উত্সবের মেজাজে সিঙ্গুর।
বৃত্ত সম্পূর্ণ হয়েছে। তাই উৎসব।
উৎসব, তাই নানা দিকে জায়ান্ট স্ক্রিন বসছে ১২টি। বিভিন্ন জেলা থেকে আসা পুলিশ ও সিভিক ভলান্টিয়ার মিলিয়ে রাস্তায় নামছেন ৫ হাজার জন। নীল-সাদা রঙে সেজেছে ব্লক অফিস, থানা এবং জাতীয় সড়কের উপরে তৈরি হওয়া ৮০ ফুট লম্বা, ৬০ ফুট চওড়া সভামঞ্চ। হোর্ডিংয়ে ছয়লাপ চারপাশ। দু’দিন আগেই শুরু হয়ে গিয়েছে যান নিয়ন্ত্রণ।
সিঙ্গুরে জমি অধিগ্রহণের প্রতিবাদে আট বছর আগে সানাপাড়ায় মঞ্চ বেঁধে অবস্থান-বিক্ষোভ করেছিলেন তখনকার বিরোধী নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শীর্ষ আদালতের রায়ে বলীয়ান হয়ে এ বার মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে সেই জমি ফিরিয়ে দিতে কাল, বুধবার সানাপাড়াতেই আসছেন মমতা। তাই দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ের বর্ধমানমুখী ‘লেন’ জুড়ে তৈরি হয়েছে ‘সিঙ্গুর উৎসব’-এর মঞ্চ।
এমন মেগা উৎসবের সাক্ষী থাকতে সিঙ্গুর এখন ফুটছে। কিন্তু প্রমাদ গুনছেন পুলিশ প্রশাসনের কর্তাদের বড় অংশ। কারণ, যে দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়েতে মোটা টাকা ‘টোল’ দিয়ে সারাদিনে অন্তত ২৮ হাজার গাড়ি (জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের হিসেব) চলে, ভিড়ের চাপে সে দিন ওই সড়কের দু’টি ‘লেন’ই অবরুদ্ধ হয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। সে ক্ষেত্রে পুলিশ পাশের দিল্লি রোড দিয়ে গাড়ি ঘুরিয়ে দিতে পারে। কিন্তু দিল্লি রোড এখন চার ‘লেন’ করার কাজ চলছে। ফলে, যানজট কোন পর্যায়ে পৌঁছবে তা আন্দাজ করতে পারছেন না পুলিশ কর্তারা। গাড়ির চাপ পাশের জি টি রোডেও ছড়িয়ে যেতে পারে বলে মনে করছেন অনেকে।
মমতা অবশ্য সোমবার নবান্নে বলেন, ‘‘মাঠের ভিতরে আমরা অনুষ্ঠান করতে পারছি না। করতে পারলে ভাল হতো। ওই জায়গা অনেকদিন ব্যবহার হয়নি। সাপখোপ রয়েছে। তার উপর বর্ষাকাল। অনেক জায়গায় জল জমে রয়েছে।’’
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, বুধবার বিকেল ৪টে নাগাদ উৎসব শুরু হয়ে চলবে ঘণ্টাখানেক। তার কয়েক ঘণ্টা আগে থেকেই হুগলির ডানকুনি থেকে ধনেখালির মহেশ্বরপুর মোড় পর্যন্ত দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়েতে যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হবে।
মালবাহী গাড়িগুলিকে দিল্লি রোড দিয়ে ঘুরিয়ে দেওয়া হবে। ছোট গাড়ি বা যাত্রিবাহী গাড়িগুলিকে অবশ্য এক্সপ্রেসওয়ের কলকাতামুখী ‘লেন’ দিয়ে চালানো হবে। বর্ধমানের দিক থেকে যাঁরা এক্সপ্রেসওয়ে হয়ে সভায় আসবেন, তাঁদের গাড়ি রাখার জন্য প্রকল্প এলাকার কাছে ‘হিমাদ্রি কেমিক্যালস’ নামে একটি কারখানার সামনে জায়গা করা হচ্ছে। অন্য দিকে, হাওড়া, কলকাতা বা লাগোয়া জেলাগুলি থেকে যাঁরা আসবেন তাঁদের গাড়ি রাখার জায়গা হচ্ছে রতনপুরের কাছে। সভাস্থলে ওই কর্মী-সমর্থকদের হেঁটেই পৌঁছতে হবে। কিন্তু লোকসংখ্যা বেড়ে গেলে এক্সপ্রেসওয়ে দিয়ে যান চলাচল বন্ধ করে সব গাড়িকে দিল্লি রোড দিয়ে ঘোরানো হবে। কিন্তু সভার পরেও যানজট কেটে দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ে কখন স্বাভাবিক হবে তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।
জেলা প্রশাসনের এক কর্তা সোমবার বলেন, “এখন থেকেই এ ব্যাপারে নির্দিষ্ট করে কিছু বলা সম্ভব নয়। যদি দেখা যায় গাড়ি চলাচলে সমস্যা হচ্ছে না, তা হলে চলবে। না হলে রাস্তা বন্ধ করতে হবে।”
বিরোধী দলনেতা আব্দুল মান্নানের অভিযোগ, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী নিজে আইন ভাঙছেন। এ ভাবে এক্সপ্রেসওয়ে বন্ধ করা যায় না। ওঁর জন্য সব ছাড়!’’ সিপিএমের সিঙ্গুর জোনাল কমিটির সম্পাদক পাঁচকড়ি রায়েরও একই বক্তব্য। তিনি বলেন, ‘‘সিঙ্গুরে অন্য কোথাও সভা করাই যেত।’’
জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব এই সব তিরকে আমল দিতে রাজি নন। যাঁরা সভায় আসবেন, তাঁদের সুবিধা দেখার জন্য অন্তত দু’হাজার দলীয় কর্মীকে স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে নামানো হচ্ছে বলে জানিয়েছেন জেলা তৃণমূল সভাপতি তথা মন্ত্রী তপন দাশগুপ্ত।
তবে সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ নিয়ে চিন্তা যাচ্ছে না প্রশাসনের।