শিলিগুড়ির মেয়র অশোক ভট্টাচার্যকে প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগের বিষয় নিয়ে স্মারকলিপি দিচ্ছেন কংগ্রেস কাউন্সিলর সুজয় ঘটক। মঙ্গলবার বিশ্বরূপ বসাকের তোলা ছবি।
এক পশলা বৃষ্টিতেই ওয়ার্ডের একাংশে হাঁটু জল জমা বন্ধ করতে ভোটের আগে ডান-বাম সব তরফেই প্রতিশ্রুতি ছিল ভুরি ভুরি। ভোটের ফল বার হতেই পুরসভার একাধিক সাফাইয়ের গাড়ি নিয়ে নিকাশি নালা এক দফায় সাফাইয়ের কাজও করান উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী গৌতম দেব। এ বার এই ওয়ার্ডে জয়ী হয়েছেন অশোক ভট্টাচার্য। মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর মঙ্গলবার সাত সকালে ঘণ্টা দেড়েক অশোকবাবু নিজের ওয়ার্ডে একপ্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্ত ঘুরে ঘুরে বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বললেন। জায়গায় জায়গায় মালা, ফুলের তোড়া এবং মিষ্টি খাইয়ে তাঁকে শুভেচ্ছা জানালেও ওয়ার্ডের নিকাশির সমস্যার কথা স্মরণ করিয়ে দিতে ভোলেননি বাসিন্দারা।
দ্বারভাঙাটোলার জাহিনা বেগম থেকে শুরু করে কুরেশি মহল্লার হামিদা খাতুনের মত অনেকেই বললেন, ‘‘বর্ষার মরসুম প্রায় চলেই এসেছে। রাতে মাঝেমধ্যেই প্রবল বৃষ্টি হচ্ছে। এর পরেই তো মুশকিলে পড়ে যাব। এখনই নালা-নর্দমাগুলি আরও সাফাই করা দরকার।’’ মেয়র বললেন, ‘‘আমার ওয়ার্ডে নিকাশি একটা বড় সমস্যা। এটা একটা চ্যালেঞ্জ। নালা-নর্দমাগুলি অনেক জায়গাতেই মাটি ভরে আছে। সঠিক পরিকল্পনা নিয়ে কাজে নামতে হবে।’’
শহরের কাছারি রোড থেকে হিলকার্ট রোডের ঢোকার পর বাঁ পাশের গোটা এলাকাটাই ছ’নম্বর ওয়ার্ড। মহাবীরস্থান রেলগেট থেকে মহানন্দা সেতু লাগোয়া মোড় অবধি ওয়ার্ডটি ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। বস্তি, মধ্যবিত্ত পাড়া, উচ্চবিত্তদের ফ্ল্যাটবাড়ি যেমন রয়েছে, তেমনই এলাকাটি বাণিজ্যিক এলাকা বলেও চিহ্নিত। ওয়ার্ডটির মাঝখান অনেকটাই নৌকার ঢালের মত নিচু। একপাশে প্রায় ৮-১০ ফুট উঁচু হিলকার্ট রোড। অন্যপাশে একই রকম উচ্চতার ওয়ার্ড বরাবর রয়েছে রেল লাইন। মাঝের ডাঙিপাড়ার বিস্তীর্ণ এলাকায় জল জমে পশলা বৃষ্টিতেই।
