দলীয় প্রার্থীর সমর্থনে বড়বাজারের জনসভায় বিজেপি নেতা সিদ্ধার্থনাথ সিংহ। শনিবার। ছবি: শুভাশিস ভট্টাচার্য।
তৃণমূলের সঙ্গে দূরত্ব বাড়ার পাশাপাশি বিজেপি-র সঙ্গে মুকুল রায়ের ঘনিষ্ঠতা বৃদ্ধি নিয়ে জল্পনা রয়েছে রাজনৈতিক শিবিরে। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অরুণ জেটলি, রাজনাথ সিংহ, এমনকী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে মুকুলের সাক্ষাতের খবর প্রকাশ্যে আসায় ওই জল্পনা আরও জোরালো হয়েছে। বিজেপি-র কেন্দ্রীয় সম্পাদক তথা রাজ্যে দলের পর্যবেক্ষক সিদ্ধার্থনাথ সিংহ ওই জল্পনা ভিত্তিহীন বলে উড়িয়েছেন বারবার। শনিবার কলকাতা পুরভোটের প্রচারে এ বার তিনি অভিযোগ করলেন, আসলে মমতা-মুকুল কোনও দূরত্বই নেই। পুরোটাই স্রেফ নাটক!
তৃণমূলের আয়-ব্যয়ের হিসেব চেয়ে দলীয় দফতরে সিবিআই নোটিস পাঠিয়েছে। নির্বাচন কমিশনে তৃণমূলের দেওয়া তথ্য নিয়ে অডিট জালিয়াতির অভিযোগও প্রকাশ্যে এসেছে। এই প্রেক্ষিতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মুকুলের ঘাড়ে চাপিয়ে ভাবমূর্তি বাঁচানোর চেষ্টা করছেন। তাঁর যুক্তি, তিনি বা তাঁর দল নির্দোষ। সব দায় মুকুলের। কারণ তিনিই দলের আয়-ব্যয়ের হিসাব রাখতেন এবং কমিশনে দাখিল করতেন। সেই মুকুল এখন দলে কোনও দায়িত্বে নেই। তাঁর কৃতকর্মের দায় দলের পক্ষে নেওয়া সম্ভব নয়। যদিও একই সঙ্গে মমতার দাবি, তিনি নিজে দলের যাবতীয় হিসাব পরীক্ষা করে দেখেছেন, সব ঠিকই আছে। তৃণমূল তথ্য দেওয়ার পরেও কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার কিছু জিজ্ঞাস্য থাকলে, তা মুকুলের কাছে জানতে চাওয়া উচিত— এই মর্মেও বার্তা দিয়েছেন তৃণমূল নেতৃত্ব।
মমতা-মুকুলের এই ঠান্ডা লড়াই নিয়ে কলকাতা পুরসভার ৪২ নম্বর ওয়ার্ডের বিজেপি প্রার্থী সুনীতা ঝাওয়ারের সমর্থনে বড়বাজারের প্রচারসভায় সিদ্ধার্থনাথ বলেন, ‘‘উনি (মমতা) বলছেন, ওঁর দোষ নেই। সব দায় মুকুলের। তাঁকে তিনি দল থেকে সরিয়ে দিয়েছেন। ভাব দেখাচ্ছেন যেন, দু’জনের মধ্যে দূরত্ব তৈরি হয়েছে। সব মিথ্যে। সব নাটক!’’ সিদ্ধার্থনাথের ব্যাখ্যা, মুকুলের ছেলে শুভ্রাংশু রায় তৃণমূল বিধায়ক। তিনি দলের হয়ে ব্যারাকপুরে ‘দাদাগিরি’ করেছেন। তাঁর হাতযশেই তিনটি পুরসভায় কংগ্রেস, বিজেপি, সিপিএম— সব বিরোধী দলই প্রার্থী তুলে নিতে বাধ্য হয়েছে। তিনটি পুরসভা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় তৃণমূলকে জিতিয়েছেন মুকুল-পুত্র। অর্থাৎ, মুকুল এবং মমতা আসলে সমঝোতা করেই চলছেন। দূরত্বের ভানটা সংবাদমাধ্যম এবং জনতাকে বিভ্রান্ত করার জন্য। এই প্রেক্ষিতে সিদ্ধার্থনাথ এ দিন ফের বলেন, ‘‘যাঁর গায়ে দাগ আছে, যিনি গরিবের পয়সা চুষে খেয়েছেন, বিজেপি-তে তাঁর কোনও জায়গা নেই।’’ এ বিষয়ে মুকুলের বক্তব্য অবশ্য জানা যায়নি।