বহুতলে তদন্তে পুলিশ। নিজস্ব চিত্র
সকাল সাড়ে ৮টা। প্রাতঃভ্রমণে বেরিয়েছিলেন বেনাচিতির বারো তলা এক বহুতলের আবাসিক সংগঠনের সম্পাদক পুষ্পক মিশ্র। আচমকা এল ফোনটা। আঁতকে উঠলেন পুষ্পকবাবু। শুনলেন, তাঁদেরই আবাসন থেকে উদ্ধার হয়েছে এক যুবতীর ট্রলিব্যাগ বন্দি দেহ। দ্রুত আবাসনে ফিরে দেখলেন, চারদিকে ভিড়। পুলিশ, নিরাপত্তারক্ষী, আবাসিকেরা, কে নেই সেখানে! — শিল্পা অগ্রবাল নামে মেজিয়ার ওই যুবতীর দেহ উদ্ধারের পরে এ ভাবেই চাঞ্চল্য ছড়াল ওই আবাসনে।
এ দিন সকালেও ফি দিনের মতোই নিরাপত্তারক্ষীরা গেটের সামনে পাহারায় ছিলেন। পরিচারিকারা বিভিন্ন ফ্ল্যাটে কাজ করছিলেন। ওই বহুতলে গিয়ে দেখা গেল, দেহ উদ্ধারের পরে ঘটনায় প্রায় সকলেই আতঙ্কিত। প্রকাশ্যে প্রায় কেউই মুখ খুলতে চাইলেন না।
তবে নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক এক নিরাপত্তারক্ষী জানালেন, বুধবারও বিকেলে রাজীব কুমার ও মনীষা নামে ওই দম্পতি অফিস থেকে ফেরার সময়ে দু’জনে হেঁটে ফ্ল্যাটে ঢোকেন। ওই রক্ষীর কথায়, ‘‘একবারও মনে হয়নি, ওই ফ্ল্যাটে দেহ রয়েছে। খবরটা পেয়ে চমকে গিয়েছিলাম।’’
ওই ফ্ল্যাটটির মালিক আদতে এক মহিলা। তাঁর জামাই থাকেন ওই বহুতলেরই ১১ তলায়। তিনি জানান, গত বছর সেপ্টেম্বরে ভাড়া নেন ওই দম্পতি। তাঁর আক্ষেপ, ‘‘দু’জনেই ব্যাঙ্কের উঁচু পদে কাজ করেন। এমন ঘটনায় সত্যিই খুব অবাক হয়েছি।’’
তবে শিল্পা অগ্রবাল নামে ওই যুবতীকে ফ্ল্যাটে কখনই দেখা যায়নি বলে দাবি নিরাপত্তারক্ষীদের। তাঁদের দাবি, এই ফ্ল্যাটের নিরাপত্তা ব্যবস্থাও যথেষ্ট আঁটোসাঁটো। রক্ষী, সিসি ক্যামেরা সবই রয়েছে। তবে আবাসিকদের সঙ্গে কেউ এলে সেই সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে বহুতলের মূল গেটে রাখা রেজিস্ট্রারে সই করতে হয় না।
পুলিশ জানিয়েছে, রেজিস্ট্রারে মৃতা যুবতীর সই দেখা যায়নি। সে ক্ষেত্রে প্রশ্ন উঠেছে, তা হলে কি কোনও পরিচিতের সঙ্গেই আবাসনে এসেছিলেন শিল্পা। শনি ও রবি ছাড়া সপ্তাহে পাঁচ দিনই ওই দম্পতির ফ্ল্যাটে কাজ করতে আসেন পরিচারিকা ঊর্মিলা পাসোয়ান। তাঁর দাবি, ‘‘সোমবার থেকে টানা গিয়েছি। কিছুই বুঝতে পারিনি। নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।’’ ওই বহুতলের আবাসিক সংগঠনের সম্পাদক পুষ্পকবাবুর দাবি, ‘‘সর্বত্র সিসি ক্যামেরা লাগানো আছে। পুলিশ তা পরীক্ষা করে দেখুক, তা হলেই সত্য প্রকাশ্যে আসবে।’’ তবে রাজীব ও মনীষার ফ্ল্যাট যে তলায়, সেখানে বাকি দু’টি ফ্ল্যাট এ দিন তালা বন্ধ ছিল। বাকি দু’টি ফ্ল্যাটেরও কেউ প্রতিক্রিয়া জানাতে চাননি।