শ্রীনু-জমানার ইতি রেলশহরে

মাস কয়েক আগেও খড়্গপুরের গোলবাজারে তার গাড়ি লক্ষ্য করে কে বা কারা গুলি ছুঁড়েছিল বলে অভিযোগ ওঠে। সে বার অবশ্য গাড়ি নিয়ে পালিয়ে বেঁচে যায় খড়্গপুরে রেলমাফিয়া হিসেবে পরিচিত এ শ্রীনিবাস নায়ডু ওরফে শ্রীনু। এ বার নিজের চেনা গণ্ডিতেই গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হল শ্রীনু (২৭)।

Advertisement

দেবমাল্য বাগচী

খড়্গপুর শেষ আপডেট: ১২ জানুয়ারি ২০১৭ ০০:০০
Share:

খড়গপুরে শাসক দলের কর্মসূচিতে হাজির শ্রীনু। ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডল।

মাস কয়েক আগেও খড়্গপুরের গোলবাজারে তার গাড়ি লক্ষ্য করে কে বা কারা গুলি ছুঁড়েছিল বলে অভিযোগ ওঠে। সে বার অবশ্য গাড়ি নিয়ে পালিয়ে বেঁচে যায় খড়্গপুরে রেলমাফিয়া হিসেবে পরিচিত এ শ্রীনিবাস নায়ডু ওরফে শ্রীনু। এ বার নিজের চেনা গণ্ডিতেই গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হল শ্রীনু (২৭)। গুলিবিদ্ধ হয়ে তার অনুগামী ধর্মা রাও-ও (২৫) নিহত হয়েছে। জখম হয় আরও তিন জন। ভরদুপুরে খড়্গপুরের ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের নিউ সেটলমেন্টে তৃণমূলের ওয়ার্ড কমিটির কার্যালয়ে দুষ্কৃতীরা গুলি চালায়। যদিও কারা ঘটনার সঙ্গে যুক্ত, স্পষ্ট নয় পুলিশের কাছে।

Advertisement

নব্বইয়ের দশকে রেলের ছাঁট লোহার কারবারে খড়্গপুরে বাসব রামবাবুই ছিল শেষ কথা। সেই সময় রেলশহরে একের পর এক খুনের ঘটনায় নাম জড়াতে থাকে রামবাবুর। ১৯৯৭ সালে সিটু নেতা উদয় মাইতি ও ১৯৯৯ সালে সিপিআই সাংসদ নারায়ণ চৌবের ছেলে মানস চৌবে খুনে অভিযোগের আঙুল ওঠে রামবাবুর দিকে। ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর গৌতম চৌবে খুনেও নাম জড়ায় রামবাবুর। ২০০১ সালের ৩ নভেম্বর হায়দরাবাদ থেকে রামবাবুকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ২০০৩ সালে রামবাবুকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয় আদালত। এরপরে ২০১০ সালে জামিনে মুক্ত হয় রামবাবু।

রামবাবু জেলে থাকাকালীন খড়্গপুরের নিউ সেটেলমেন্ট এলাকার বাসিন্দা শ্রীনুর উত্থান। রামবাবু জামিন পাওয়ার পরেও শ্রীনু জমি ছাড়েনি। রামবাবুর সঙ্গে তার সংঘাতও বাধে। ২০১০ সালে আদালতে যাওয়ার পথে রামবাবুর কনভয়ে গুলিচালনার অভিযোগ ওঠে। অভিযোগের তির ছিল শ্রীনুর দিকেই। একাধিকবার পুলিশ তাকে গ্রেফতারও করে। যদিও কিছুদিনের মধ্যেই ছাড়া পেয়ে যায় সে।

Advertisement

২০১৪ সালের লোকসভা ভোটের আগে বিজেপিতে যোগ দেয় শ্রীনু। তার স্ত্রী পূজা নায়ডুও গেরুয়া শিবিরে যোগ দেন। ভোটের সময়ে পুরনো একটি মামলায় পুলিশ গ্রেফতার করে শ্রীনুকে। ২০১৫ সালের খড়্গপুর পুরসভা নির্বাচনে বিজেপির টিকিটে শহরের ১৮ নম্বর ওয়ার্ড থেকে জয়ী হন পূজা। যদিও ভোটের পর পুরবোর্ড গঠনের সময় পূজা বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দেন। এরপরেই জামিনে মুক্তি পায় শ্রীনু।

২০১৬ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি তৃণমূলের ‘লেবার সেল’-এর সভায় তৃণমূলে যোগ দেয় শ্রীনুও। তা নিয়ে বিতর্কও কম হয়নি। খড়্গপুরে নিউ সেটলমেন্টের ওই কার্যালয়ে প্রায়ই সময় কাটাত শ্রীনু। সেখান থেকেই কার্যত রাজ্যপাট চালাত সে। এ দিন সেই কার্যালয়েই গুলিবিদ্ধ হয় শ্রীনু।

তৃণমূলের জেলা নেতা জহরলাল পাল বলেন, “কী ভাবে এই ঘটনা ঘটল কিছু বুঝতে পারছি না। দলীয় স্তরে খোঁজ নিয়ে দেখছি।” দলের খড়্গপুর শহর সভাপতি দেবাশিস চৌধুরী বলেন, “শহরে এই মাফিয়ারাজের নিরসন হওয়া উচিত। দিনদুপুরে কার্যালয়ের বাইরে দুষ্কৃতীদের গুলি চালিয়ে চম্পট দেওয়ার ঘটনা ভয়ঙ্কর।”

ঘটনায় শাসকদলের বিরুদ্ধে সমালোচনায় সরব বিরোধীরা। সিপিএমের জোনাল সম্পাদক অনিতবরণ মণ্ডল বলেন, “তৃণমূল দলে মাফিয়া, সিন্ডিকেটরাজ, তোলাবাজি বাড়ছে। এত দিন অন্য এলাকায় এ সব শোনা যেত। এ বার খড়্গপুরেও যে ঘটনা ঘটল তা বিপজ্জনক।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement