পশ্চিমবঙ্গে ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে গেরুয়া বাক্সে ভোট বেড়েছিল। তার পর থেকেই এ রাজ্য সঙ্ঘ শিবিরের নিশানায়। উত্তরপ্রদেশে বিপুল সাফল্যের পর সেই নিশানা আরও ধারালো করতে চলেছে আরএসএস তথা বিজেপি।
উত্তরপ্রদেশের নতুন মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে ‘উগ্র হিন্দুত্বের প্রতীক’ যোগী আদিত্যনাথের নাম ঘোষণা হয়েছে শনিবার। তার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই আরএসএসের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ভাগাইয়া মুসলিম সন্ত্রাসবাদকে প্রশ্রয় দেওয়ার অভিযোগে কাঠগড়ায় তুললেন পশ্চিমবঙ্গের তৃণমূল সরকারকে। তিনি রবিবার আরও জানিয়ে দিয়েছেন, এ রাজ্যে ‘জেহাদি’ আক্রমণ ঠেকাতে কেন্দ্রীয় সরকারকে সক্রিয় হতে বলবেন তাঁরা। পাশাপাশিই, এ রাজ্যে যোগীকে এনে সংবর্ধনা দিয়ে হিন্দুত্বের জমি আরও ভাল করে চাষ করার কথা ভাবছে রাজ্য বিজেপি-ও।
কোয়ম্বত্তূরে এ দিন আরএসএসের অখিল ভারতীয় প্রতিনিধিসভার তিন দিনের বৈঠক শুরু হয়েছে। তারই ফাঁকে ভাগাইয়া অভিযোগ করেন, গত তিন বছর পশ্চিমবঙ্গে মুসলিম মৌলবাদীরা সন্ত্রাসমূলক কাজকর্ম চালাচ্ছে। জেহাদিরা সরস্বতী পুজোয় বাধা দিয়ে নবী দিবস পালনে বাধ্য করছে সাধারণ মানুষকে। থানা পুড়িয়ে দেওয়ার মতো অপরাধও করছে তারা। এতে জাতীয় নিরাপত্তা বিপন্ন হচ্ছে। অথচ তৃণমূল সরকার জেহাদিদেরই প্রশ্রয় দিচ্ছে। ভাগাইয়ার বক্তব্য, ‘‘তৃণমূল সরকারের সংখ্যালঘু তোষণ নিয়ে আমাদের বৈঠকে আলোচনা হবে। সেখানে গৃহীত সিদ্ধান্ত কেন্দ্রকে পাঠিয়ে দেওয়া হবে। যাতে তারা ওই রাজ্যে জেহাদি আক্রমণ ঠেকাতে ব্যবস্থা নেয় এবং রাজ্য সরকারকেও চাপ দেয়।’’
আরও পড়ুন: লোকসভা ভোটের আগে সুর চড়বে হিন্দুত্বের, মোদীর স্পষ্ট অঙ্ক
রাজ্য বিজেপি সূত্রের খবর, উত্তরপ্রদেশ, উত্তরাখণ্ড, মণিপুর, গোয়া এবং অসম— এই পাঁচ বিজেপি-শাসিত রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীকে রাজ্যে এনে সংবর্ধনা দেওয়ার কথাও দলীয় নেতৃত্ব ভাবছেন। পাঁচ জনের মধ্যে অবশ্য উত্তরপ্রদেশের যোগীর ব্যাপারেই দলের একাংশের উৎসাহ বেশি। তারা মনে করছে, যোগীকে দেখিয়েই এ রাজ্যে হিন্দু ভোট দলের পালে টানা সহজ হবে।
রাজ্যের আকাশে গেরুয়া মেঘ ঘন হচ্ছে আঁচ করে মোকাবিলায় তৈরি বিরোধীরাও। তৃণমূলের মুখপাত্র মানস ভুঁইয়া ভাগাইয়ার অভিযোগের জবাবে বলেছেন, ‘‘উনি কেন এ কথা বলেছেন, জানি না! তবে এ রাজ্যে ধর্মনিরপেক্ষতা চোখের মণির মতো রক্ষিত হয় এবং হবে। এটা আমাদের গর্ব। আর এ রাজ্যে সরস্বতী পুজো হয় না, এ তো বিস্ময়ের কথা! বরং, সরস্বতী পুজোর দিন তো কেন্দ্রীয় সরকারই বাজেট পেশ করেছে!’’ সিপিএমের পলিটব্যুরো সদস্য মহম্মদ সেলিম বলেন, ‘‘আরএসএস এবং তৃণমূল, দু’পক্ষই দু’ধরনের সাম্প্রদায়িক শক্তিকে নিজেদের স্বার্থে মদত দিচ্ছে। তার ফলে পশ্চিমবঙ্গের পরিস্থিতি অন্য দিকে মোড় নিচ্ছে। রাস্তায় নেমে বিভাজনের রাজনীতি আমরাই রুখব। রাজ্যের মানুষকেও সতর্ক হতে হবে।’’