প্রতীকী ছবি।
বঙ্গের নানা প্রান্তে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে রয়েছে বালি আর ওভারলোডিং। আনলক পর্বে তা আবার মাথাচাড়া দিয়েছে। আর ঝাড়গ্রামের ভূমিকা চিন্তা বাড়িয়েছে প্রশাসনের।
কেন? ঝাড়গ্রামে নানা ‘প্রভাবশালী’দের সন্তুষ্ট করতে অনেক বালি ব্যবসায়ী গাড়ি পিছু কয়েকশো টাকা খরচ করছেন বলে অভিযোগ। আর তা করে অতিরিক্ত ওজনের বালি ভর্তি গাড়ি দেদার ছুটছে। তেমনই অভিযোগ প্রশাসনের শীর্ষস্তরে পৌঁছছে। গ্রামীণ রাস্তায় ওভারলোডিং গাড়ির অবাধ বিচরণ রোধে পুলিশ কমিশনার, পুলিশ সুপার এবং থানার দায়িত্বপ্রাপ্তদের করণীয় স্থির করে দিয়ে কয়েক দিন আগে নির্দেশিকাও পাঠাতে হয়েছে রাজ্যের এডিজি (ট্র্যাফিক ও রাস্তা সুরক্ষা) বিবেক সহায়কে।
ওভারলোডিংয়ে নজরদারি করতে ৬ নম্বর জাতীয় সড়কে আঞ্চলিক পরিবহণ আধিকারিকদের (আরটিও) চেকপোস্ট রয়েছে। ঝাড়গ্রামের রন্টুয়া ও গোপীবল্লভপুর থেকে আসা অতিরিক্ত বালিবোঝাই গাড়ি ওই চেকপোস্ট এড়াতে জামবনিকে ব্যবহার করছে। আর জামবনি এলাকা দিয়ে যাওয়ার জন্য প্রতিটি গাড়িকে পাঁচশো টাকা গুণতে হচ্ছে। ওই এলাকায় একদা নিয়মিত তল্লাশি চালাত সংশ্লিষ্ট দফতর। কয়েক সপ্তাহ সেই তল্লাশি আর চোখে পড়ছে না বলে জানাচ্ছেন স্থানীয়রা। লোধাশুলি এলাকায় স্থানীয় রাজনৈতিক দলের কয়েকজন প্রতিনিধি বালি খাদানের ব্যবসায়ীদের অনেকের কাছে এক লপ্তে লক্ষাধিক টাকা নিয়েছে বলে অভিযোগ পৌঁছেছে প্রশাসনে।
ঝাড়গ্রাম এলাকার জন্য ওভারলোডিং ‘রেট’ কমে তিনশো টাকা দাঁড়াচ্ছে। তবে বেলিয়াবেড়া থানা এবং গোপীবল্লভপুর-২'র ভূমি ও ভূমি রাজস্ব দফতরের তৎপরতায় আপাতত ওই রাস্তা ব্যবহারে আর স্বচ্ছন্দ নন ওভারলোডিংয়ের কারবারিরা। সে কারণে এখন গোপীবল্লভপুরের অন্য অংশ এবং নয়াগ্রামে দশ চাকার গাড়ির জন্য পাঁচশো এবং ছ’চাকার তিনশো টাকা গুনতে হচ্ছে বলে অভিযোগ। এ ছাড়াও ঝাড়খণ্ড এবং ওড়িশার বিরসা চক এবং গোপীবল্লভপুরের সসরার দিকে প্রতিদিন তিনশো-চারশো বাড়তি বালিবোঝাই গাড়ি যাতায়াত করে। প্রত্যেক গাড়িকে ওভারলোডিংয়ের মাত্রা অনুসারে পাঁচশো থেকে এক হাজার টাকা খরচ করতে হয়। লালগড় এলাকায় ওভারলোডিংয়ের ‘রেট’ গাড়ি পিছু তিনশো টাকা।
কিছু দিন আগে ওভারলোডিংয়ের বন্ধের দাবিতে রাস্তায় নামেন আসুই এলাকায় বাসিন্দারা। তাঁরা হাতিবাড়ি-জামসালা রাস্তা অবরোধ করেন। প্রায় চল্লিশ-পঞ্চাশটি গাড়িও আটক করেন। তারপরে ওই রাস্তায় অতিরিক্ত বালি বোঝাই গাড়ি ছোটা অনেকটা বন্ধ হয়েছে বলে স্থানীয়দের দাবি। সেক্ষেত্রে গোপীবল্লভপুরের থানার ভূমিকা যথার্থ ছিল বলে মত অনেকের।
অভিযোগ, সাঁকরাইলের রোহিনীর দিকে ওভারলোডিংয়ের রেট গাড়িপিছু দু’শো টাকা। একই ভাবে মানিকপাড়ার দিকেও ওভারলোডিংয়ের রেট গাড়ি পিছু দু’শো টাকা। ওভারলোডিং বন্ধে জেলার বিভিন্ন প্রান্তে পুলিশের ভূমিকা সন্তোষজনক। তবে দু-একটি পুলিশ ফাঁড়ি এবং থানার ভূমিকা প্রশ্নবিহীন নয়। অভিযোগ, কখনও কখনও ওভারলোডিংকে প্রশয় দিচ্ছে ওই ফাঁড়ি বা থানা। মূলত সুবৰ্ণরেখা এবং কংসাবতী নদীই অরণ্য জেলার বালির মূল ভিত্তি। প্রশাসনের আধিকারিকদের অনেকের দাবি, ‘‘ওভারলোডিং বন্ধে প্রশাসন সক্রিয় রয়েছে। প্রয়োজন অনুযায়ী পদক্ষেপ করা হবে।’’