অঙ্কন: বাংলাদেশ ভবনের সামনে রাস্তায় আলপনা দিচ্ছেন বাংলাদেশের পড়ুয়ারা। নিজস্ব চিত্র
ভাষা দিবসকে স্মরণে আর মননে রাখতে এবার প্রস্তুত শান্তিনিকেতন। আজ, বৃহস্পতিবার আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের সকালে বাংলাদেশ ভবনের শহিদ বেদিতে শ্রদ্ধার্ঘ্য জানাতে বিশ্বভারতীতে পাঠরত বাংলাদেশের পড়ুয়ারা আহ্বান করেছেন বাকি পড়ুয়াদেরও।
ইন্দিরা গাঁধী কেন্দ্রের বিদেশি ছাত্র সহায়তা প্রকোষ্ঠ সূত্রে জানা গিয়েছে, বিশ্বভারতীতে পাঠরত বাংলাদেশি পড়ুয়ার সংখ্যা এখন ১৯৭ জন। সিংহভাগ ছাত্রছাত্রীই ‘অমর একুশে’ পালন করেন বিশ্বভারতীতে। মাতৃভাষা এক হলেও ছোটবেলার বাংলাদেশে শহিদ দিবসের সঙ্গে বিশ্বভারতীতে পালিত শহিদ দিবসের ফারাক, আবেগ আর স্বতঃস্ফূর্ত যোগদানে বলেই দাবি এখানকার বাংলাদেশি ছাত্র-ছাত্রীদের। নিজের দেশ ছেড়ে প্রতিবেশী দেশে এসে শোকের এই দিনটি পালন করতে গিয়ে তাঁদের মন চায় এ দেশের বাংলায় কথা বলা মানুষজনও যেন এই দিনটির আবেগ ও অনুভূতিতে সাড়া দেন। কিন্তু বাস্তবটা প্রতিবারই অন্যরকম হয়। বাংলাদেশ থেকে বিশ্বভারতীতে পড়তে আসা মৈত্রী মুখোপাধ্যায়, প্রিয়ন্তী চক্রবর্তী, দীপক মাহাতোরা বলেন, ‘‘ঠাকুরের কাছে অঞ্জলি দেওয়ার জন্য যেমন লাইন পড়ে, অধীর আগ্রহে সকলে দাঁড়িয়ে থাকেন, ঠিক তেমনই ঢাকার মেডিক্যাল কলেজের পাশে থাকা শহিদ মিনারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানোর জন্য আগের রাত থেকে সকলে লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকেন।’’ রাফিয়া সুলতানা, ইমু ডায়না মার্মা, আরিফ আজাদদের কথায়, ‘‘রাত ১২টা বাজলে ঘড়ির কাঁটায় ২১ ফেব্রুয়ারি শুরু হতেই গোটা বাংলাদেশ জুড়ে ভাষা দিবসের গান গাওয়া হয়। মাইকে বাজতে থাকে গান। বাংলা সংস্কৃতির পীঠস্থান শান্তিনিকেতনে এইগুলো পাই না এখনও। কষ্ট হয়।’’
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গিয়েছে, সকাল সাড়ে ৮টা নাগাদ ইন্টারন্যাশনাল গেস্ট হাউসের সামনে থেকে একটি পদযাত্রা শুরু হয়ে বাংলাদেশ ভবন পর্যন্ত যাবে। সকাল ৯টা নাগাদ বাংলাদেশ ভবনে তৈরি হওয়া শহিদ বেদিতে শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণ করা হবে। এক সময় বিশ্বভারতীর ছাত্রাবাসের ছোট পরিসরে এই দিনটি পালিত হত। এ বছর বাংলাদেশ ভবনে স্মরণ অনুষ্ঠানটি হওয়ায় খুশি পড়ুয়ারা। তাঁদের আর্জি, সামনের বছরে এই দিনটি আসার আগেই যেন স্থায়ী শহিদ বেদি হয়। একইসঙ্গে বিশ্বভারতীর সব পড়ুয়ারাই শহিদ স্মরণে যোগ দেন।
বাংলাদেশি পড়ুয়া আব্দুল্লাহ আল মামুন সঙ্গীতভবনের গবেষক ছাত্র। তিনি বলেন, ‘‘বাংলাদেশের প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়, মহাবিদ্যালয়, স্কুলে শহিদবেদি আছে। কোথাও কোথাও আবার স্মৃতিসৌধও আছে। এক সময় ২১ ফেব্রুয়ারি ছিল শুধুই বাংলাদেশের শোকদিবস। কিন্তু ১৯৯৯ সাল থেকে দিনটি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের স্বীকৃতি পেয়েছে।’’
স্মৃতিচারণ করে অর্ণব সান্যাল বলেন, ‘‘শহিদ মিনারে ফুল দিয়ে এসে সমবয়সীরা পাটকাঠি ভেঙে বাড়ির বাগানে শহিদবেদি বানাতাম। বাগানের ফুল তুলে তোড়া বানিয়ে সেখানে দিতাম। সন্ধ্যাতে ভাষা দিবসের গান করতাম বাড়ির সবাই। একটা অন্য অনুভূতি ছিল তখন।’’