তিন নাম নিয়ে জল্পনা। —গ্রাফিক শৌভিক দেবনাথ।
বুধবার হুগলি জেলা পরিষদের বোর্ড গঠন। তার আগের দিন জেলা তৃণমূলের বিভিন্ন গোষ্ঠীর মধ্যে উৎকণ্ঠার চোরাস্রোত বয়ে যাচ্ছে। কে হবেন জেলা সভাধিপতি? স্বাধীনতা দিবসে দিনভর এটাই আলোচ্য হয়ে উঠেছে হুগলির তৃণমূল নেতাদের। কারণ, বোর্ড গঠনের আগের দিন আচমকাই উঠে আসা ‘তৃতীয়’ নাম নিয়ে আন্দোলিত জেলা তৃণমূলের নেতারা।
ভোটের পর থেকেই জেলা পরিষদের সভাধিপতি হওয়ার দৌড়ে দু’টি নাম ভাসছিল। তাঁরা দু’জনেই প্রাক্তন বিধায়ক। এক জন গোঘাটের প্রাক্তন বিধায়ক মানস মজুমদার। অন্য জন বলাগড়ের প্রাক্তন বিধায়ক অসীম মাঝি। এই দু’জনের গোষ্ঠীর টানাপড়েনের মধ্যেই হঠাৎ করে তৃতীয় নাম নিয়ে জল্পনা দানা বেঁধেছে। তিনি পোলবা-দাদপুর ব্লক থেকে জেতা রঞ্জন ধাড়া। তৃণমূল সূত্রে খবর, প্রাক্তন মন্ত্রী তথা সপ্তগ্রামের বিধায়ক তপন দাশগুপ্ত দলের শীর্ষ নেতৃত্বকে সুপারিশ করেছেন, গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব এড়াতে রঞ্জনকে জেলা সভাধিপতি করা হোক। যদিও তপন প্রকাশ্যে সে কথা স্বীকার করছেন না। তাঁর কথায়, ‘‘আমি কোনও নাম সুপারিশ করিনি। আমি বলেছি, যা করার দিদিই করবেন।’’
শাসদকদল সূত্রে খবর, হুগলি-শ্রীরামপুর সাংগঠনিক জেলার সভাপতি তথা চাঁপদানির বিধায়ক অরিন্দম গুঁইরা চাইছেন মানসকে জেলা সভাধিপতি করতে। অরিন্দম অবশ্য বলেছেন, ‘‘কোনও নাম নিয়ে আমার বক্তব্য নেই। আমি চাইব দল এমন কাউকে দায়িত্ব দেবে, যিনি ভাল করে জেলা পরিষদ চালাতে পারবেন।’’
হুগলির তৃণমূলে গোষ্ঠী কোন্দল নতুন ঘটনা নয়। জেলার রাজনীতি সম্পর্কে অবহিত অনেকেই বলেন, নিজেদের মধ্যে বিবাদের কারণেই ২০১৯-এর লোকসভায় হুগলি আসন হারাতে হয়েছিল শাসকদলকে। তার পর অনেক রদবদল হয়েছে। ২০২১-এর ভোটের পর হগলিকে দু’টি সাংগঠনিক জেলায় ভেঙে দেন তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্ব। কিন্তু জেলা পরিষদের সভাধিপতির নাম নিয়ে পুরনো কোন্দল নতুন আঙ্গিকে দেখা যাচ্ছে বলেই মত অনেকের।
কোন জেলায় সভাধিপতি কে হবেন, তা ঠিক করছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। সমস্ত জেলার নেতাদের সে কথা আগেই বলে দেওয়া হয়েছে। তাঁরা নাম পাঠাতে পারেন। কিন্তু চূড়ান্ত করবেন দলের শীর্ষ নেতৃত্বই। বোর্ড গঠনের আগের দিন তাই তিন নাম নিয়ে টান টান উৎকণ্ঠা হুগলির তৃণমূলে। অনেকের বক্তব্য, মানসের সঙ্গে বলাগড়ের অসীমের দ্বন্দ্ব পুরনো। সেই প্রেক্ষাপটেই হয়তো তৃতীয় নাম নিয়ে এত জল্পনা শুরু হয়েছে। কেউ কেউ এমনও বলছেন, কে বলতে পারে দ্বন্দ্ব ঠেকাতে সর্বোচ্চ নেতৃত্ব তিন জনের বাইরে গিয়ে চতুর্থ নাম ভাববেন না? পুরোটাই স্পষ্ট হবে বুধবার দুপুরে।
হুগলিতে জেলা পরিষদের মোট আসন ৫৩। এর মধ্যে ৫১টিতেই জিতেছে তৃণমূল। বাকি দু’টি আসনে জয়ী হয়েছে বিজেপি।