আনন্দবাজার অনলাইনের ‘মাস্টহেড’ ব্যবহার করে অরিজিৎ সিংহের ছবি দিয়ে ‘স্ক্রিনশট’ ভাইরাল! —ফাইল চিত্র।
আনন্দবাজার অনলাইনের শিরোনাম বিকৃত করে ভুয়ো ‘স্ক্রিনশট’ ছড়িয়ে জনতাকে বিভ্রান্ত করার ঘটনা প্রকাশ্যে এসেছিল গত লোকসভা ভোটের সময়। আরজি কর-কাণ্ডের আবহেও সেই একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি দেখা গেল! আনন্দবাজার অনলাইনের ‘মাস্টহেড’ ব্যবহার করে সঙ্গীতশিল্পী অরিজিৎ সিংহের ছবি দিয়ে ‘স্ক্রিনশট’ ব্যাপক হারে ছড়ানো হয়েছে এ বার। তাতে পাঠকদের বিভ্রান্ত হওয়ার অবকাশ থাকছে। সেই কারণেই গোটা বিষয়টি সকলের গোচরে আনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
আরজি কর-কাণ্ড নিয়ে বিতর্কের আবহে আনন্দবাজার অনলাইনের মাস্টহেডের নীচে অরিজিতের একটি বয়ান সম্বলিত ছবি ভাইরাল হয়েছে সমাজমাধ্যমে। ছবিতে দেখা যাচ্ছে, খবর শিরোনাম হিসাবে লেখা, ‘আরজি করে মৃত ডাক্তারের বিষয় নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় বিরোধীরা আমার বক্তব্যের ভুয়ো খবর ছড়াচ্ছে: অরিজিৎ’। আনন্দবাজার অনলাইনের ওয়েবসাইট বা অ্যাপ খুললে প্রথম যে খবরটি দেখা যায়, সেই খবরে শিরোনামের সঙ্গে একটি ‘স্ট্র্যাপ’ও দেখা যায়। ভাইরাল হওয়া ছবিতে শিরোনামের সঙ্গে সে রকমই একটি ‘স্ট্র্যাপ’ জুড়ে দেওয়া হয়েছে। তাতে লেখা, ‘‘যে কোনও মৃত্যুই দুঃখজনক। আরজি কর নিয়ে প্রতিবাদ হওয়া খুবই দরকার। বাংলার মুখ্যমন্ত্রী উনি খুবই ভালো মানুষ। মানুষের জন্য অনেক কাজ করেন। মাননীয়া যে ভাবে আরজি কর বিষয় নিয়ে প্রতিবাদ করছে, আমার ভালো লেগেছে। আমি ওনার বিরুদ্ধে নয়।’’ (বানান ও বাক্যগঠন অপরিবর্তিত)
গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
এটি সম্পূর্ণ ভুয়ো খবর। এই মর্মে আনন্দবাজার অনলাইন কোনও খবর করেনি। খবর দু’টি দেখে বোঝা যাচ্ছে যে, নির্দিষ্ট উদ্দেশ্য নিয়ে সেগুলি ‘তৈরি’ করা হয়েছে। এতে অনেক ক্ষেত্রেই পাঠকেরা বিভ্রান্ত হন। এ ক্ষেত্রেও অনেকে হয়তো হয়েও থাকবেন। আবার অনেকে স্ক্রিনশটের সত্যতা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। সেই সব সচেতন পাঠক মেল করে সে কথা আমাদের জানিয়েওছেন।
সমাজমাধ্যমের এই রমরমার সময়ে ভুয়ো খবর নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনায় পরিণত হয়েছে। যা নিয়ে স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রায়ই ক্ষোভপ্রকাশ করেন। আরজি কর-কাণ্ডের আবহেও ভুয়ো খবর ছড়ানো নিয়ে তোলপাড় গোটা রাজ্য। কলকাতার পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েল এ নিয়ে একাধিক বার ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। যাঁরা ভুয়ো খবর ছড়াচ্ছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপও করছে লালবাজার। তবে পাশাপাশি এটিও সত্য যে, আনন্দবাজার অনলাইনের বিশ্বাসযোগ্যতার কারণেই অনেকে আমাদের মাস্টহেড ব্যবহার করে এই ধরনের ভুয়ো খবরের স্ক্রিনশট ছড়ান। অর্থাৎ, যাঁরা এ কাজ করছেন, তাঁরা প্রকারান্তরে স্বীকার করে নিচ্ছেন, আনন্দবাজার অনলাইনের খবর বললে বা আনন্দবাজার অনলাইনের লাল-সাদা মাস্টহেড ব্যবহার করলে তা ‘বিশ্বাসযোগ্য’ হয়! সেটা আমাদের কাছে একপ্রকার শংসাপত্রও বটে।
কিন্তু খবরটি ভুয়ো কি না, তা বোঝার সহজ উপায় রয়েছে।
আনন্দবাজার অনলাইনের খবরের শিরোনামের স্ক্রিনশট হয়ে যা যা বিভিন্ন ইনবক্সে ঘোরে বা ফেসবুক অথবা এক্সের (সাবেক টুইটার) ফিডে ভেসে বেড়ায়, সেগুলি সত্য কি না, তা যাচাই করতে সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদনের বাংলা শিরোনামটি গুগলে গিয়ে ‘সার্চ’ করুন। তা হলেই জানা যাবে আনন্দবাজার অনলাইন ওই খবর প্রকাশ করেছে কি না। সাধারণত এই ধরনের ভুয়ো খবরে মাস্টহেড-সহ শিরোনামের স্ক্রিনশট ছাড়া আর কিছু থাকে না। সচেতন পাঠক মাত্রেই জানেন, শুধু শিরোনাম দিয়ে কোনও খবর হয় না। শিরোনামের পরে পুরো খবরটি থাকে। তা ছাড়াও, আনন্দবাজার অনলাইনের বিশেষ ‘ফন্ট’ রয়েছে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ভুয়ো স্ক্রিনশটে ভিন্ন ‘ফন্ট’ ব্যবহার করা হয় এবং হচ্ছে। তবে এই ধরনের ‘কারিগরেরা’ ক্রমশ তাঁদের কাজে দড় হয়ে উঠছেন। ফলে তুলনায় কাছাকাছির ‘ফন্ট’ও ব্যবহার করা হচ্ছে। সেই কারণেই প্রাথমিক সাবধানতাটুকু আরও জরুরি।