ওয়ার্ডের বাসিন্দারা জানান, বর্ষায় ওয়ার্ডের জল ছাড়াও হিলকার্ট রোডের আরেক পাশের ১০ এবং ১১ নম্বর ওয়ার্ডের জল চানাপট্টি এবং হাসমিচক এলাকার মাটির নিচের নালা দিয়ে ওয়ার্ডে ঢোকে। কিন্তু ওয়ার্ড থেকে জল বার হওয়ার একটিই নর্দমা রাজেন্দ্রপ্রসাদ স্কুলের পিছনের দিকের রেল লাইনের তলা দিয়ে ৭ নম্বর ওয়ার্ডে গিয়েছে। তা ছাড়া বহু এলাকায় নিকাশি নালার উপর বাড়ি ঘরও হয়েছে। এতে নালাগুলি ঠিকঠিক সাফাই হয় না। একটু বৃষ্টি হলেই ওয়ার্ড ভাসতে শুরু করে। আবার মহানন্দাপাড়া এলাকায় একাধিক হোটেল, বাণিজ্যিক ভবন, বহুতল আবাসন তৈরি হওয়ায় জলের স্তরও নিচে নেমে গিয়েছে।
পোষ্যকে আদর নতুন মেয়রের।
উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী গৌতমবাবুর বক্তব্য, ‘‘অশোকবাবু ভোটের জেতার আগে নানা প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। এখন নিজের ওয়ার্ডের নিকাশি থেকে বর্যার শহরের জল, সবই তো ওঁকে দেখতে হবে। আমরাও পরিস্থিতির দিকে নজর রাখব।’’ ওয়ার্ডের বাসিন্দা তথা জেলা কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক কুন্তল গোস্বামী বলেন, ‘‘টানা নিকাশি নালা সাফাই, মাটি তোলা ছাড়া উপায় নেই। আমরা আশা করব, অশোকবাবু অবশ্যই প্রতিশ্রুতি মত ব্যবস্থা নেবেন।’’
এ দিন সকাল সাড়ে ১০টা নাগাদ দলীয় দফতর থেকে হেঁটেই ওয়ার্ড পরিক্রমা শুরু করেন নতুন মেয়র। প্রথমে অশোকবাবুর প্রয়াত কাকা তথা কংগ্রেসের প্রাক্তন পুরসভার চেয়ারম্যান জগদীশ ভট্টাচার্যের সহকর্মী ৯৮ বছরের বৃদ্ধ কমলা প্রসাদ শ্রীবাস্তবের বাড়িতে গিয়ে আশীর্বাদ চান। তার পরে কখনও মিঁয়া গ্যারেজ ভবনে সুলেমান খান বা কখনও হোটেল মালিক গুরুচরণ সিংহ সালুজা, মহেন্দ্রর সিংহ বা বাণিজ্যিক ভবনের মালিক অনিরুদ্ধ মিশ্রদের সঙ্গে দেখা করেন।
শপথ নেওযার পরে জলপাইগুড়ি পুরসভা প্রধানের চেয়ারে বসলেন মোহন বসু। মিষ্টি বিলি করে শুরু করলেন কাজ। ছবি: সন্দীপ পাল।
চপ্পলপট্টি, ফকিরটোলা, কুরেশিমহল্লা, ডাঙিপাড়ার গঙ্গা প্রসাদ, পান্নালাল শাহ, হাসিনা খাতুন, রহমতুন নিসা’রা ফুল দিয়ে সংবর্ধনা জানিয়ে মিষ্টি খাওয়ান অশোকবাবুকে। কংগ্রেসের সংখ্যালঘু সেলের সভাপতি হাজি মমতাজ হোসেনের বাড়িতে গিয়েও মেয়র আগামীদিনে কাজকর্ম করার ক্ষেত্রে তাঁর পরামর্শ চান। জামা মসজিদের ইমাম মৌলানা সাদের আলি এবং সম্পাদক খলিল আশরফিও তাঁর হাতে ফুল তুলে দেন। ডাঙিপাড়ায় সুতপা দে, কল্যাণী রায় চৌধুরী, মনিশা সিংহরা ফুল ছিটিয়ে নতুন মেয়রকে অভিনন্দন জানান।
সকাল থেকেই অশোকবাবুর সঙ্গে ছিলেন এলাকায় তাঁর ছায়াসঙ্গী শুভ্র দে, ফিরোজ আহমেদ খান এবং উজ্জল মিত্ররা। উজ্জ্বলবাবুর মোটরবাইকে চড়েই আজ, বুধবার ফের এলাকায় আসবেন বলে জানিয়ে দলীয় কার্যালয়ে ফেরেন নতুন মেয়র।