Education

১২ বছর ধরে বন্ধ অঙ্কের ক্লাস, স্কুল বলছে শিক্ষিকা অবসর নিয়েছেন!

শালডিহা গার্লস হাইস্কুলে কখনও অঙ্ক শেখান ভূগোলের শিক্ষিকা। কখনও সে কাজের দায়িত্ব পান চতুর্থ শ্রেণির কর্মী। শিক্ষিকার অভাবে অঙ্ক শিখতে প্রাইভেট টিউশন নিতে হয় নবম ও দশম শ্রেণির পড়ুয়াদের।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বাঁকুড়া শেষ আপডেট: ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ২১:২১
Share:

নানা কারণেই পুরনো গরিমা হারিয়েছে শালডিহা গার্লস হাইস্কুল। —নিজস্ব চিত্র।

এক দশকেরও বেশি সময় ধরে স্কুলে অঙ্কের ক্লাস হয় না। কখনও অঙ্ক কষানো শেখান ভূগোলের শিক্ষিকা। কখনও আবার সে কাজের দায়িত্ব পান চতুর্থ শ্রেণির কর্মী। শিক্ষিকার অভাবে অঙ্ক শিখতে প্রাইভেট টিউশন নিতে হয় নবম ও দশম শ্রেণির পড়ুয়াদের। স্কুল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, ১২ বছর আগে অবসর নিয়েছেন অঙ্কের শিক্ষিকা।

Advertisement

পঠনপাঠনের এ হেন বেহাল দশার জেরেই শালডিহা গার্লস হাইস্কুলে ছাত্রীদের সংখ্যা হু হু করে কমছে বলে দাবি। এ বিষয়টি জেলা স্কুল পরিদর্শককে জানিয়েও সুরাহা হয়নি বলে দাবি করেছেন স্কুল কর্তৃপক্ষ। যদিও ওই আধিকারিকের পাল্টা দাবি, রাজ্যে উচ্চ প্রাথমিকের শূন্যপদে নিয়োগ হলেও এর সমাধান হবে।

শালডিহার ওই স্কুলে বছর ছয়েক ধরে শূন্য পদার্থ বিজ্ঞানের শিক্ষকের পদও। ফলে বছরের পর বছর ধরে এই দু’টি বিষয়ের পঠনপাঠন বন্ধ। অথচ এককালে জেলার নামী স্কুলগুলির মধ্যে স্থান ছিল পঞ্চাশ বছরেরও বেশি পুরনো এই মেয়েদের স্কুলে। শিক্ষার উচ্চমানের জন্যই এই স্কুলে সন্তানদের ভর্তি করাতে মুখিয়ে থাকতেন অভিভাবকেরা। চলতি শতকের গোড়ায় স্কুলে ছাত্রীর সংখ্যা ছিল সাড়ে সাতশোর বেশি। স্কুলের নিজস্ব হস্টেলে আবাসিক হিসাবে থেকে পড়াশোনা চালাত আড়াইশোর বেশি তফসিলি ও আদিবাসী পড়ুয়া। কিন্তু নানা কারণেই সে গরিমা হারিয়েছে এ স্কুল। ২০১১ সালে স্কুলের একমাত্র অঙ্ক শিক্ষিকা অবসর নেন। বার বার আবেদন সত্ত্বেও সে পদে নতুন শিক্ষিকা না মেলায় এক সময় নবম ও দশম শ্রেণির অঙ্ক ক্লাস একপ্রকার বন্ধ করে দিতে বাধ্য হন স্কুল কর্তৃপক্ষ। ২০১১ সালের আগেই বন্ধ হয়েছিল হস্টেলও।

Advertisement

সবচেয়ে বেহাল দশা বোধহয় নবম ও দশম শ্রেণির ছাত্রীদের। দশম শ্রেণির ছাত্রী দোয়েল পণ্ডার দাবি, ‘‘আমাদের স্কুলের নবম-দশম শ্রেণির রুটিনে অষ্টম ক্লাস হিসাবে অঙ্ক লেখা থাকলেও আসলে শিক্ষিকার অভাবে কোনও দিনই সে ক্লাস হয় না। আমরা অঙ্ক শিখি প্রাইভেট টিউশনিতে।’’ আর্থিক কারণে অঙ্কের টিউশনে যেতে পারে না দশম শ্রেণির আর এক ছাত্রী পূজা বাউরি। তার কথায়, “মাঝেমধ্যে দু’একটা অঙ্ক দেখিয়ে দেয় দাদা। নবম ও দশম শ্রেণিতে আমার অঙ্ক বিষয়ে প্রাপ্তি সেটুকুই। আর কিছু দিন পরেই আমাদের মাধ্যমিক পরীক্ষা। কী ভাবে যে অঙ্ক পরীক্ষা দেব, জানি না।’’

এলাকার বাসিন্দা অনিল দাসের মেয়ে এ স্কুলের পড়ুয়া। তাঁর দাবি, “অর্থনৈতিক দিক থেকে তেমন উন্নত নয় আমাদের এলাকা। কয়েকটি পরিবারে স্কুলের পড়াশোনা করছে প্রথম প্রজন্মের পড়ুয়া। তাদের কাছে স্কুলের পঠনপাঠনের গুরুত্ব যথেষ্ট। কিন্তু সেখানেই খামতি। অঙ্ক এবং পদার্থ বিজ্ঞানের মতো দু’টি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের শিক্ষিকাই নেই। এলাকার মানুষজন এ স্কুলে মেয়েদের পাঠাতে ভরসা পাচ্ছেন না।”

খামতির কথা স্বীকার করেছেন স্কুল কর্তৃপক্ষও। স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা ইতিরানি দে বলেন, ‘‘এক সময় এ স্কুলে ৭৫০ জন ছাত্রী পড়াশোনা করলেও এখন তা এক তৃতীয়াংশে ঠেকেছে। দু’টি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের শিক্ষিকা না থাকাটাই এর মূল কারণ। জেলা স্কুল পরিদর্শকের দফতরে এই সমস্যার কথা বার বার জানিয়েছি আমরা। কিন্তু লাভ হয়নি। এ পরিস্থিতিতে কোনও রকমে জোড়াতালি দিয়ে স্কুল চালালেও পঠনপাঠনের ক্ষেত্রে ছাত্রীদের বড়সড় খামতি থেকে যাচ্ছে।” তবে বাঁকুড়া জেলা স্কুল পরিদর্শক পীযূষকান্তি বেরা আশ্বাস দিয়ে বলেন, ‘‘ওই স্কুলে দু’টি শূন্যপদে শিক্ষক দেওয়ার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। রাজ্যে উচ্চ প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ হলেই ওই দু’টি শূন্যপদে শিক্ষিকা দেওয়া সম্ভব হবে।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement