শিশির ও দিব্যেন্দু অধিকারী। —ফাইল চিত্র।
দলের নির্দেশকে উপেক্ষা করে উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচনে ভোট দিয়েছেন শিশির অধিকারী এবং দিব্যেন্দু অধিকারী। কাঁথি ও তমলুকের তৃণমূল সাংসদ শিশির-দিব্যেন্দু যদিও ভোট দেওয়ার কথা স্বীকার করেননি। এক জন প্রসঙ্গ এড়িয়ে গিয়েছেন। অন্য জন, সটান অস্বীকার করেছেন।
শনিবারের উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচনে তৃণমূল অংশ নেবে না বলে আগেই ঘোষণা করেছে। দলের পক্ষে জানানো হয় বিজেপি প্রার্থী জগদীপ ধনখড় বা বিরোধীদের সম্মিলিত প্রার্থী মার্গারেট আলভার কাউকেই সমর্থন দেবে না দল। উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচনে ভোটাধিকার থাকে শুধু লোকসভা বা রাজ্যসভার সাংসদদের। সেই হিসাবে সব সাংসদকেই ভোটদান থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছিল। দলের সঙ্গে ‘দূরত্ব’ তৈরি হওয়া শিশির-দিব্যেন্দুকে সেই নির্দেশ চিঠি পাঠিয়ে জানিয়েছিলেন লোকসভায় তৃণমূলের দলনেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়। এর পরেও দলের নির্দেশ অমান্য করে শিশির ও দিব্যেন্দু শনিবার রাষ্ট্রপতি ভোটে অংশ নিয়েছেন। যদিও পিতা-পুত্র দু’জনেই এই প্রসঙ্গে কিছু স্বীকার করতে চাননি। এড়িয়ে গিয়েছেন শিশির আর অস্বীকার করেছেন দিব্যেন্দু।
অধিকারী পরিবারের ঘনিষ্ঠ সূত্রের মতে, রাষ্ট্রপতি এবং উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচনে দলের কোনও হুইপ থাকে না। এই দু’টি পদ দেশের সর্বোচ্চ পদ। সেই ভোটে জনপ্রতিনিধিরা কেন ভোট দিতে পারবেন না? ওই সূত্রের মতে, দলনেত্রী দিল্লিতে, শিশির, দিব্যেন্দুও দিল্লিতে। শুক্রবার সাংসদদের দলীয় নৈশভোজে শিশির, দিব্যেন্দুকে ডাকা হয়নি। ডাকা হলে তাঁরা নিশ্চয়ই জেতেন। ওই সূত্রের দাবি, এক দিকে দল শিশির-দিব্যেন্দুর সঙ্গে দূরত্ব তৈরি করতে চাইছে, অন্য দিকে দল সিদ্ধান্ত নিচ্ছে বলে, ভোটদান থেকে তাঁদের বিরত থাকতে হবে! এ দুটো একসঙ্গে যায়! শিশির যদিও আনন্দবাজার অনলাইনকে বলেছেন, ‘‘আমি এখন বারাণসীতে রয়েছি। ভোট দিয়েছি কি দিইনি তাতে কার কী! উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচনে যে দু’জন প্রার্থী তাঁরা উভয়েই আমার ঘনিষ্ঠ। তবে ভোট দিলাম কি দিলাম না তাতে কারও কিছু যায় আসে না।’’ আর দিব্যেন্দুর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘‘আমি ভোটগ্রহণ কেন্দ্রের ধারেকাছেও যাইনি। ভোট দেওয়ার প্রশ্নই নেই। এখনও এক ঘণ্টা সময় আছে। ভোট দেব না।’’ সূত্রের খবর, গত বৃহস্পতিবার বিকাল থেকেই দিল্লিতেই রয়েছেন তৃণমূলের দুই সাংসদ অধিকারী পিতা-পুত্র।
এর আগে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনেও শিশির ও দিব্যেন্দুকে নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছিল। তৃণমূলের নির্দেশ ছিল সব সাংসদ কলকাতায় পশ্চিমবঙ্গ বিধানভায় এসে ভোট দেবেন। কিন্তু শিশির ও দিব্যেন্দু ভোট দিতে যান দিল্লিতে। সংসদ ভবনে ভোটদানের পরে তাঁরা জানান, কলকাতায় ভোট দিতে হলে আগে থাকতে ব্যালট পাঠাতে বলতে হয় নির্বাচন কমিশনকে। সেটা বলতে ভুলে যাওয়ার কারণেই দিল্লিতে ভোট দিতে হল। সেই সময়ে শিশির অবশ্য দলের সঙ্গে তাঁর খারাপ সম্পর্ক নিয়েও সরব হয়েছিলেন।
গত বিধানসভা নির্বাচনের আগে থেকেই শিশির ও দিব্যেন্দুর সঙ্গে তৃণমূলের দূরত্ব তৈরি হয়। শুভেন্দু অধিকারী বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পরে দিব্যেন্দুকে কখনওই গেরুয়া শিবিরে দেখা যায়নি। কিন্তু অমিত শাহের একটি সভায় মঞ্চে ছিলেন শিশির। এর পরে তৃণমূলের পক্ষে শিশিরের বিরুদ্ধে দলত্যাগ বিরোধী আইন কার্যকরের আবেদনও জানানো হয় লোকসভার স্পিকারের কাছে। সেই কথা স্মরণ করিয়ে তৃণমূলের পক্ষে সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘দলের পক্ষে ওঁদের চিঠি পাঠানো হয়েছিল ভোটদানে বিরত থাকার জন্য। এটাই দলের সিদ্ধান্ত। কোনও সাংসদের তা অমান্য করা উচিত নয়। শিশির অধিকারীর বিরুদ্ধে তাঁকে আগেই দল থেকে বহিষ্কার করার কথা লোকসভায় জানিয়েছি।’’
এই প্রসঙ্গে বিজেপির সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেন, ‘‘দেশের সর্বোচ্চ সাংবিধানিক পদে সকলেরই ভোট দেওয়া উচিত। আমি চাই বাংলার বাকি সাংসদরাও ভোটে অংশ নিন। আর কেউ যদি দলের নির্দেশ না মানেন তার জন্য কারও বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া যায় না। রাষ্ট্রপতি ও উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচনে ভোট দেওয়ার জন্য কোনও দলই হুইপ জারি করতে পারে না।’’