বিশ্বজিৎ মণ্ডল। নিজস্ব চিত্র
করোনা-আতঙ্কে পরিযায়ী শ্রমিকদের এলাকায় ঢুকতে বাধা দেওয়ার অভিযোগ উঠছে রাজ্যের নানা প্রান্তে। এ বার বাধা পেয়ে ‘বিপর্যস্তের’ মৃত্যুর অভিযোগও উঠল। ঘটনায় জুড়েছে রাজনৈতিক চাপান-উতোরের অভিযোগও।
লকডাউনে রাজস্থানের জয়পুরে আটকে ছিলেন কাটোয়া মণ্ডলহাটের বছর তেইশের বিশ্বজিৎ মণ্ডল। রবিবার দুপুরে গ্রামে ফিরেও, তিনি এলাকাবাসীর একাংশের বাধায় বাড়িতে ঢুকতে পারেননি বলে অভিযোগ। ওই শ্রমিকের বাবা তপন মণ্ডলের দাবি, অসুস্থ ছেলেকে নিয়ে নানা জায়গায় পাঁচ ঘণ্টা ঘোরার পরে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। তবে রাতেই মারা যান তিনি। মৃত্যুর পরে স্বাস্থ্য দফতরের তরফে জানানো হয়, বিশ্বজিৎ ‘কোভিড-নেগেটিভ’ ছিলেন।
জয়পুরে হোটেলে কাজ করতেন বিশ্বজিৎ। সেখানে জন্ডিস হয় তাঁর। চিকিৎসা হয়। রবিবার দুপুরে মণ্ডলহাটে পৌঁছন ওই যুবক। তপনবাবু বলেন, ‘‘শ্বাসকষ্ট হচ্ছিল। পা ফোলা, ক্লান্তিও ছিল। কাটোয়া হাসপাতালে রাজস্থানের প্রেসক্রিপশন দেখে, বাড়ি ফিরতে বলা হয়।’’ অভিযোগ, হাসপাতাল থেকে ফেরার পরে এলাকাবাসীর একাংশ গ্রামে ঢুকতে বাধা দেন তাঁদের। গ্রামে সরকারি নিভৃতবাস কেন্দ্রেও যেতে দেওয়া হয়নি।
আরও পড়ুন: বাসে দূরত্ববিধি শিকেয়: ‘মানতে হলে অফিসেই যেতে পারব না’
স্থানীয় খাজুরডিহি পঞ্চায়েতের তৃণমূলের সদস্য বিকাশ চৌধুরীর দ্বারস্থ হয় পরিবারটি। বিকাশবাবুর দাবি, ‘‘বিজেপির লোকেরা জোর করে ওই যুবককে কোয়রান্টিন কেন্দ্রে ঢোকাতে চাইছিল। গ্রামবাসীর দাবি ছিল, হাসপাতালে পাঠানোর। এতেই কয়েক ঘণ্টা নষ্ট হয়।’’ বিজেপির জেলা সম্পাদিকা তথা স্থানীয় নেত্রী সীমা ভট্টাচার্যের পাল্টা দাবি, ‘‘তৃণমূল-আশ্রিত কিছু লোকই ওই যুবককে গ্রামে ঢুকতে বাধা দেয়।’’
তপনবাবুর কথায়, ‘‘অসুস্থতা বেড়ে যাওয়ায় ছেলে পথের ধারে বসে পড়ে। কাটোয়া হাসপাতাল থেকে ওকে বর্ধমানের গাংপুরের কোভিড হাসপাতালে পাঠানো হয়। রাত ২টো নাগাদ মারা গেল।’’ তাঁর ক্ষোভ, ‘‘হাসপাতাল আগেই ভর্তি নিলে ছেলেকে হারাতে হত না!’’
আরও পড়ুন: পরিযায়ী শ্রমিকদের ভিড়ে বাড়ছে করোনা সংক্রমণ
প্রশাসনের দাবি, মহারাষ্ট্র, গুজরাত, দিল্লি, মধ্যপ্রদেশ ও তামিলনাড়ু থেকে আসা শ্রমিকদের ‘কোয়রান্টিন’-এ রাখা হচ্ছে। বাকিদের পাঠানো হচ্ছে গৃহ নিভৃতবাসে। কাটোয়া হাসপাতালের দাবি, পরীক্ষায় বোঝা যায়, ওই যুবকের কিডনির সমস্যা রয়েছে। তাই বাড়ি পাঠানো হয়। পরের বার দুর্বলতা দেখে ভর্তি নেওয়া হয় এবং ‘রেফার’ করা হয়।
মহকুমাশাসক (কাটোয়া) প্রশান্তরাজ শুক্ল বলেন, ‘‘করোনা নিয়ে আতঙ্ক ছড়ানো উচিত নয়। মানুষকে সচেতন করবে প্রশাসন।’’ তবে মৃতের মা মনি মণ্ডলের দাবি, ‘‘করোনা নিয়ে আতঙ্ক রয়েছে গ্রামে। তার শিকার হল আমার ছেলে!’’