সাহায্যের হাত: মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের গাড়িতে হাতি-করিডর এলাকা পার করিয়ে দিচ্ছেন বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্পের বনকর্মীরা। শুক্রবার। ছবি: নারায়ণ দে।
জলপাইগুড়ির বৈকুণ্ঠপুরে জঙ্গল-পথে হাতির হামলায় মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীর মৃত্যুর ঘটনার প্রেক্ষিতে বন বিভাগকে বাড়তি সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য শুক্রবার নির্দেশ দিল নবান্ন।
শুধু ওই বৈকুণ্ঠপুর নয়, উত্তর ও দক্ষিণবঙ্গ মিলিয়ে গোটা রাজ্যেরই জঙ্গল এলাকায় এই নির্দেশ অনুযায়ী পদক্ষেপ করতে বলা হয়েছে। একই সঙ্গে ওই সব এলাকার পরীক্ষার্থীদের নির্বিঘ্নে পরীক্ষা কেন্দ্রে যাতায়াতের বিশেষ বন্দোবস্তেরও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সেই নির্দেশ মেনে এ দিনই জলপাইগুড়ির রাজগঞ্জে বৈকুণ্ঠপুরের জঙ্গল-পথ ‘সিল’ করে দেওয়া হয়েছে। ওই অঞ্চলের পরীক্ষার্থীদের যাতায়াতের জন্য গাড়ির ব্যবস্থা করেছে জেলা প্রশাসন ও বন বিভাগ।
প্রশাসন সূত্রের খবর, বৃহস্পতিবারের ঘটনার পরে এ দিনও ওই এলাকায় হাতি ঘোরাফেরা করতে দেখা গিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে এ দিন ওই এলাকার মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের জন্য বাসের ব্যবস্থা করেছিল বন দফতর। জলপাইগুড়ি প্রশাসন জানিয়েছে, যে ক’দিন পরীক্ষা চলবে, পরীক্ষার্থীদের বন দফতরের বাসে আনা-নেওয়া করা হবে।
জলপাইগুড়ি, আলিপুরদুয়ার, কোচবিহার কিংবা দার্জিলিং জেলার পাশাপাশি দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন জেলার বন বিভাগকে বিশেষ সতর্ক থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ দিন রাজ্যের সব জঙ্গল এলাকাতেই মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের বিশেষ বাসে বাড়ি থেকে পরীক্ষা কেন্দ্র পর্যন্ত পুলিশি প্রহরায় পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করেছে বন দফতর।
দফতর সূত্রে খবর, পরীক্ষার্থীদের সুরক্ষায় এ দিন রাজ্য জুড়ে সমস্ত জঙ্গল-প্রধান এলাকায় এগারোশোরও বেশি নিরাপত্তারক্ষী মোতায়েন করা হয়েছে। জঙ্গলে প্রবেশ রুখতে ১৮৪টি ‘ড্রপ-গেট’ বসেছে। পরীক্ষার্থীদের যাতায়াতের জন্য সংশ্লিষ্ট এলাকায় ২০১টি বাস চালানো হয়েছে। সকাল থেকে রাজ্যের জঙ্গল-লাগোয়া মোট ৭৬৬টি গ্রামে সতর্কতামূলক প্রচার করা হয়েছে মাইকে। সব মিলিয়ে সাড়ে চার হাজারেরও বেশি পরীক্ষার্থীর নিরাপত্তায় এই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে দফতরের দাবি। দফতরের সিদ্ধান্ত, উচ্চমাধ্যমিক ও দিল্লি বোর্ডের পরীক্ষা চলাকালীনও এ ভাবেই পরীক্ষার্থীদের পরীক্ষা কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হবে।
এ দিন সকালে জলপাইগুড়ির সেই দুর্ঘটনার এলাকাতেই ফের হাতি বেরিয়ে আসে। এলাকার লোকজনের দাবি, এটি আগের দিনের সেই হাতিটিই। বাসিন্দাদের দাবি, শূন্যে গুলি ছুড়ে হাতিটিকে লোকালয় থেকে সরানো হয়। আতঙ্কে এলাকা এ দিনও ছিল থমথমে।
বৈকুণ্ঠপুরে ওই মৃত ছাত্রের গ্রাম-লাগোয়া জঙ্গলের রাস্তা বন্ধ করে দেওয়ায় ক্ষুব্ধ এলাকার বাসিন্দারা। তাঁদের প্রশ্ন, কোথাও বাঘ বেরোলে কি সকলে খাঁচায় ঢুকে যায়, না কি বাঘটাকে বন্দি করার চেষ্টা করে? বৈকুণ্ঠপুরের বিভাগীয় বনাধিকারিক হরি কৃষ্ণণ বলেন, “বাসিন্দারা না চাইলেও সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে। ওখানে হাতি রয়েছে। তাই আপাতত কয়েক দিন রাস্তা বন্ধ থাকবে।”
মৃত পরীক্ষার্থীর বাড়িতে গিয়ে জলপাইগুড়ির জেলাশাসক মৌমিতা গোদারা বসু এবং রাজগঞ্জের বিধায়ক খগেশ্বর রায় এ দিন রাজ্য সরকারের ক্ষতিপূরণের ৫ লক্ষ টাকার চেক তুলে দেন বাবা বিষ্ণু দাসের হাতে।