বৃহন্নলা ও রূপান্তরকামীদের ‘তৃতীয় লিঙ্গ’ হিসেবে মান্যতা দিতে এ রাজ্যে শিক্ষাক্ষেত্রে এগিয়ে এল সিধো-কানহো-বিরসা বিশ্ববিদ্যালয়। সম্প্রতি শিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞাপনে কর্তৃপক্ষ তাঁদের পুরুষ ও মহিলার সঙ্গে ‘তৃতীয় লিঙ্গ’ প্রার্থীদেরও আহ্বান জানান। বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে আবেদনপত্রতেও ‘পুরুষ, মহিলা, তৃতীয় লিঙ্গ’ কোনও একটিতে টিক দিতে বলা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের দাবি, তাঁরাই এ রাজ্যে শিক্ষাক্ষেত্রে এ বিষয়ে প্রথম। উপাচার্য শমিতা মান্না বলেন, “আবেদনপত্রে ‘তৃতীয় লিঙ্গ’ শব্দটি রাখায় সামাজিক উত্তরণের একটা দিশা দেখানো গিয়েছে।” বিশ্ববিদ্যালয়ের টেকনিক্যাল কমিটির বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত হয়।
সুপ্রিম কোর্টে যে রায় তৃতীয় লিঙ্গকে মান্যতা দেওয়ার নির্দেশ দেয় সরকারকে, সেই রায়ে বিচারপতি কে এস রাধাকৃষ্ণন এবং এ কে সিক্রির ডিভিশন বেঞ্চ অবশ্য ‘অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণির’ (ওবিসি) মধ্যে তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের রেখে, কর্ম, শিক্ষা, এমনকী স্বাস্থ্য পরিষেবাতেও তাঁদের সংরক্ষণ ব্যবস্থার সুবিধা দেওয়ার কথা বলেছিল। কারণ, ওই মানুষদের সামাজিক এবং অর্থনৈতিক ভাবে পিছিয়ে পড়া বলেই দেখেছেন তাঁরা। তবে কলেজ কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, এ বিষয়ে রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে কোনও নির্দেশিকা না আসায় সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।
এর আগে তৃতীয় লিঙ্গ স্বীকৃতি পেয়েছিল রাজ্যে ভোটার তালিকায়। মহিলা ও পুরুষ ছাড়াও ‘অন্যান্য’ বলে একটি শ্রেণি রেখেছিল নির্বাচন কমিশন। তবে প্যান কার্ডে বা অন্য নথিতে পুরুষ বা মহিলার বাইরে ‘অন্যান্য’ পরিচয় দেওয়ার ব্যবস্থা নেই। সম্ভবত এই প্রথম বৃহত্তর কর্মক্ষেত্রে নিয়োগের প্রশ্নে মান্যতা পেল তৃতীয় লিঙ্গ। তাতে খুশি রূপান্তরকামী ও বৃহন্নলাদের নিয়ে কর্মরত সংস্থাগুলি। এমন একটি সংস্থার পক্ষে অপর্ণা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “এই উদ্যোগ একটা মাইলফলক।” সাধুবাদ জানিয়েও পিঙ্কি প্রামাণিকের আইনজীবী পয়োষ্ণী মিত্র বলেন, ‘‘শুধু আবেদনপত্রে নয়, দেখতে হবে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিতরের পরিবেশ কতটা এদের গ্রহণ করছে।’’
কিন্তু কী ভাবছে অন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি? কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সুরঞ্জন দাস বলেন, “সাধুবাদ জানাই ওই বিশ্ববিদ্যালয়কে। তবে রাজ্য সরকার আমাদের এখনও নির্দেশিকা পাঠায়নি। নির্দেশিকা পাঠালেই নিয়োগের ক্ষেত্রে আবেদনপত্রে তৃতীয় লিঙ্গ রাখব।” যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অভিজিৎ চক্রবর্তীও এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনি দিকটি যাঁরা দেখেন,
তাঁদের সঙ্গে কথা বলে নতুন নিয়োগের সময় ভাবব।”