তোলাবাজির অভিযোগে গ্রেফতার সল্টলেকের তৃণমূল কাউন্সিলর

বিধাননগর পৌর নিগমের তৃণমূল কাউন্সিলর অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায়কে গ্রেফতার করল পুলিশ। স্থানীয় বাসিন্দার কাছ থেকে মোটা অঙ্কের তোলা চাওয়ার অভিযোগে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বিধাননগর আদালত অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায়কে ১৪ দিনের জন্য বিচারবিভাগীয় হেফাজতে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১২ জুলাই ২০১৬ ১২:৪২
Share:

দীর্ঘ দিন ধরেই নানা অভিযোগ জমা পড়ছিল এই অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে। —ফাইল চিত্র।

বিধাননগর পৌর নিগমের তৃণমূল কাউন্সিলর অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায়কে গ্রেফতার করল পুলিশ। স্থানীয় বাসিন্দার কাছ থেকে মোটা অঙ্কের তোলা চাওয়ার অভিযোগে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সল্টলেকের বিডি ব্লকের বাসিন্দা সন্তোষকুমার লোধের অভিযোগের ভিত্তিতে তৃণমূল কাউন্সিলরের এই গ্রেফতারি। বিধাননগর আদালত অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায়কে ১৪ দিনের জন্য বিচারবিভাগীয় হেফাজতে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছে।

Advertisement

বিধাননগর উত্তর থানার পুলিশ মঙ্গলবার সকালে প্রথমে অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায়কে তাঁর বাড়ি থেকে আটক করে। থানায় নিয়ে গিয়ে শুরু হয় জিজ্ঞাসাবাদ। দুপুরের দিকে পুলিশ জানিয়ে দেয় কাউন্সিলরকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে বিডি ব্লকের একটি বাড়ির রক্ষণাবেক্ষণ ও সম্প্রসারণের কাজে বাধা দিয়ে তোলা চাওয়ার অভিযোগ রয়েছে।

অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায় যে ওয়ার্ডের কাউন্সিলর, বিডি ব্লক সেই ৪১ নম্বর ওয়ার্ডের মধ্যেই পড়ে। ওই ব্লকের বাসিন্দা সন্তোষকুমার লোধ কিছু দিন আগে নিজের বাড়িটির সম্প্রসারণ ও রক্ষণাবেক্ষণের কাজ শুরু করেছিলেন। সন্তোষবাবু পুলিশকে জানিয়েছেন, নির্মাণ কাজ শুরু হওয়ার পর অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায় এক দিন দলবল নিয়ে তাঁর বাড়িতে চড়াও হন। নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দিতে বলেন। নির্মাণ সামগ্রীও নষ্ট করে দেয় কাউন্সিলরের লোকজন। বাড়ির রক্ষণাবেক্ষণ এবং সম্প্রসারণের কাজ চালাতে হলে ১২ লক্ষ টাকা দিতে হবে বলে অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায় সন্তোষকুমাপ লোধকে জানিয়ে দেন। ওই টাকা না দিলে নির্মাণ কাজ করতে দেওয়া হবে না বলেও কাউন্সিলর হুমকি দিয়ে যান। অভিযোগ তেমনই। সন্তোষকুমার লোধ কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে এর পর বিধাননগর উত্তর থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। সন্তোষকুমার লোধ উত্তর কলকাতার তৃণমূল সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় এবং বিধাননগরের মেয়র সব্যসাচী দত্তকেও বিষয়টি জানান। তার পরই নড়েচড়ে বসে পুলিশ। আজ কাউন্সিলরকে গ্রেফতার করা হয়। মঙ্গলবার অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায়কে বিধাননগর মহকূমা আদালতে তোলা হয়। বিচারক তাঁকে ১৪ দিনের জন্য জেল হেফাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

Advertisement

অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে দীর্ঘ দিন ধরেই নানা অভিযোগ উঠছিল। এমনকী বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও এই কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে নালিশ করেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে। হাসিনার পরিচিত এক ব্যক্তি সল্টলেকে নিজের বাড়ি সম্প্রসারণ করতে চেয়েছিলেন। তাঁকেও অনিন্দ্য নানা ভাবে অতিষ্ঠ করে তুলেছিলেন বলে অভিযোগ। বিষয়টি তিনি হাসিনাকে জানান। হাসিনা পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীকে জানান, অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায় নামে এক কাউন্সিলর সল্টলেকে কী ভাবে তোলাবাজি চালাচ্ছেন। হাসিনার অভিযোগ পেয়ে অনিন্দ্যর উপর প্রবল বিরক্ত হয়েছিলেন মমতা। তবে অনিন্দ্যর অপরাধমূলক কার্যকলাপের শেষ সেখানেই নয়। বিধাননগরের পুর নির্বাচনে ভোট দিতে আসার ‘অপরাধে’ প্রবীণ ভোটারকে রাস্তায় ফেলে মারধর করেছিল এই কাউন্সিলরেরই লোকজন। অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে যিনি নির্দল প্রার্থী ছিলেন, ভোটগ্রহণের দিন সেই অনুপম দত্তকেও মেরে হাত ভেঙে দেওয়া হয়েছিল।

আরও পড়ুন: এমএনএস নেতার বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ বলিউড অভিনেত্রীর

অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে ছ’টি ধারায় মামলা রুজু করেছে বিধাননগর পুলিশ। তার মধ্যে তিনটি ধারা জামিন অযোগ্য।

বিধানসভা নির্বাচনের আগে থেকেই তোলাবাজি এবং সিন্ডিকেট রাজের বিরুদ্ধে বার্তা দিতে শুরু করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নির্বাচনে দ্বিতীয়বার জিতে ক্ষমতা ধরে রাখার পর আরও স্পষ্ট করে তিনি বলে দেন, কঠোর হাতে রাশ টানা হবে সিন্ডিকেট আর তোলাবাজিতে। মুখ্যমন্ত্রী তথা দলনেত্রীর সেই বার্তাও অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায়দের মতো অনেকে মানছেন না। অভিযোগ অন্তত তাই বলছে। কিন্তু এই রকম ক্ষেত্রে পুলিশ-প্রশাসন যে আর ছেড়ে কথা বলবে না, তা বিধাননগরের পুলিশ এ বার বুঝিয়ে দিল।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement