘পুলিশ গার্ডরেল দিয়ে ঘিরে দিয়েছে। ওঁরা মেপে দেখেছেন, সেটা এগিয়ে গিয়েছে। আবার নিজেরাই ঠিক করে দিয়েছেন। আমরা কোনও নিয়ম লঙ্ঘন করছি না।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘ন্যায় বিচারের জন্য রাস্তায় ছিলাম, আছি এবং থাকব। আর সেটা নিয়ম মেনেই করব।’’

২৬ ডিসেম্বর রাত পর্যন্ত সারা দিন কর্মসূচি করার অনুমতি দিয়েছে হাই কোর্ট। শর্তে বলা হয়েছে, জমায়েত বেশি হলে পুলিশের সঙ্গে আলোচনা করতে হবে। কারও উদ্দেশে প্ররোচনামূলক মন্তব্য করা যাবে না। অবস্থানের আয়োজকেরা সেই নিয়ম কতটা মেনে চলছেন, সেটাও প্রতিনিয়ত পর্যবেক্ষণ করছে পুলিশ। মঞ্চের দিক করেই লাগানো হয়েছে সিসি ক্যামেরা। ভিডিয়ো ক্যামেরার মাধ্যমে সরাসরি পুরো কর্মসূচি পর্যবেক্ষণ করছে লালবাজার। গার্ডরেলের বাইরে লোকজন দাঁড়ালেই, পুলিশ এসে ভিতরে ঢুকে যেতে বলছে। আয়োজক চিকিৎসকরাও বার বার করে ঘোষণা করছেন, কেউ যেন বাইরে দাঁড়িয়ে না থাকেন। চিকিৎসক তমোনাশ চৌধুরী বলেন, ‘‘শৃঙ্খলাপরায়ণ ভাবেও যে আন্দোলন করা যায়, এবং মার্জিত ভাষাতেও ন্যায় বিচারের জন্য প্রশ্ন তোলা যায়। সেটাই আমরা দেখিয়ে দিতে চাই।’’

দু’মাস আগে জুনিয়র ডক্টর্স ফ্রন্টের অনশন মঞ্চ থেকে ওঠা স্লোগানগুলিই ফিরে এসেছে চিকিৎসকদের যৌথ মঞ্চ ও অভয়া মঞ্চের আয়োজনে এই অস্থায়ী মঞ্চ থেকে। বৃষ্টির মধ্যেই স্লোগান উঠল, ‘তুমি করো মিথ্যাচার, আমরা চাই ন্যায় বিচার’। হুমকি প্রথা, খুন-ধর্ষণের মতো ঘটনার বিরুদ্ধেও সরব হন মঞ্চে উপস্থিত চিকিৎসক ও বিভিন্ন নাগরিক সংগঠনের সদস্যেরা। শুক্রবার রাতে ধর্মতলার অবস্থান মঞ্চ তৈরির সময়ে হাজির হয়েছিলেন ফ্রন্টের সদস্য তথা জুনিয়র চিকিৎসক আশফাকউল্লা নাইয়া। তিনি বলেন, ‘‘সব উৎসবের একটা প্রস্তুতি থাকে। তেমনই আমরাও ন্যায় বিচার পেতেই লড়াই করছি। যে দিন সেটা মিলবে, সেটাও জয়ের উৎসবই হবে।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘বছর শেষের উৎসবে কাউকে যোগ দিতে তো আমরা বাধা দিচ্ছি না। কারণ সেটা তাঁর ব্যক্তিগত বিষয়। আমরা শুধু অনুরোধ করছি, ন্যায় বিচার ছিনিয়ে আনার লড়াইতে সকলে মিলেই রাস্তায় থাকুন।’’

একই কথা শোনা গেল ফ্রন্টের আর এক সদস্য জুনিয়র চিকিৎসক দেবাশিস হালদারের আবেদনেও। এ দিন বিকেলে ধর্মতলার অবস্থান মঞ্চ থেকে তিনি বলেন, ‘‘কেন আজ আমাদের রাজপথে নামতে হচ্ছে? সন্দীপ ঘোষ ও অভিজিৎ মণ্ডলের বিরুদ্ধে ৯০ দিন পরেও যদি সিবিআই চার্জশিট দিতে না পারে, তা হলে তাদের গ্রেফতার করেছিল কেন?’’ আর্থিক দুর্নীতি মামলায় সন্দীপ ও আশিস পাণ্ডের বিরুদ্ধে চার্জশিট দেওয়া নিয়ে রাজ্য এখনও সম্মতি না দেওয়ার প্রসঙ্গ তুলে দেবাশিস বলেন, ‘‘যে প্রভাব বলে সন্দীপ ঘোষ পদত্যাগ করার পরেও ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ পদে পুর্নবহাল হয়েছিলেন, সেই প্রভাবেই হয়তো চার্জশিট পেশে সম্মতি দেওয়া হচ্ছে না। আমরা বুঝতে পারছি না রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী তথা পুলিশ ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী কার পক্ষ নিতে চাইছেন।’’ সিবিআইয়ের বিরুদ্ধেও এ দিন ক্ষোভ উগড়ে দেন দেবাশিস। তাঁর দাবি, ‘‘সিবিআই কাদের অঙ্গুলি হেলনে কাজ করে আমরা জানি। তা হলে কি ধরে নিতে হবে, কোথাও সেটিং হয়েছে?’’ একই ভাবে রাজ্যের প্রতিটি জায়গায় স্বাস্থ্য-সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে হুমকি প্রথা, ভয়ের পরিবেশের বিরুদ্ধেও সরব হন দেবাশিস। বললেন, ‘‘প্রতিটি জায়গাতেই যে সময় যে শাসক দল থেকেছে, সেই রক্তচক্ষু দেখিয়েছে। তাই আমাদের সকলকে একজোট হয়ে লড়তে হবে।’’ এ দিন বিভিন্ন সময়ে আরও কয়েক জন জুনিয়র চিকিৎসক অবস্থান মঞ্চে আসেন। তাঁরা প্রত্যেকেই নিজেদের মতো করে অবস্থানে যোগ দিচ্ছেন বলে জানিয়েছেন।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement