ও-পারে কড়া নজরদারি র্যাবের। ঢাকার রমনা উদ্যানে নিরাপত্তা ব্যবস্থা খতিয়ে দেখছেন ডিজি বেনজির আহমেদ। ছবি: বাপি রায়চৌধুরি
বাংলাদেশের জামাত নেতা কামারুজ্জামানের অনুগামী প্রাক্তন সিমি নেতারা এ রাজ্যে সক্রিয় হচ্ছেন বলে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সূত্রে খবর।
একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধে দোষী সাব্যস্ত জামাতে ইসলামির অন্যতম শীর্ষ নেতা কামারুজ্জামানকে শনিবার রাতে ফাঁসি দেওয়া হয়। কেন্দ্রীয় গোয়েন্দাদের একটি সূত্রের দাবি, কামারুজ্জামানের ফাঁসির খবর পৌঁছনোর পরে রাতেই কলকাতায় এক প্রার্থনা শিবিরে মিলিত হন ওই প্রাক্তন সিমি নেতারা। শনিবার রাতে পার্ক সার্কাসের ব্রাইট স্ট্রিট এলাকায় এক প্রাক্তন সিমি নেতার বাড়িতে ওই প্রার্থনা শিবিরের আয়োজন করা হয়েছিল। গোয়েন্দারা জানতে পেরেছেন, এ রাজ্যের বহু প্রাক্তন সিমি নেতা ওই শিবিরে হাজির ছিলেন।
রাজ্য সরকারের তরফে এ প্রসঙ্গে কেউ সরাসরি মন্তব্য করতে চাননি। রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘প্রশাসনের সঙ্গে কথা না বলে এ নিয়ে মন্তব্য করা ঠিক নয়। যখন খবর এসেছে, তখন তা নিশ্চয়ই দেখা হবে।’’ রাজ্য স্বরাষ্ট্র দফতরের এক কর্তার কথায়, ‘‘এখনও কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা দফতর সূত্রে সরকারি ভাবে কিছু জানানো হয়নি। তবে আমাদের রাজ্য গোয়েন্দা দফতরও খুবই সক্রিয়। আমরা বিষয়টা খতিয়ে দেখছি।’’
কেন্দ্রীয় গোয়েন্দাদের একটি সূত্রের দাবি, ২০১০ সালে গ্রেফতারের আগে পর্যন্ত কলকাতার পার্ক সার্কাস, দরগা রোড ও রিপন স্ট্রিট এলাকার বাসিন্দা কয়েক জন প্রাক্তন সিমি নেতার ডেরায় নিয়মিত আনাগোনা ছিল কামারুজ্জামানের। এ রাজ্যে সিমির প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক তথা একটি উর্দু সংবাদপত্রের বার্তা সম্পাদকের সঙ্গে কামারুজ্জামানের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ ছিল। কামারুজ্জামানের গ্রেফতারের পরেও একাধিক বার ওই জামাত নেতার সমর্থনে ওই পত্রিকাটিতে নানা খবর করা হয়েছে বলেও জানতে পারেন গোয়েন্দারা। কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার এক কর্তার কথায়, ‘‘বাংলাদেশের জামাত নেতাদের সঙ্গে এ রাজ্যের প্রাক্তন সিমি নেতাদের যোগসূত্র খোঁজার চেষ্টা হচ্ছে।’’ গত অক্টোবরে খাগড়াগড় কাণ্ডের পরে তদন্তে নেমে ওই ঘটনার সঙ্গে জামাতের পাশাপাশি প্রাক্তন সিমি নেতাদেরও যোগসূত্র খুঁজে পেয়েছে এনআইএ। আদালতে পেশ করা চার্জশিটে এনআইএ-র দাবি, বাংলাদেশে হামলার জন্যই জামাত নেতারা খাগড়াগড় ও শিমুলিয়ায় জঙ্গি শিবির তৈরি করেছিল। গোয়েন্দাদের একাংশের দাবি, কামারুজ্জামান জামাতের অন্যতম মাথা ছিলেন। ২০০৮ সাল থেকে খাগড়াগড় ও শিমুলিয়া এলাকায় জামাত নেতাদের আনাগোনা ছিল। কলকাতায় বিভিন্ন ডেরায় ওই নেতারা আশ্রয়ও নিতেন। এনআইএ-র এক তদন্তকারীর কথায়, ‘‘খাগড়াগড় কাণ্ডে কামারুজ্জামান-সহ কলকাতার প্রাক্তন সিমি নেতারা জড়িত রয়েছেন কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এই ঘটনায় কয়েক জন ধৃতকে জেরা করা হয়েছে। কিছু সূত্রও মিলেছে।’’ এ বার কামারুজ্জামানের জন্য প্রার্থনা শিবিরে উপস্থিত প্রাক্তন সিমি নেতাদের বিষয়েও তথ্য জোগাড় করতে শুরু করছেন গোয়েন্দারা।
সতর্ক ঢাকাও
কামারুজ্জামানের শেষকৃত্য ঘিরে কড়া সতর্কতা নিল শেখ হাসিনা প্রশাসন। রবিবার ভোরে উত্তর শেরপুর জেলার কুমরি মুদিপাড়ায় কামারুজ্জামানের গ্রামের বাড়ির কাছে তাঁকে কবর দেওয়া হয়। বিজিবি, র্যাব ও পুলিশ বাহিনীর ন’টি গাড়ির পাহারায় একটি অ্যাম্বুল্যান্সে তাঁর দেহ গ্রামে নিয়ে আসে প্রশাসন। ফাঁসির পরে বিজয় মিছিল বেরিয়েছে। আবার দেশ জুড়ে বিক্ষোভের ডাক দিয়েছে জামাত। ইতস্তত গোলমালও হয়েছে বিভিন্ন জায়গায়। ঢাকায় দু’টি বাসে ভাঙচুর চলে। শোভনবাগে ফাঁসির প্রতিবাদে সভা চলার সময়ে দু’টি বোমা ফাটে।