—ফাইল ছবি।
নিরাপত্তা নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করে এ বার কলকাতা হাই কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছেন রাজ্যেরই একাধিক বিচারক।
ডায়মন্ড হারবারের দুই অতিরিক্ত জেলা দায়রা বিচারক এবং এক জন অতিরিক্ত বিচারবিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেটের (এসিজেএম) ওই চিঠি এসে পৌঁছেছে হাই কোর্ট প্রশাসনের কাছে। তাতে অজ্ঞাতপরিচয় দুষ্কৃতী ছাড়াও নাম জড়িয়েছে পৈলান থানার এক পুলিশ অফিসারেরও। বিষয়টি হাই কোর্টে পৌঁছনোর পরেই নড়েচড়ে বসেছে রাজ্য পুলিশ। এসপি (ডায়মন্ড হারবার) রাহুল গোস্বামী সাংবাদিক বৈঠক করে জানিয়েছেন, বিষয়টি নিয়ে তদন্ত শুরু করার পাশাপাশি এক পুলিশ অফিসারকে ‘ক্লোজ়’ করে সাত দিনের মধ্যে কারণ দর্শাতেবলা হয়েছে।
হাই কোর্টের খবর, ঘটনার সূত্রপাত ৮ অগস্ট। সে দিন বেলা ১১টা নাগাদ এসিজেএম (ডায়মন্ড হারবার) খবর পান যে, পৈলান থানার অফিসার কুমারেশ দাস অতিরিক্ত জেলা দায়রা বিচারকের বাড়ির বিদ্যুতের লাইন কাটতে দু’জনকে পাঠিয়েছেন। কিন্তু রক্ষীরা তাঁদের বাড়িতে ঢুকতে দেয়নি। সূত্রের খবর, এর পরেই তাঁরা খোঁজখবর করা শুরু করেন। জানা গিয়েছে, সে রাতে ১টা ১০ মিনিট নাগাদ ওই আবাসনের বাইরে মুখ ঢাকা অবস্থায় এক জনকে দেখতে পেয়ে রক্ষীরা খবর দেন এসিজেএম-কে। তিনি প্রথমেই ডায়মন্ড হারবার থানার আইসিকে খবর দেন। কিন্তু পুলিশ সঙ্গে সঙ্গে পৌঁছয়নি। রাত ১টা ২২ মিনিট নাগাদ ফের তিনি আইসি-কে ফোন করেন এবং তার মিনিট কুড়ি পরে পুলিশ পৌঁছয়। ফোন করার কিছু ক্ষণের মধ্যেই ওই মুখ ঢাকা ব্যক্তি পালিয়ে গিয়েছিল। এই গোটা বিষয়টি চিঠি লিখে জেলা বিচারক শুভ্রদীপ মিত্রকে জানান ওই আবাসনে বসবাসরত দুই অতিরিক্ত জেলা বিচারক এবং এসিজেএম। জেলা বিচারক সেই চিঠি হাই কোর্ট প্রশাসনের কাছে পাঠান। চিঠিতে বিচারকদের সন্দেহ, সম্প্রতি একাধিক পকসো (শিশু যৌন নির্যাতন বিরোধী আইন) মামলায় যে রায় হয়েছে, তার পরিপ্রেক্ষিতেই হামলার ষড়যন্ত্র হয়েছে। সেই চিঠিতেই কুমারেশ দাস এবং আরও এক পুলিশ অফিসারের কথা লেখা হয়েছে।
পুলিশের খবর, হাই কোর্ট প্রশাসনের কাছ থেকে খবর পেয়ে বুধবার দুপুরে ডায়মন্ড হারবার আদালতে যান পুলিশ সুপার রাহুল গোস্বামী ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (জ়োনাল) মিতুনকুমার দে। বিচারকদের সঙ্গে কথা বলার পরে তাঁদের কাছ থেকে পাওয়া সিসি ক্যামেরার ছবি এবং অভিযোগপত্র নেন। তার পর পুলিশ সুপার জানান, তদন্ত শুরু করেছে ডায়মন্ড হারবার থানার পুলিশ। সিসি ক্যামেরার ছবিতে কালো কাপড়ে মুখ ঢাকা এক দুষ্কৃতীকে আবাসনের বাইরে ঘোরাঘুরি করতে দেখা যাচ্ছে। এক জনকে আটকও করা হয়েছে।
জানা গিয়েছে, বিদ্যুতের লাইন কাটা, জলের লাইন কাটা নিয়ে বিদ্যুৎ ও অন্যান্য বিভাগের সঙ্গে কথাও বলবেন তদন্তকারীরা। ‘ক্লোজ়’ করা পুলিশ অফিসারের বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্ত শুরু হয়েছে। বিচারকদের নিরাপত্তা এবং সুরক্ষায় কোনও ফাঁক না রাখার আশ্বাসও দেন পুলিশ সুপার। রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর দাবি, ‘‘আমি রাজ্যপালকে লিখব, যাতে তিনি মুখ্যসচিবকে নির্দেশ দেন সিবিআইকে এই মামলা হস্তান্তর করতে। না-হলে সোমবার হাই কোর্টে মামলা দায়ের করব।’’
বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার এই ঘটনার প্রেক্ষিতে কেন্দ্রীয় আইন মন্ত্রী অর্জুন রাম মেঘওয়ালকে চিঠি লিখে তাঁর হস্তক্ষেপ দাবি করেছেন।
সিপিএমের সুজন চক্রবর্তীর অভিযোগ, ‘‘সাধারণ নাগরিক থেকে বিচারক— কেউই নিরাপদ নন এই রাজ্যে।’’ তৃণমূল কংগ্রেস নেতা কুণাল ঘোষ অবশ্য বলেন, ‘‘জানা গিয়েছে, কিছুটা অপ্রকৃতিস্থ এক ব্যক্তি আবাসনের বাইরে থেকে উঁকিঝুঁকি মেরেছে। তার সঙ্গে মামলা, বিচারপতি বা কোনও রায়ের সম্পর্ক নেই। তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে।’’