তৃণমূল প্রার্থী সওকত মোল্লা। —নিজস্ব চিত্র।
আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে এ বার ক্যানিং পূর্ব বিধানসভা কেন্দ্রে তৃণমূলের টিকিটে লড়ছেন সওকত মোল্লা। তিনি প্রার্থী হওয়ায় এক দিকে যেমন ক্ষোভ তৈরি হয়েছে এলাকার পুরনো তৃণমূল কর্মীদের মধ্যে, তেমনি ক্ষোভ রয়েছে সাধারণ ভোটারদের একাংশেরও। ওই এলাকার এক সময়ের পুরনো তৃণমূল কর্মীদের মধ্যে অনেকেই এখনও ঘর ছাড়া বলে অভিযোগ।
সওকত এক সময়ে ছিলেন সিপিএমের প্রাক্তন ভূমি ও ভূমি সংস্কার মন্ত্রী তথা ক্যানিং পূর্বের বিদায়ী বিধায়ক রেজ্জাক মোল্লার ‘ডান হাত।’ গত বিধানসভা ভোটে রাজ্যে পালা বদল হয়ে ক্ষমতায় আসে তৃণমূল। এই পরিস্থিতিতে দল বদলে ফেলতে মনস্থ করেন তৎকালীন ক্যানিং-২ সমিতির সভাপতি সওকত। তৃণমূলের ব্লক সভাপতি মানিক পাইকের সঙ্গে গোপনে যোগাযোগ শুরু করেন তিনি। এই খবর জানাজানি হতেই রেজ্জাকের সঙ্গে তাঁর সম্পর্কের চিড় ধরে। সিপিএম বহিষ্কার করে সওকতকে।
এরপরে সওকত মানিক পাইকের হাত ধরে সদলবলে তৃণমূলে যোগ দেন। ২০১২ সালের ৩০ মার্চ গভীর রাতে নাগরতলার বাড়িতে দুষ্কৃতীদের গুলিতে খুন হন মানিক পাইক। তাঁকে খুনের ঘটনায় নাম জড়িয়ে যায় ওই এলাকার পুরনো তৃণমূল কর্মী হাসান মোল্লা, আশরাফ মোল্লা-সহ অনেকের। তৃণমূলের নতুন ব্লক সভাপতি হন সওকত।
কালক্রমে নিজের প্রভাব বিস্তার করতে নিজের অনুগামীদের দলের বিভিন্ন পদে বসান। ব্রাত্য থেকে যান ওই এলাকার পুরনো তৃণমূল কর্মীরা। সওকতের বিরুদ্ধে অভিযোগ, এক দিকে তিনি যেমন এলাকাকে বিরোধীশূন্য করে ছেড়েছেন, তেমনই তৃণমূলের পুরনো কর্মীদেরও তাঁর বিরুদ্ধাচারণের মাসুল গুনতে হয়েছে। অনেককে এলাকা ছাড়া হতে হয়েছে, অনেকে নানা মামলায় ফেঁসে গিয়েছেন। যার অধিকাংশই মিথ্যা মামলা বলে দাবি ওই সব কর্মীর।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, ‘‘আগে সিপিএমের আমলে এই এলাকায় মানুষ রেজ্জাক মোল্লা, সওকত মোল্লার অত্যাচারে অতিষ্ঠ ছিল। রাজ্যে সিপিএম গিয়ে তৃণমূল ক্ষমতায় এলেও দল বদলের খেলায় সেই একই মুখ ক্ষমতার রয়ে গিয়েছে। অবস্থার কোনও পরিবর্তন হয়নি। এক সময়ে যে রেজ্জাক মোল্লা, সওকত মোল্লারা যৌথ ভাবে তৎকালীন রাজ্যের বিরোধী দলনেত্রী তথা রাজ্যের বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপরে জীবনতলায় হামলা চালিয়েছিল, আজ সেই রেজ্জাক, সওকতরাই তৃণমূলের প্রার্থী।
ক্যানিং ২ ব্লক তৃণমূলের প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদক হাসান মোল্লা বলেন, ‘‘আমরা যাঁরা তৃণমূলকে ভালবেসে দলটা করতাম, আজ সেই আমরাই এলাকা ছাড়া। মিথ্যা খুনের মামলায় আমাদের নাম জড়িয়ে দিয়ে ফাঁসানো হয়েছে। শুধু তাই নয়, যাঁরাই সওকতের বিরুদ্ধাচারণ করেছেন, তাঁদেরই হয় মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো হয়েছে, নয় তো এলাকা ছাড়া করা হয়েছে। ওদের অত্যাচারে এলাকার শ’খানেক পুরনো তৃণমূল কর্মী এখনও এলাকা ছাড়া। দল যদি সঠিক মূল্যায়ন করত, তা হলে হয় তো এমনটা হতো না। আমরা এখনও দলের প্রতি আস্থাশীল। দল আমাদের প্রতি সুবিচার করবে।’’
কী বলছেন সওকত নিজে?
তাঁর দাবি, ‘‘কেউ এলাকা ছাড়া নেই। যারা এ সব বলছে, তারা নিজেরাই খুনের আসামী। সে কারণে এলাকায় আসতে পারছে না। ক্যানিং পূর্বের মানুষ যেহেতু সিপিএমকে প্রত্যাখ্যান করেছে, তাই অনেকে আমাদের নামে মিথ্যা বদনাম দিচ্ছে। আমরা মানুষের পাশে থেকে ক্যানিং-২ ব্লক এলাকায় যে উন্নয়ন করছি মানুষই তার যোগ্য জবাব দেবে।’’
মহকূমাশাসক প্রদীপ আচার্য বলেন, ‘‘ক্যানিং ২ ব্লক এলাকার কোনও মানুষ যে ঘর ছাড়া আছে, তা কেউ লিখিত বা মৌখিক ভাবেও অভিযোগে জানায়নি। তবু আমি বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখে পুলিশকে বলব, যথাযথ ব্যবস্থা নিতে।’’