বিমল গুরুঙ্গ
বিনয় তামাঙ্গ-অনীত থাপা জুটির পক্ষে দার্জিলিঙে সমর্থন ক্রমশ জোরালো হচ্ছে। এখন তাই বিমল গুরুঙ্গের সঙ্গে দূরত্ব বাড়ানোর ভাবনা শুরু হয়েছে সিকিমের মুখ্যমন্ত্রী পবন চামলিঙের দল সিকিম ডেমোক্র্যাটিক ফ্রন্ট (এসডিএফ)-এ। সেই দলের একাংশের সূত্রে এ কথা জানা গিয়েছে।
সামনেই পঞ্চায়েত ভোট। আর সিকিমের নেপালিভাষীদের একাংশ ইতিমধ্যেই বিনয়-অনীত জুটির সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে শুরু করেছেন আঁচ পেয়েই এই অবস্থান বদল বলে মনে করা হচ্ছে। সূত্রের খবর, এসডিএফের তরফে চুপিসাড়ে প্রচার হচ্ছে, জঙ্গিপনায় অভিযুক্তদের সিকিমে ঠাঁই হবে না। পুলিশ ও গোয়েন্দাদের ধারণা, সেটা জেনেই সিকিমের জোড়থাং লাগোয়া পাহাড়-নদী-জঙ্গল ঘেরা আরও দুর্গম এলাকায় ঘাঁটি সরাচ্ছে গুরুঙ্গ শিবির। সেই মতো ছক কষছে দার্জিলিং পুলিশও।
জুন মাসে পাহাড় অগ্নিগর্ভ হওয়ার পরে মুখ্যমন্ত্রী পবন চামলিং বারবার দুষেছেন পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে। তাই তাঁর বিরুদ্ধেও সন্ত্রাসে মদত দেওয়ার অভিযোগ তুলেছেন রাজ্যের পর্যটন মন্ত্রী গৌতম দেব। তবুও এতদিন এসডিএফ গুরুঙ্গের সঙ্গে দূরত্ব বোঝাতে প্রচারে নামেনি। কিন্তু এখন যেহেতু সিকিমে ৬০ শতাংশ নেপালিভাষী ভোটারদের একটা বড় অংশ বিনয়-অনীত জুটির কাছাকাছি হচ্ছে তাই এসডিএফের অবস্থান বদলের ভাবনা বলে মনে করা হচ্ছে।
গত ১৩ অক্টোবর সিকিমে দ্বিস্তর পঞ্চায়েত ভোটের মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষে দেখা যায় গ্রাম পঞ্চায়েতের ১০৩৮টি আসনের মধ্যে ৫৩৬টি বিনা লড়াইয়ে জিতেছে এসডিএফ। জেলা পঞ্চায়েতের ১১১টি আসনের মধ্যে ২৭টি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতেছে তারা। সে দিনই দার্জিলিঙে নিহত হন পুলিশ অফিসার অমিতাভ মালিক। উদ্ধার হয় প্রচুর অত্যাধুনিক আগ্নেয়াস্ত্র, বিস্ফোরক। আর তা নিয়ে সিকিমেও জনমত গড়ে তুলতে আসরে নামেন বিনয়-অনীতরা। এসডিএফের কয়েকজন নেতা জানান, বাকি আসনে যাতে বিরোধীরা জঙ্গি যোগের অভিযোগ এনে যাতে ভোটে ভাগ বসাতে না পারে তাই গুরুঙ্গের সঙ্গে দূরত্ব বাড়ানোর কথা জানিয়ে প্রচারের নির্দেশ দেওয়া হয়। যদিও এসডিএফের প্রথম সারির নেতা কে টি গ্যালসেনের দাবি, ‘‘দার্জিলিঙের গণতান্ত্রিক আন্দোলনকে সমর্থন করলেও আমরা বরাবরই সশস্ত্র লড়াইয়ের বিরুদ্ধে।’’
কিন্তু এসডিএফ যে সাময়িক হলেও অবস্থান পাল্টেছে তা এক পাহাড় থেকে আরেক পাহাড়ে চাউর হতে সময় লাগেনি। বিনয়-অনীত শিবিরের একাধিক নেতা জানান, তাঁরা গোটা বিষয়টি নবান্নে জানিয়েছেন। বিনয় বলেছেন, ‘‘আলাদা রাজ্যের দাবি সমর্থন করাটা প্রশংসনীয়। কিন্তু জঙ্গি আন্দোলনে মদত দেওয়া সমর্থনযোগ্য নয়। এটা সিকিমের শাসক-বিরোধী উভয় শিবিরের নেতারাই আমাদের বলেছেন।’’ এই পরিস্থিতিতেই রাজ্য পুলিশের এক শীর্ষ কর্তা বলেন, ‘‘সিংলায় তাড়া খেয়ে সিকিমের দিকে ঢোকার পরে সে রাজ্যের কয়েকজন প্রভাবশালীর সঙ্গে গুরুঙ্গ বাহিনীর বার্তা চালাচালির কিছু তথ্য মিলেছে। তা সামনে রেখে পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ সিকিমের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে। প্রয়োজনে যৌথ অভিযান হতে পারে।’’