—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।
কোনও স্কুলে শিক্ষকেরা নিজেরাই চাঁদা দিয়ে আংশিক সময়ের শিক্ষক রাখছেন। কোথাও আবার স্কুলের প্রাক্তনীরা চাঁদা তুলে আংশিক সময়ের শিক্ষকদের বেতন দিচ্ছেন। কোথাও আবার স্কুলের পুকুর, ধানজমি লিজ় দিয়ে অথবা জলাশয়ের মাছ, জমির ধান ও ফল-আনাজ বিক্রি করে আংশিক সময়ের শিক্ষকদের বেতন দেওয়া হচ্ছে।
বছর শেষ হতে চলল। অথচ কম্পোজ়িট গ্রান্টের টাকা আসেনি এখনও। বিভিন্ন স্কুলের উন্নয়ন তহবিলের টাকাও শেষ। ফলে, স্কুলের ভাঁড়ার কার্যত শূন্য। এ দিকে, আংশিক সময়ের শিক্ষক না রাখলে স্কুল চালানোই যাবে না। তাই স্কুলগুলি নিজেদের ব্যবস্থাপনাতেই আংশিক সময়ের শিক্ষকদের বেতন দিচ্ছে। কম্পোজ়িট গ্রান্টের টাকা সর্বশিক্ষা মিশন থেকে আসে। এ বিষয়ে জানতে শিক্ষা দফতরের সর্বশিক্ষা মিশনের এক কর্তাকে ফোন করা হলেও তিনি ধরেননি। এসএমএসেরও উত্তর দেননি। শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুকেও ফোন ও মেসেজ করা হয়। উত্তর মেলেনি।
বেহালার সরশুনা চিলড্রেন্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন হাইস্কুল ফর গার্লসের প্রধান শিক্ষিকা শর্বরী সেনগুপ্ত জানালেন, তাঁদের স্কুলে অর্থনীতি, পুষ্টিবিজ্ঞান ও কম্পিউটার অ্যাপ্লিকেশনের জন্য আংশিক সময়ের শিক্ষক রাখতে হয়েছে। স্কুলের শিক্ষিকারাই চাঁদা তুলে তাঁদের বেতন দিচ্ছেন। শর্বরী বলেন, ‘‘স্কুলে দু’ধরনের তহবিল থাকে। কম্পোজ়িট ফান্ড এবং ডেভেলপমেন্ট ফান্ড। কম্পোজ়িট ফান্ড থেকে আংশিক সময়ের শিক্ষকদের বেতন দেওয়ার নিয়ম নেই। সেই তহবিল থেকে স্কুলের চক-ডাস্টার কেনা, প্রশ্নপত্র ছাপানো অথবা ল্যাবরেটরির পরিকাঠামো তৈরির খাতে খরচ করা যায়। পড়ুয়ারা বছরে যে ২৪০ টাকা ফি দেয়, তা স্কুলের উন্নয়ন তহবিলে জমা হয়। সেই টাকায় আংশিক সময়ের শিক্ষকদের বেতন দেওয়া থেকে শুরু করে স্কুলের নানা উন্নয়নমূলক কাজ করা যায়। কিন্তু কম্পোজ়িট ফান্ডের টাকা না আসায় চক-ডাস্টার কেনা থেকে শুরু করে প্রশ্নপত্র ছাপানো, সবই ওই উন্নয়ন তহবিলের টাকা থেকে করতে হচ্ছে। বহু স্কুলেই সেই তহবিল তাই শেষ হয়ে গিয়েছে। তাই বাধ্য হয়েই শিক্ষকেরা চাঁদা তুলে আংশিক সময়ের শিক্ষকদের বেতন দিচ্ছেন।’’
শর্বরীর কথায়, ‘‘পুজোর আগে কয়েক জন শিক্ষক-শিক্ষিকা ছ’-সাত হাজার টাকা চাঁদা তুলে আংশিক সময়ের শিক্ষকদের অক্টোবর মাসের বেতন দিয়েছেন। নভেম্বর, ডিসেম্বরের বেতনও একই ভাবে দেওয়া হয়েছে। বেশির ভাগ স্কুলেরই এই অবস্থা।’’
ভবানীপুরের মিত্র ইনস্টিটিউশনের আংশিক সময়ের শিক্ষকদের বেতন দিতে এগিয়ে এসেছেন স্কুলের প্রাক্তনীরা, জানালেন প্রধান শিক্ষক রাজা দে। রাজা জানাচ্ছেন, তাঁদের স্কুলে একাদশ শ্রেণির বাণিজ্য শাখার কয়েকটি বিষয়ের শিক্ষক নেই। রসায়ন ও কলা বিভাগেরও বেশ কয়েকটি বিষয়ের শিক্ষক নেই। সেই খামতি পূরণ করতে হচ্ছে আংশিক সময়ের শিক্ষকদের দিয়ে। রাজা বলেন, ‘‘আমাদের ১০০ বছরেরও বেশি প্রাচীন ও ঐতিহ্যশালী এই স্কুলের প্রাক্তনীদের অনেকেই সমাজে সুপ্রতিষ্ঠিত। তাঁরা স্কুলের এই আর্থিক হালের কথা শুনে আংশিক সময়ের শিক্ষকদের জন্য চাঁদা তুলে দিয়েছেন।’’
স্কুলের পুকুরের মাছ, জমির ধান এবং বাগানের ফল বিক্রি করে আংশিক সময়ের শিক্ষকদের বেতন দিচ্ছে উত্তর ২৪ পরগনার দক্ষিণ চাতরা হাইস্কুল। প্রধান শিক্ষক কৃষ্ণাংশু মিশ্র বললেন, ‘‘আংশিক সময়ের শিক্ষকদের বেতন মাছ, ধান, ফল বিক্রি করেই দেওয়া হচ্ছে।’’
দক্ষিণ ২৪ পরগনার নগেন্দ্রপুর হেমন্তকুমারী হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক দীপককুমার দাস বলছেন যে, ‘‘আমাদের খুবই অসহায় অবস্থা। ১২ জন আংশিক সময়ের শিক্ষক রয়েছেন। তাঁদের বেতন কোথা থেকে দেব? কম্পোজ়িট ফান্ডের টাকা চলে এলে তা থেকে চক-ডাস্টার কেনার মতো দৈনন্দিন খরচগুলো চালানো যেত। সেই খরচও এখন স্কুলের উন্নয়ন তহবিল থেকে করতে হচ্ছে। সেই ফান্ডে আর টাকা নেই। তাই পড়ুয়াদের অভিভাবকেরাই আংশিক সময়ের শিক্ষকদের বেতনের কিছুটা অংশ দিচ্ছেন।’’