প্রতীকী ছবি।
রানিকুঠির স্কুলে চার বছরের ছাত্রীকে যৌন নির্যাতন নিয়ে ধুন্ধুমারের পরেই সামনে এসে গিয়েছে এ রকম আরও কিছু ঘটনা।
কলকাতার জি ডি বিড়লা সেন্টার ফর এডুকেশনে শুক্রবার যখন ক্ষোভে ফেটে পড়ছেন অভিভাবকেরা, ওই দুপুরেই উত্তর ২৪ পরগনার রায়গঞ্জে সাড়ে তিন বছরের মেয়েকে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে। বিকেলেই নদিয়ার কৃষ্ণনগরে এক বালিকাকে তার বাবার বন্ধু ধর্ষণ করে বলে অভিযোগ। দুই ঘটনাতেই অভিযুক্তেরা ধরা পড়েছে।
কিন্তু কলকাতারই আর এক স্কুল, বেহালার জেমস লং সরণিতে এম পি বিড়লা ফাউন্ডেশন হায়ার সেকেন্ডারি স্কুলে সাড়ে তিন বছরের শিশুর উপর যৌন নির্যাতনের অভিযোগের কিনারা হয়নি। প্রথমে জুনে, পরে সেপ্টেম্বরে ফের তার উপরে নির্যাতন হয়। কিন্তু ‘প্রমাণের অভাবে’ আড়াই মাসেও পুলিশ কাউকে ধরতে পারেনি। এ দিন তার বাবা-মা ফের সরব হয়েছেন।
এ দিনই নদিয়ার হাঁসখালি থানার গাঁড়াপোতায় বালিকা ধর্ষণে ফেরার অভিযুক্তের বাড়িতে ভাঙচুর চালান মানুষ। ক্লাস ফোরে পড়া মেয়েটিকে তার দিদির শিক্ষক স্কুলের পাশে এক নির্মীয়মাণ দোতলা ঘরে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করে বলে অভিযোগ। যদিও অভিযুক্ত প্রণয় রায় এখনও অধরা।
হোলি ফ্যামিলি প্রাইমারি স্কুলের প্রথম শ্রেণির ছাত্রীর বাড়ি কৃষ্ণনগরে কোর্টপাড়া এলাকায়। বিকেলে সে বাড়ির পাশের মাঠে খেলা করছিল। বাবার বন্ধু রাজু বল্লভ সাইকেলে করে তাকে ঘুরতে নিয়ে যাওয়ার নাম করে ধোপার পুকুর পাড়ে নিয়ে যায়। পরে মেয়েটি ঠাকুমাকে সব বলে। এলাকার লোকজন বছর চল্লিশের রাজুকে ধরে ফেলে। মেয়েটি বলে, “কাকুর বাড়িতে এক দিন দোলনা চড়ানোর নাম করে এমনটা করেছিল।”
রায়গঞ্জের নেতাজি কলোনির শিশুটি ‘কাকু’ বলে ডাকত পড়শি বিমল মণ্ডলকে। বিমলের ছেলের সঙ্গে খেলতে এসেছিল মেয়েটি। দুপুরে ওই বাড়ির বারান্দায় বসে তাকে কাঁদতে দেখে তার মা বাড়ি নিয়ে যান। বিষয়টি বুঝতে পারেন তিনি। ওই রাতেই পুলিশ বিমলকে ধরে। তবে তার দাবি, জমি নিয়ে বিবাদের জেরে মিথ্যে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।
এম পি বিড়লা ফাউন্ডেশন হায়ার সেকেন্ডারি স্কুলের নার্সারিতে পড়া শিশুটি যে যৌন লালসার শিকার হয়েছে, তার বাবা-মা প্রথম বুঝতে পারেন ২০ জুন। তার মায়ের অভিযোগ, ‘‘মেয়ে বারবার গোপনাঙ্গে হাত দিচ্ছিল। আমি জিজ্ঞাসা করায় বলে, স্কুলের আঙ্কল আমায় এ রকম করে।’’ পরের দিনই তাঁরা অধ্যক্ষকে সব জানান। কিন্তু তিনি আমল দেননি বলে অভিযোগ। গত ১৩ সেপ্টেম্বর শিশুটি স্কুল থেকে বাড়ি ফেরার পরে তার মা দেখেন, ন্যাপিতে রক্ত। গোপনাঙ্গে যন্ত্রণা হচ্ছে বলেও সে মাকে জানায়। এর পরেই শিশুটিকে বিদ্যাসাগর হাসপাতালে নিয়ে যান তার বাবা-মা। চিকিৎসকেরা পরীক্ষা করে জানান, সে যৌন নির্যাতনের শিকার। কিন্তু বেহালা থানা অভিযোগ নেওয়ার বদলে বুঝিয়ে-সুজিয়ে তাঁদের বাড়ি পাঠিয়ে দেয় বলে অভিযোগ। শেষে আইনজীবীর পরামর্শে ১৫ সেপ্টেম্বর তাঁরা বেহালা মহিলা পুলিশ স্টেশনে অভিযোগ দায়ের করেন।
এম পি বিড়লা ফাউন্ডেশন হায়ার সেকেন্ডারি স্কুলের অধ্যক্ষ হাবার্ট জর্জ অবশ্য দাবি করেন, ‘‘পুলিশকে সব সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ দিয়েছি। স্কুলের মধ্যে যৌন নির্যাতনের ঘটনা ঘটেনি।’’ রানিকুঠির শিশুটির মতোই এই শিশুটিও চল্লিশ জনের ছবি দেখে দু’জনকে শনাক্ত করেছিল। পুলিশ তাঁদের ধরেনি। লালবাজারের এক শীর্ষকর্তার দাবি, ‘‘সিসিটিভি ফুটেজ পরীক্ষা করে দেখা গিয়েছে, গত ১৩ সেপ্টেম্বর ওই দু’জন শিশুটির ধারে-কাছে ছিলেন না।’’ সাড়ে তিন বছরের শিশু কি তবে মিথ্যে বলছে? এই প্রশ্নের কোনও সদুত্তর মেলেনি।