হাইবস কুলিসিফরমিস (বাঁ দিকে) আসারকিনা আফ্রিকানা (ডান দিকে) । ছবি: বন দফতরের সৌজন্যে।
সাতটি নতুন প্রজাতির মাছির সন্ধান মিলল ভারতে। এবং সেটা মিলেছে উত্তরবঙ্গের নেওড়া ভ্যালির বনাঞ্চলে।
নেওড়া ভ্যালি জাতীয় উদ্যানে জীব-বৈচিত্রের সমীক্ষা করতে গিয়ে ওই সমস্ত মাছি নজরে এসেছে জীব বিজ্ঞানীদের। তাঁদের কেউ শিকারি, কেউ পরাগ সংযোগে সহায়তা করে, কেউ সাহায্য করে জৈব পদার্থ পচাতে। ২০১৮ সাল থেকে বন দফতরের উদ্যোগে ওই সমীক্ষায় দেশে প্রথম বার নজরে আসা এই মাছিগুলির ব্যাপারে সম্প্রতি আন্তর্জাতিক স্তরের ‘জার্নাল অব থ্রেটেন্ড ট্যাক্সা’-তে প্রকাশিত হয়েছে। সাতটি প্রজাতির মাছি হল—‘হাইবস কুলিসিফরমিস’, ‘হোমোনিউরা এসপি’, ‘হেলিনা ইওয়াসাই’, ‘সিনোনিপোনিয়া বারুয়াই’, ‘ক্রাইসোগ্যাস্টার এসপি’, ‘আসারকিনা আফ্রিকানা’ এবং ‘প্যারাগাস হেমোরাস’।
সমীক্ষক দলে থাকা হুগলির শ্রীগোপাল বন্দ্যোপাধ্যায় কলেজের প্রাণীবিদ্যার শিক্ষক শুভ্রকান্তি সিংহ বলেন, ‘‘সব মিলিয়ে ৩৩টি গোত্রের মাছি পাওয়া গিয়েছে। এই গোত্রগুলির অধীনে ২০১টি প্রজাতি এবং ১০৫টি গণ চিহ্নিত করা গিয়েছে। তাদের মধ্যে ২৫টি প্রজাতি রাজ্যে নতুন। সেই ২৫টির মধ্যে আবার সাতটি এমন প্রজাতি আছে, সেগুলি আগে কখনও দেশে দেখা যায়নি। এই সাতটি মাছির কোনওটা চিনে, কোনওটা ইউরোপের দেশগুলিতে দেখা যায়।’’ তাঁর কথায়, ‘‘এই সাতটি প্রজাতির মধ্যে হোমোনিউরা এসপি, ক্রাইসোগ্যাস্টার এসপি কোন প্রজাতি, তা স্পষ্ট নয়। বাইরের কোনও দেশে হয়তো থাকতে পারে। তার খোঁজ চলছে। তবে তা এ দেশে নতুনই।’’
বিশেষজ্ঞেরা জানাচ্ছেন, নেওড়া ভ্যালিতে কম উচ্চতায় মাছির মতো পতঙ্গ কম। আড়াই থেকে তিন হাজার মিটার উচ্চতার জঙ্গলে প্রচুর মাছি। শুভ্রকান্তি জানান, ‘হাইবস কুলিসিফরমিস’ শিকারি প্রকৃতির। ‘হোমোনিউরা এসপি’ এবং ‘হেলিনা ইওয়াসাই’ এবং ‘প্যারাগাস হেমোরাস’ প্রজাতি বনাঞ্চলে ফুলের পরাগ সংযোগে ভূমিকা নেয়। ‘সিনোনিপোনিয়া বারুয়াই’ প্রজাতির ভূমিকা রয়েছে জৈব পদার্থ পচানোয়।
সমীক্ষা নিয়ে উদ্যোগীদের অন্যতম পরিবেশপ্রেমী অনিমেষ বসু বলেন, ‘‘এখানকার কোনও বনাঞ্চলেই জীব বৈচিত্রের সম্পূর্ণ সমীক্ষা আজ পর্যন্ত হয়নি। যেটা ভীষণ জরুরি। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে যে ভাবে বিভিন্ন প্রাণী, কীট-পতঙ্গ কমছে, তাতে অতীতে কোথায়, কী ছিল, তা সমীক্ষা করে না রাখলে জানাই যাবে না।’’ সমীক্ষার কো-অর্ডিনেটর ওয়েস্টবেঙ্গল স্টেট ইউনিভার্সিটির প্রাণীবিদ্যার শিক্ষক শীলাঞ্জন ভট্টাচার্য জানান, এই বনাঞ্চলে আগে কোনও সমীক্ষা হয়নি। সে কারণে বিভিন্ন বিষয়ের বিশেষজ্ঞদের সমীক্ষক দলে রাখা হয়। সমীক্ষার উদ্যোক্তা উত্তরবঙ্গের অতিরিক্ত প্রধান মুখ্য বনপাল উজ্জ্বল ঘোষ বলেন, ‘‘জীববৈচিত্র সম্পর্কে জানাটা জরুরি। নেওড়া ভ্যালিতে প্রথম বার সমীক্ষা হল। ভবিষ্যতেও করতে হবে। বন দফতরের কর্মীরাও এই সমীক্ষা থেকে সমৃদ্ধ হয়েছেন।’’