টেট পরীক্ষা চলাকালীন উত্তর দিনাজপুর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের ভিতরে ঢুকে জেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিদর্শককে মারধরের অভিযোগ উঠল কয়েকজন অজ্ঞাতপরিচয় যুবকের বিরুদ্ধে। এ দিন বিকেল ৩টে নাগাদ রায়গঞ্জের কর্ণজোড়াতে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের দফতরে জনা দশেক যুবক হাজির হয়। অভিযোগ ওঠে, তাদের মধ্যে চার থেকে পাঁচ জন যুবক জেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিদর্শকের ঘরে ঢুকে গালিগালাজ করে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, ওই যুবকরা চিৎকার করে ওই সরকারি আধিকারিককে বলছিল, ‘‘আমরা পরীক্ষা দিতে পারছি না আর তুই এখানে বসে খাওয়াদাওয়া করছিস?” এর পরেই জেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিদর্শক বাদল পাত্র সহ উপস্থিত বেশ কয়েকজন কর্মীকে ওই যুবকেরা মারধর করে। বাদলবাবুদের পেটে ঘাড়ে লাগে। অভিযোগ ওঠে, উপস্থিত মহিলা কর্মীদের উপরেও হামলা চালায় ওই যুবকেরা।
বাদলবাবু বলেন, ‘‘হঠাৎই একদল যুবক আমার দফতরে ঢুকে পড়ে। তাঁরা কে, কোথা থেকে এসেছেন, বুঝতে পারিনি। শুধু জানায়, তারা পরীক্ষা দিতে পারেনি। আমরা কেন খাওয়াদাওয়া করছি তা নিয়েও ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তারপর আমাদের উপর হামলা চালিয়ে পালিয়ে যায়। আমি ও আমার সহকর্মিরা আহত হয়েছি।’’ সঙ্গে সঙ্গেই ঘটনার বিবরণ জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের চেয়ারম্যানকে জানান তাঁরা। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের চেয়ারম্যান বেঞ্জামিন হেমব্রম বলেন, ‘‘কে বা কারা এসেছিল, কিছুই জানা যাচ্ছে না। ঘটনায় আমরা আতঙ্কিত, ঘটনার পরেই পুলিশ সুপারকে ফোন করে ঘটনার বিবরণ দিয়েছি।’’
প্রশ্ন উঠছে, যেখান থেকে ঢিল ছোড়া দূরত্বে রয়েছে জেলাশাসক ও পুলিশের উচ্চপদস্থ কর্তাদের দফতর, সেখানে কী করে এমন ঘটনা ঘটতে পারে? পুলিশ জানিয়েছে, ঘটনা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এই ঘটনার পরে সন্ধ্যায় কর্ণজোড়া ফাঁড়িতে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন বাদলবাবু। আহত বাদলবাবুকে রায়গঞ্জ জেলা হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা করানোর পরে ছেড়ে দেওয়া হয়।
সংসদ সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই দফতরের সামনে সিসি ক্যামেরা নেই। তাই দুষ্কৃতীদের চিহ্নিত করা শক্ত হয়ে পড়েছে। প্রাথমিক সংসদের অফিসের পাশেই রায়গঞ্জ বিএড কলেজ। শনিবার ওই কলেজে সমবায় ব্যাঙ্কের পরিচালন সমিতির ভোটকে কেন্দ্র করে রণক্ষেত্র হয়ে ওঠে এলাকা। তাতে আতঙ্ক ছড়ায় দফতরের কর্মীদের মধ্যে। তারপরে এ দিনের ঘটনায় তাঁরা আরও আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। সহকারী স্কুল পরিদর্শক সুপ্রিয়া চক্রবর্তী বলেন, ‘‘রবিবার টেট বলে আমরাও ওই দিন দফতরে এসেছিলাম। ওই ঘটনার আমরা প্রত্যক্ষদর্শী। তারপরে আমাদের দফতরেই হামলা হল। পরপর এই কাণ্ডে আমরা আতঙ্কিত।’’
অভিযুক্ত চেয়ারম্যান
স্ত্রী টেট দিলেও আলিপুরদুয়ারের প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের চেয়ারম্যান সমীর নার্জিনারি দায়িত্ব থেকে নিয়ম মেনে ছুটি নেননি বলে অভিযোগ বিরোধীদের। নিখিলবঙ্গ প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের সদস্যদের দাবি, কোনও পরীক্ষার্থী পরীক্ষা দিলে সেই সময় তাঁর পরিবারের কেউ পরীক্ষার দায়িত্বে থাকতে পারেন না, কিন্তু সমীরবাবু সেই নিয়ম মানেননি। সমীরবাবুর প্রতিক্রিয়া, “স্ত্রী-র ব্যাপারে কিছু বলব না।” তবে আলিপুরদুয়ার প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের সরকার মনোনীত সদস্য ভাস্কর মজুমদার বলেন, ‘‘সমীরবাবুর স্ত্রী ধূপগুড়ি হাইস্কুলে পরীক্ষা দিয়েছেন। পরীক্ষা অন্য জেলায় হয়েছে। সেক্ষেত্রে চেয়ারম্যানের ছুটি নেওয়ার কোনও প্রয়োজন ছিল না।’’