তারা তৈরি। কিন্তু রাজ্য সরকার সাতটি পুরসভার ভোট করতে আরও বেশ কিছুটা সময় চেয়ে হাইকোর্টের কাছে ইতিমধ্যেই আবেদন করেছে। এই পরিস্থিতিতে কী করণীয়, জানতে চেয়ে বৃহস্পতিবার হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চের দ্বারস্থ হল রাজ্য নির্বাচন কমিশন। ডিভিশন বেঞ্চ জানিয়েছে, রাজ্য সরকার ও রাজ্য নির্বাচন কমিশনের আবেদন দু’টি নিয়ে আজ, শুক্রবার শুনানি হবে।
এ দিন প্রধান বিচারপতি মঞ্জুলা চেল্লুর ও বিচারপতি জয়মাল্য বাগচীর ডিভিশন বেঞ্চে রাজ্য নির্বাচন কমিশনার সুশান্তরঞ্জন উপাধ্যায়ের আবেদন জমা পড়ে। কমিশনের আইনজীবী নয়নচাঁদ বিহানি বলেন, ১৬ এপ্রিল প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ নির্দেশ দিয়েছে, ১৬ জুনের মধ্যে আসানসোল, রানিগঞ্জ, কুলটি, জামুড়িয়া, বিধাননগর, রাজারহাট-গোপালপুর ও বালি পুরসভার নির্বাচন শেষ করতে। আদালতের নির্দেশ মেনে কমিশন ওই পুরসভাগুলির নির্বাচনের কাজ শুরু করে দিয়েছে। নির্বাচনের একটা দিনও তারা ঠিক করেছে। কারণ ওই সময়ের মধ্যে পুরসভাগুলির নির্বাচন শেষ না হলে আদালত অবমাননার দায়ে পড়তে হবে কমিশনকে।
কেন তারা ওই পুরসভাগুলির দিন ঘোষণা করতে পারছে না, তা ব্যাখ্যা করে কমিশনের তরফে আইনজীবী বলেন, রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চে ইতিমধ্যেই আবেদন করে ওই সাত পুরসভার নির্বাচনের দিন পিছিয়ে দিতে বলা হয়েছে। বিহানির আর্জি, ‘‘এই পরিস্থিতিতে নির্বাচন কমিশন কী করবে, বা তাদের কী করা উচিত, তা ঠিক করে দিক প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ।’’ ডিভিশন বেঞ্চ জানায়, শুক্রবার রাজ্য এবং কমিশনের আবেদন নিয়ে শুনানি হবে।
কমিশন আদালতের শরণাপন্ন হওয়ায় রাজ্য কী বলছে? রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়নমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম বলেন, ‘‘নিগমগুলি তৈরি করতে অল্প কিছু দিন সময় লাগবে। তারপরেই সেখানে নির্বাচন করানো হবে বলে আমরা ইতিমধ্যেই হাইকোর্টে আবেদন করেছি। নিগম তৈরি হলে আবার তো সেখানে নির্বাচন করতে হবে। আশা করি, হাইকোর্ট বিষয়টি বুঝবে।’’
কিন্তু আদালত যদি একতরফা ভাবে সাত পুরসভায় এখনই নির্বাচন করার পক্ষে রায় দেয়? পুরমন্ত্রীর জবাব, ‘‘আদালতের উপরে আমাদের আস্থা আছে। সাধারণ মানুষের কথা মাথায় রেখেই আদালত রায় দেবে বলে আমাদের বিশ্বাস।’’
মেয়াদ শেষের পরেও কেন ওই সাত পুরসভার নির্বাচন হচ্ছে না, এই মর্মে আগেই প্রশ্ন তুলেছিল হাইকোর্ট। পুরসভাগুলির নির্বাচন নিয়ে আর যেন টালবাহানা না হয়, তা জানিয়ে দিয়েছিল প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ। রাজ্য নির্বাচন কমিশন বিষয়টি রাজ্য সরকারের কোর্টে ঠেলে দিয়েছিল। কমিশনের বক্তব্য, রাজ্যে পুরসভা নির্বাচন পরিচালনা তাদের দায়িত্ব হলেও রাজ্যের পুর আইন মোতাবেক পুর নির্বাচনের বিজ্ঞপ্তি জারির ক্ষমতা তাদের নেই। সেটা রাজ্যকেই করতে হয়। তবে নির্বাচনের দিন চূড়ান্ত করার ক্ষেত্রে রাজ্যকে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে বৈঠকে বসার কথা বলা আছে পুর আইনে।
হাইকোর্ট সূত্রে খবর, পুর আইনের এই সব সমস্যা তুলে ধরেই এ দিন ডিভিশন বেঞ্চের দ্বারস্থ হন রাজ্য নির্বাচন কমিশনার। সাত পুরসভার ভোটের দিনক্ষণ চূড়ান্ত করা নিয়ে এখনও যে রাজ্য তাদের সঙ্গে বৈঠক করেনি, তা কমিশনার হাইকোর্টকে জানিয়েছেন। কমিশন চায়, তাদের সঙ্গে আলোচনা করে দিন চূড়ান্ত করার পরে রাজ্য ভোটের বিজ্ঞপ্তি জারি করুক। কমিশন প্রস্তুত। ওই সাতটি পুরসভার নির্বাচন কবে হবে, সে ব্যাপারে হাইকোর্টই দিশা দেখাক।