মেডিক্যাল পরীক্ষার জন্য যাওয়ার পথে শাহজাহান শেখ। — নিজস্ব চিত্র।
তাঁকে ফাঁসানো হয়েছে, তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ সব মিথ্যা— আগেও তা বলেছিলেন সন্দেশখালির শাহজাহান শেখ। শুক্রবার মেডিক্যাল পরীক্ষার জন্য যাওয়ার পথে আবার একই কথা বললেন। জানালেন, ‘বিজেপির দালালেরা’ তাঁর বিরুদ্ধে মিথ্যা কথা ছড়াচ্ছেন। তবে কারা ‘দালাল’, কেন তাঁর বিরুদ্ধে ‘মিথ্যা’ প্রচার করা হচ্ছে, সে সব খোলসা করেননি।
সন্দেশখালিকাণ্ডে ধৃত শাহজাহান বর্তমানে ইডি হেফাজতে রয়েছেন। তাঁকে রাখা হয়েছে সল্টলেকের সিজিও কমপ্লেক্সে। সেখান থেকেই শুক্রবার সকালে মেডিক্যাল পরীক্ষার জন্য শাহজাহানকে জোকা ইএসআই হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সিজিও থেকে বেরোনোর মুখে সাংবাদিকদের প্রশ্নের মুখোমুখি হন শাহজাহান। তাঁকে তাঁর কন্যার নামের সংস্থা প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হয়। তার জবাবেই অভিযোগ ‘মিথ্যা’ বলে উড়িয়ে দেন শাহজাহান।
শাহজাহানের কন্যা সাবিনার নামে তাঁর একটি মাছ ব্যবসার সংস্থা চলে, যার নাম সাবিনা এন্টারপ্রাইজ়। ওই সংস্থার অ্যাকাউন্টে ১৩৭ কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে বলে অভিযোগ। কালো টাকা সাদা করার মাধ্যম হিসাবে এই সংস্থাটিকে ব্যবহার করতেন তিনি। শুক্রবার সে সব অভিযোগই উড়িয়ে দিয়েছেন সন্দেশখালির সাসপেন্ড হওয়া তৃণমূল নেতা। প্রশ্ন শুনে তিনি বলেন, ‘‘সব মিথ্যা কথা। কেন এগুলো বলছেন! সব দালাল। বিজেপির দালাল।’’
হাসপাতাল থেকে ফেরার পথে আবার সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়েছিলেন শাহজাহান। তাঁকে মাদক পাচার নিয়ে প্রশ্ন করা হয়। তখনও তিনি বলেন, তিনি ষড়যন্ত্রের শিকার। কারা ষড়যন্ত্র করছে? উত্তরে তিনি বলেন, ‘‘ভোটের সময়ে কারা এজেন্সি ব্যবহার করে, জানেন না? এ সব ষড়যন্ত্র।’’
গ্রেফতার হওয়ার পর থেকে বেশ কিছু দিন চুপ করেই ছিলেন শাহজাহান। কিছু দিন আগে এক বার সাংবাদিকদের সামনে বলেছিলেন, ‘‘আল্লা আছেন, বিচার করবেন!’’ এর পর বৃহস্পতিবারই মেডিক্যাল পরীক্ষার জন্য নিয়ে যাওয়ার সময়ে শাহজাহান চেঁচিয়ে বলেন, ‘‘আমাকে ফাঁসানো হয়েছে। সব মিথ্যা। আমি রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের শিকার।’’ শুক্রবার একই অভিযোগ আবার তুললেন তিনি। গ্রেফতারির আগে বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন বক্তৃতায় ইডি, সিবিআইয়ের মতো কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলিকে একাধিক বার ‘বিজেপির দালাল’ বলতে শোনা গিয়েছিল শাহজাহানকে। শুক্রবার ওই শব্দবন্ধে কাকে ইঙ্গিত করলেন, তা স্পষ্ট নয়।
রেশন দুর্নীতি মামলায় প্রথম শাহজাহানের নাম জড়িয়েছিল। তাঁর বাড়িতে তল্লাশি চালাতে গিয়েছিল ইডি। কিন্তু কেন্দ্রীয় আধিকারিকদের মার খেয়ে ফিরতে হয়েছিল শাহজাহানের ডেরা থেকে। তার পর থেকে তিনি নিজেও উধাও হয়ে গিয়েছিলেন। প্রায় দু’মাস পর শাহজাহানকে গ্রেফতার করে রাজ্য পুলিশ। তার পর আদালতের নির্দেশে তাঁকে তুলে দেওয়া হয় সিবিআইয়ের হাতে। সিবিআই হেফাজতে থাকাকালীন ইডিও শাহজাহানকে গ্রেফতার করে নিজেদের হেফাজতে নিয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে সন্দেশখালিতে সাধারণ গ্রামবাসীদের উপর অত্যাচার, জমি জবরদখল, মাছের ব্যবসার আড়ালে দুর্নীতির মতো একাধিক গুরুতর অভিযোগ রয়েছে। গ্রেফতারির পর শাহজাহানকে ছ’বছরের জন্য দল থেকে সাসপেন্ড করেছে তৃণমূল।
বৃহস্পতিবার জানা যায়, শাহজাহানের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট ‘ফ্রিজ়’ করেছে ইডি। একটি ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্ট এবং মাছ ব্যবসা সংক্রান্ত সংস্থা ‘মেসার্স শেখ সাবিনা ফিশ সাপ্লাই ওনলি’-র একটি অ্যাকাউন্টে যাবতীয় আর্থিক লেনদেন বন্ধ করতে চেয়ে সংশ্লিষ্ট ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়েছিল ইডি। সেই মতোই ওই অ্যাকাউন্ট বন্ধ করা হয়েছে। আরও বেশ কয়েকটি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের লেনদেন সংক্রান্ত তথ্যও চাওয়া হয়েছে বলে ইডি সূত্রে খবর।