জল্পনা বাড়িয়ে দিদির বৈঠকে শম্পা-তুষার

তৃণমূল সরকারের দু’দফার জমানায় মুখ্যমন্ত্রীর প্রশাসনিক বৈঠকে বিরোধী দলের জনপ্রতিনিধিদের এতদিন দেখা যায়নি। তা নিয়ে বিরোধীদের কম ক্ষোভ নেই। কিন্তু মঙ্গলবার ছবিটা বদলে গেল।

Advertisement

রাজদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়

বাঁকুড়া শেষ আপডেট: ২১ ডিসেম্বর ২০১৬ ০০:০৯
Share:

প্রশাসনিক বৈঠকে শম্পা দরিপা। নিজস্ব চিত্র।

তৃণমূল সরকারের দু’দফার জমানায় মুখ্যমন্ত্রীর প্রশাসনিক বৈঠকে বিরোধী দলের জনপ্রতিনিধিদের এতদিন দেখা যায়নি। তা নিয়ে বিরোধীদের কম ক্ষোভ নেই। কিন্তু মঙ্গলবার ছবিটা বদলে গেল। মুকুটমণিপুরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বৈঠকে ডাক পেলেন কংগ্রেসের টিকিটে জিতে আসা দুই বিধায়ক— তুষারকান্তি ভট্টাচার্য ও শম্পা দরিপা। তুষারবাবু তৃণমূলের ২১ জুলাইয়ের সভায় গিয়েছিলেন। তৃণমূল নেতাদের সঙ্গে তিনি ঘোরাফেরাও করেন। কিন্তু একদা তৃণমূলের জেলা নেত্রী থাকা শম্পাকে ভোটের পরে এই প্রথম তৃণমূল নেতাদের সঙ্গে প্রকাশ্যে দেখা গেল। আর তা নিয়েই জল্পনা দেখা গিয়েছে। তবে কি দু’জনেই তৃণমূলের দিকে পা বাড়ালেন? না কি বিরোধী দলের বিধায়ক হিসেবে নিজেদের দাবি জানিয়ে গেলেন তাঁরা?

Advertisement

এ দিন দুপুরে মুকুটমণিপুরের বারোঘুটুতে মুখ্যমন্ত্রীর প্রশাসনিক বৈঠকের ঘণ্টাখানেক আগেই শম্পাদেবী সেখানে হাজির হন। তখন থেকেই বিষয়টি নিয়ে শোরগোল শুরু হয়ে যায়। প্রশাসনিক বৈঠক শেষ হওয়ার পরে দলের নেতাদের নিয়ে বৈঠক করেন মুখ্যমন্ত্রী। উপস্থিত ছিলেন তৃণমূল সাংসদ মুকুল রায়ও। শম্পাদেবী সেই বৈঠকেও উপস্থিত ছিলেন। তিনি কী ফের তৃণমূলে যোগ দিচ্ছেন? বৈঠক শেষে শম্পাদেবীর কাছে এই প্রশ্ন করা হলে রীতিমতো বিব্রত দেখায় তাঁকে। কোনও জবাব দিতে চাননি।

শম্পাদেবী মুকুলবাবুর অনুগামী হিসেবেই তৃণমূলে পরিচিত ছিলেন। দলেরই একটি সূত্রে জানা যাচ্ছে, সোমবার রাতে মুকুলবাবুই তাঁকে ফোন করে এ দিনের প্রশাসনিক বৈঠক ও দলীয় সভায় আসতে বলেন। তবে বিষয়টি আপাতত এড়িয়ে যাচ্ছে জেলা তৃণমূলও। জেলা তৃণমূলের সহ-সভাপতি তথা বাঁকুড়া জেলা সভাধিপতি অরূপ চক্রবর্তীর সংক্ষিপ্ত প্রতিক্রিয়া, “উনি বিধায়ক হিসেবেই প্রশাসনিক বৈঠকে এসেছিলেন।”

Advertisement

ঘটনা হল জেলা মহিলা তৃণমূলের প্রাক্তন সভানেত্রী শম্পাদেবীকে গত বিধানসভা নির্বাচনের আগে দলবিরোধী কাজের জন্য বহিষ্কার করে দল। এরপরেই শম্পাদেবীকে বাঁকুড়া কেন্দ্রের প্রার্থী করে কংগ্রেস। ভোটে তৃণমূল প্রার্থী মিনতি মিশ্রকে পরাজিত করে জয়ী হন শম্পাদেবী। শম্পাদেবী একাধারে বাঁকুড়া পুরসভায় তৃণমূলের কাউন্সিলর থাকায়, তাঁকে ওই পদ থেকে ইস্তফা দেওয়ার দাবিতে জেলা প্রশাসনের কাছে আবেদন জানান বাঁকুড়ার পুরপ্রধান মহাপ্রসাদ সেনগুপ্ত।

ভোটে এই জেলার ১২টি কেন্দ্রের মধ্যে পাঁচটিতে জিতে আশপাশের অন্য জেলার তুলনায় ভালই ফল করে বাম-কংগ্রেস জোট। কিন্তু সবাইকে চমকে বিষ্ণুপুরের বিধায়ক তুষারবাবু কলকাতায় ২১ জুলাইয়ের তৃণমূলের মঞ্চে উঠে পড়েন। তারপর থেকেই গুঞ্জন ওঠে তৃণমূলের ‘ঘরের মেয়ে’ শম্পাদেবীও তৃণমূলে যাচ্ছেন। এ দিনের ঘটনা সেই গুঞ্জনই আরও উস্কে দিয়েছে।

তবে ভাল চোখে নিচ্ছে না কংগ্রেস। জেলা কংগ্রেসের সভাপতি নীলমাধব গুপ্ত বিধানসভায় পরিষদীয় দলনেতা আবদুল মান্নানকে এ দিনের ঘটনাটি জানান। আব্দুল মান্নান বলেন, ‘‘তৃণমূলের মতে, তুষার এখনও কংগ্রেসের লোক। তাঁর ব্যাপারে কী হবে স্পিকার তা জানাবেন বৃহস্পতিবার। আর এ দিন ওঁরা নিজেদের মুখ বাঁচাতে শম্পাকে বৈঠকে ডেকেছিল।’’ তাঁর কটাক্ষ, ‘‘আমরা বারবার দাবি করছি প্রশাসনিক বৈঠকে বিরোধীদের ডাকতে হবে। আজ পর্যন্ত তা ডাকেনি। এ দিন দুই কংগ্রেস বিধায়ককে ডেকে ওঁরা প্রমাণ করতে চাইছে তাঁরা গণতান্ত্রিক।’’

এ দিন দলীয় কর্মীদের নিয়ে বৈঠকে পঞ্চায়েত নির্বাচনকে সামনে রেখে সবাইকে একজোট হয়ে কাজ করার নির্দেশ দেন তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আগামী একবছর যাতে তৃণমূলের কোনও পঞ্চায়েতে অনাস্থা না আসে সে ব্যাপারেও নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। জেলায় ছ’জনের একটি কোর কমিটি গড়া হয়েছে। সেই কমিটিতে রয়েছেন মন্ত্রী শ্যামল সাঁতরা, তৃণমূলের জেলা সভাপতি অরূপ খাঁ, জেলা সভাধিপতি অরূপ চক্রবর্তী, বিষ্ণুপুরের পুরপ্রধান শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়, তালড্যাংরার বিধায়ক সমীর চক্রবর্তী ও রানিবাঁধের বিধায়ক জ্যোৎস্না মান্ডি।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement