বিচারপতি সিএস কারনান। ছবি: সংগৃহীত।
কখনও মাদ্রাজ হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির কর্তৃত্বকে চ্যালেঞ্জ। কখনও বা বিচারপতি নিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগ তোলা। আবার কখনও তাঁকে বদলি করে সুপ্রিম কোর্টের দেওয়া নির্দেশের উপরে নিজেই স্থগিতাদেশ জারি করা!
ছ’বছরেরও বেশি সময় ধরে এ ভাবেই বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দু তিনি। কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি চিন্নাস্বামী স্বামীনাথন কারনান। কলকাতায় বদলি হয়েও তিনি বিতর্কে জড়িয়ে পড়েছেন। প্রবীণ এক বিচারপতির সঙ্গে প্রথমে সহমত হয়ে এবং পরে দ্বিমত পোষণ করে। এ বার সেই বিচারপতি কারনানকে আদালত অবমাননার একটি মামলায় হাজির হওয়ার নির্দেশ দিল সুপ্রিম কোর্ট।
শীর্ষ আদালতের প্রধান বিচারপতি জগদীশ সিংহ খেহরের নেতৃত্বাধীন সাত সদস্যের সাংবিধানিক বেঞ্চ বুধবার বিচারপতি কারনানের বিরুদ্ধে একটি নোটিস জারি করেছে। তাতে বলা হয়েছে, কেন তাঁর বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার রুল জারি করা হবে না, ১৩ ফেব্রুয়ারি সর্বোচ্চ আদালতে হাজির হয়ে তার কারণ ব্যাখ্যা করতে হবে তাঁকে। সুপ্রিম কোর্ট সূত্রের খবর, এই প্রথম দেশের শীর্ষ আদালত দেশের কোনও হাইকোর্টের বিচারপতির বিরুদ্ধে স্বতঃপ্রণোদিত ভাবে আদালত অবমাননার মামলা দায়ের করল।
মাদ্রাজ হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি এবং অন্য বিচারপতির বিরুদ্ধে ক্রমাগত নানা অভিযোগ তোলার জন্য মঙ্গলবার দেশের শীর্ষ আদালত বিচারপতি কারনানের বিরুদ্ধে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে একটি মামলা দায়ের করে। সেই মামলাতেই এ দিন তাঁর বিরুদ্ধে কারণ দর্শানোর নোটিস জারি হয়। সুপ্রিম কোর্ট একই সঙ্গে বিচারপতি কারনানকে নির্দেশ দিয়েছে, কলকাতা হাইকোর্টের যাবতীয় বিচারকার্য ও প্রশাসনিক কাজ থেকে আপাতত বিরত থাকতে হবে তাঁকে। তিনি যেন বিচার ও প্রশাসনিক কাজের সব ফাইল ওই হাইকোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলের কাছে অবিলম্বে ফেরত পাঠান।
গত বছর নির্মীয়মাণ বিবেকানন্দ উড়ালপুল ভেঙে পড়ার ঘটনায় অভিযুক্তদের এক জনের জামিনের আবেদন শুনে বিচারপতি অসীম রায়ের সঙ্গে সহমত হয়ে প্রকাশ্য আদালতে প্রথমে তা খারিজ করে দেন বিচারপতি কারনান। কিন্তু কয়েক দিন পরেই ওই বিচারপতি জানিয়ে দেন, তিনি এই জামিনের আবেদনের বিষয়ে সহমত পোষণ করছেন না। এজলাসেই তুমুল বাদানুবাদে জড়িয়ে পড়েন বিচারপতি কারনান।
১৩ ফেব্রুয়ারি সুপ্রিম কোর্টে হাজিরা দিতে হবে কলকাতা হাইকোর্টের অভিযুক্ত বিচারপতিকে। ছবি: সংগৃহীত।
তার আগে, ২০১৫ সালে মাদ্রাজ হাইকোর্টের প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি সঞ্জয় কলের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার রুল জারির হুমকি দিয়ে বিতর্কে ইন্ধন দেন বিচারপতি কারনান। বিচারপতি কল তাঁর কাজে হস্তক্ষেপ করছেন বলেও অভিযোগ তোলেন তিনি। আবার ওই হাইকোর্টেরই অন্য এক বিচারপতির শিক্ষাগত যোগ্যতা যাচাইয়ে সিবিআই তদন্ত চেয়েছিলেন কারনান। ২০১৪ সালে হাইকোর্টে বিচারপতি নিয়োগ সংক্রান্ত এক জনস্বার্থ মামলায় বিচারপতি কারনান মন্তব্য করেন, নিয়োগে কোনও রকম স্বচ্ছতা ছিল না। এখানেই শেষ নয়, মাদ্রাজ হাইকোর্টের অন্য বিচারপতিরা তাঁর মতো দলিত সম্প্রদায়ভুক্ত বিচারপতিদের হেনস্থা করছেন বলেও অভিযোগ করেন কারনান।
আরও পড়ুন: বাড়ির মধ্যেই ধাক্কা দেওয়া হয়েছিল জয়াকে: বিস্ফোরক অভিযোগে সরগরম চেন্নাই
সুপ্রিম কোর্ট সূত্রের খবর, গত বছর বিচারপতি কারনানকে মাদ্রাজ হাইকোর্ট থেকে কলকাতা হাইকোর্টে বদলি করা হয়। শীর্ষ আদালতের প্রাক্তন বিচারপতি তীর্থ সিংহ ঠাকুরের নেতৃত্বাধীন পাঁচ বিচারপতির একটি কমিটি ওই বদলির নির্দেশ দেয়। মাদ্রাজ হাইকোর্টে বসেই সেই নির্দেশের উপরে স্থগিতাদেশ জারি করে বসেন বিচারপতি কারনান! একই সঙ্গে সু্প্রিম কোর্টের তৎকালীন প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে নোটিস জারি করে বলেন, কী কারণে বদলি, তা জানাতে হবে। পরে অবশ্য সেই বদলির নির্দেশ কার্যকর হয়। মে মাসে কলকাতা হাইকোর্টে যোগ দেন তিনি।