Saayoni Ghosh

সায়নী-দেবলীনা, চ্যানেলে ভাষণ না মেরে গ্রাম বাংলায় ঘোরো

আমি আমার ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির বন্ধুদের একটাই কথা বলব। যে দলেই তাঁরা যান, সেটা তাঁদের গণতান্ত্রিক অধিকার! তবে একটু বুঝে শুনে কথা বলুন।

Advertisement

কাঞ্চনা মৈত্র

শেষ আপডেট: ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ২০:৫৬
Share:

সায়নী ঘোষ, দেবলীনা দত্ত এবং কাঞ্চনা মৈত্র।

আজ সকাল থেকে সব খবরের কাগজে রুদ্রনীলের বক্তব্য নিয়ে লেখা হয়েছে। রুদ্রনীল আমাদের ইন্ডাস্ট্রিতে মাফিয়ারাজের উল্লেখ করেছে। তাই নিয়ে চারিদিকে চর্চা। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে শিল্প, শিক্ষা, স্বাস্থ্য— সব ক্ষেত্রেই তো পচন ধরেছে। এটা বোঝার জন্য রাজনীতি করার প্রয়োজন নেই। সাধারণ মানুষ সব জানেন। দুঃখের বিষয় রাজনৈতিক সৌজন্যতাবোধে পশ্চিমবঙ্গ এক সময়ে এগিয়ে থাকলেও এখন রাজনৈতিক অসভ্যতা এবং কাদা ছোড়াছুড়িতে পশ্চিমবঙ্গ এগিয়ে গেল! কী দেখছেন মানুষ? পশ্চিমবঙ্গের মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী আমাদের দেশের প্রধানমন্ত্রীকে তুইতুকারি করছেন! আমার তৃণমূলের কর্মীদের জন্য দুঃখ হয়। ওঁদের নেত্রী কী ভাষায় কথা বলেন? ‘নাড্ডা, গাড্ডা, চাড্ডা...’ অথচ কোনও সভায় বলতে গেলে আজও আমার রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীকে আমি ‘মাননীয়া’ বলেই সম্বোধন করি। আমাদের দেশের প্রধানমন্ত্রী শুধু পার্টির নয়, দেশের প্রধানমন্ত্রী। অথচ প্রধানমন্ত্রী ওঁকে ‘বহেন’ বলে সম্বোধন করেন।

Advertisement

বেশ কয়েক দিন আগে দেখলাম, সায়নী (ঘোষ) আর দেবলীনা (দত্ত)-কে নেটমাধ্যমে গণধর্ষণ আর খুনের হমকি দেওয়া হল। রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে নয়, একজন মেয়ে হিসেবে বলব, এটা অন্যায়। তৃণমূলের লোকজন আমায় ‘চাড্ডি’ বলেন। তো কী করব? তার জন্য আমি দেহরক্ষী রাখিনি। হুমকি, ধমকি নিয়েই তো আছি। পুলিশ বলেছিল, সব নাকি আমার নাটক। উনি যেখানে আমাকে দেখবেন, মারবেন। বিজেপি-তে যোগ দেওয়ার পরে, আমাকে যা নয় তাই শুনতে হয়েছে। আমি টাকা নিয়ে বিক্রি হয়ে গিয়েছি! যদি টাকা নিয়ে কাজ করতে হত, তা হলে রাস্তায় নেমে পুলিশের মার সহ্য করতে হত না। সেন্ট্রাল অ্যাভেনিউয়ে মৌন মিছিলে পুলিশ মারতে মারতে আমার শাড়ি-ব্লাউজ খুলে দিয়েছিল। এটাই তো পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতি। পুলিশ তার কাজ করেছে। আমি কিছু বলিনি। কেউ যদি কোনও দলের কাজের বা আদর্শের বিরুদ্ধে যেতে চান, যেতেই পারেন। কিন্তু শুধু মিডিয়ার প্যানেলে বসে বক্তব্য রাখলেই চলবে না। যদি কেউ সিস্টেমকে চ্যালেঞ্জ করেন, তাঁর একা লড়াইটা চালিয়ে যাওয়ার সাহস থাকা উচিত। লড়াইয়ে দেহরক্ষী রাখলে, লড়াইটা জোলো হয়ে যায়।

আর গরু, শুয়োর নিয়ে কেন এত কাদা ছোড়া? আমার মা প্রত্যেক বৃহস্পতিবার লক্ষ্মীপুজো করে নিরামিষ খেতেন। আমি তো ভাবতে পারি না, ওই বৃহস্পতিবারেই নিজের ধর্ম নিরপেক্ষতা প্রমাণ করার জন্য লক্ষ্মীর সামনে মাকে দেখিয়ে দেখিয়ে মুরগির ঠ্যাং চিবিয়ে খাব। কারও ধর্মীয় ভাবাবেগে আঘাত করা উচিত নয়। হিন্দু ধর্ম শেখায়, অন্যের ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে। সেখানে আমরা কী করছি? অন্য ধর্মকে তোষণ করছি। শ্রদ্ধা আর তোষণ এক নয়। সংখ্যালঘুদের জন্য যাঁরা মাথা ফাটাচ্ছেন, তাঁরা কী কাজ করেছেন? মুসলিম মহিলাদের শিক্ষার হার কেন এত কম? তাঁরা চাকরির ক্ষেত্রেও পিছিয়ে। প্রতিবাদ যদি করতে হয়, এই বিষয় নিয়ে করতে হবে। গরুর মাংস আর শুয়োরের মাংস নিয়ে প্রতিবাদ মূল্যহীন। যাঁরা করছেন, তাঁরা ফায়দা লোটার চেষ্টা করছেন। এটা রাজনীতি নয়। আমি আমার সংখ্যালঘু বন্ধুদের সামনে তাড়িয়ে তাড়িয়ে শুয়োর খাব? না, খাবো না। খাদ্যাভাস নিয়ে রাজনীতি কেন?

Advertisement

“ আমাদের ইন্ডাস্ট্রিকে নিয়ে লোকজন হাসাহাসি করছে। মানুষের প্রতি সহানুভূতিশীল হন।”

সায়নী, দেবলীনা আমার বন্ধু, সহকর্মী। সায়নী শিবের মাথায় কন্ডোম পরাচ্ছেন, এই ছবি প্রকাশ হওয়ার পর শুনছি, উনি তৃণমূলে যোগ দিলেন। অথচ এই সায়নী নন্দনে বেশ কিছু দিন আগে বলেছিলেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় গলা টিপে বাক স্বাধীনতা বন্ধ করে দিচ্ছেন। সেখানে প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন। তা হলে যে রাজনৈতিক দলের বিরোধিতা করেছিলেন, সেই রাজনৈতিক দলের আঁচলের তলায় যেতে হল? এটাই সাহসিকতা?

আমি আমার ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির বন্ধুদের একটাই কথা বলব। যে দলেই তাঁরা যান, সেটা তাঁদের গণতান্ত্রিক অধিকার! তবে একটু বুঝে শুনে কথা বলুন। আমাদের ইন্ডাস্ট্রিকে নিয়ে লোকজন হাসাহাসি করছে। মানুষের প্রতি সহানুভূতিশীল হন। চ্যানেলের বক্তব্য দিয়ে পশ্চিমবঙ্গের মানুষকে বোঝা যাবে না। তার জন্য পুরুলিয়ায় গিয়ে মানুষের খাদ্যাভাব দেখুন, মুর্শিদাবাদে ধর্মীয় ভাবাবেগ নিয়ে মানুষের উদ্বেগ জানুন। মাঠে নামুন। কী খেয়েছেন, সেটা গুরুত্বপূর্ণ নয়।

আমার মনে হয় না, ওঁরা কেউ বাংলাকে চিনতে আগ্রহী।

(পরিচিতি

লেখক অভিনেত্রী, বিজেপির সদস্য

মতামত নিজস্ব)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement