রোজ ভ্যালি কাণ্ডে রাজ্যের বামফ্রন্ট সরকারের বিরুদ্ধে বিরোধী কংগ্রেস আজ নতুন ‘অস্ত্র’ নিয়ে মাঠে নামল। আগরতলার উপকণ্ঠে আমতলিতে গড়ে ওঠা রোজ ভ্যালির বিনোদন পার্কটির অর্ধেকটাই সরকারি জমি ‘দখল’ করে গড়ে উঠেছে বলে অভিযোগ করলেন ত্রিপুরা প্রদেশ কংগ্রেস নেতৃত্ব। পার্কটি গড়ে উঠেছে ১০১ বিঘে জমির উপর। রাজ্যের বিরোধী দলনেতা সুদীপ রায়বর্মণ আজ সাংবাদিকদের সরকারি নথির ফটোকপি দিয়ে দাবি করেছেন, ‘‘পার্কের ১০১ বিঘে জমির মধ্যে ৫০ বিঘে জমি হল সরকারি খাস জমি।’’
রাজ্যের ‘ল্যান্ড রেকর্ডস অ্যান্ড সেটলমেন্ট’ বিভাগের নথি অনুযায়ী, পশ্চিম ত্রিপুরা জেলার সদর মহকুমার অন্তর্গত আমতলি এলাকার সূর্যমণিনগর তহশিলের মধুপুর মৌজার ১৬০৬, ১৬১২, ১৬১৫, ১৬১৬, ১৬২৬, ১৬২৮, ১৬৩০, ১৬৫১, ১৬৫৫, ১৬৫৬, ১৬৭২, ১৬৭৫, ১৬৭৬, ১৬৭৭, ১৬৩২, ১৬২৮ প্রভৃতি দাগ নম্বরের সমস্ত জমির মালিক ত্রিপুরা সরকার। অথচ এই দাগ নম্বরের জমি রোজ ভ্যালি পার্কের সীমানার মধ্যে রয়েছে। কংগ্রেসের দাবি, ‘‘নিজের সংগ্রহ করা ছাড়াও রাজ্য সরকারের ওই জমি দখল করে এত বড় একটি পার্ক তৈরি করেছে রোজ ভ্যালি। অথচ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর দাবি, তিনি রোজ ভ্যালির সম্পর্কে কিছুই জানতেন না। এটা বিশ্বাসযোগ্য কথা নয়।’’
সুদীপবাবুর অভিযোগ: পার্কটি যে জমির উপর তৈরি হয়েছে তার বহু প্লটই রাজ্যের উপজাতি সম্প্রদায়ের মালিকানাধীন ছিল। তাদেরকেও জমি থেকে উত্খাত করে তাদের জমি জোর করে নিয়েছে রোজ ভ্যালি। তিনি বলেন, ‘‘১৯৯৯ সালে সেবি ত্রিপুরা সরকারকে রোজ ভ্যালির ‘বেআইনি’ কর্মকাণ্ড বিষয়ে সতর্ক করে। তার পরই ২০০০ সালে রাজ্য বিধানসভায় চিটফান্ডগুলিকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য আইন পাশ করা হয়। তার পরেও অন্য বহু অর্থলগ্নি সংস্থার মতো রোজ ভ্যালিও লাগামহীন ভাবে ত্রিপুরায় ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ড বাড়ায়।’’ বিধানসভায় বেসরকারি অর্থলগ্নি সংস্থাগুলিকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য কংগ্রেস বহু বার দাবি করলেও রাজ্য সরকার তাতে কান দেয়নি বলে বিরোধী দলের বিধায়করা আজ দাবি করেন। তাঁদের দাবির সমর্থনে, বিধানসভার ২০০০ সালের সরকারি ‘রেকর্ড’ বইও আজ সাংবাদিকদের দেখান কংগ্রেস নেতারা। কংগ্রেসের অভিযোগ, রোজ ভ্যালি কর্তার সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর বৈঠকেই জমির ‘ডিল’ হয়।
রোজ ভ্যালির কর্তা গৌতম কুণ্ডুর সঙ্গে তাঁর ‘বৈঠকের’ কথা মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার ইতিমধ্যেই স্বীকার করেছেন। তবে মুখ্যমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ মহল থেকে বলা হয়েছে, এর মধ্যে তো কোনও লুকোচুরি নেই। রীতিমতো অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিয়েই গৌতম কুন্ডু মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে এসেছিলেন। কেউ রাজ্যে কোনও প্রকল্পে বিনিয়োগ করলে তিনি বহু ক্ষেত্রেই মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেন। সৌজন্য সাক্ষাৎ ছাড়া তা আর কিছুই নয়। এ ছাড়াও, তখন রোজ ভ্যালি বা তার মালিকের বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগও ছিল না। আর খাস জমির বিষয়টি নিয়ে সব খতিয়ে দেখেই তার উত্তর দেওয়া হবে বলে সরকারি এই সূত্রটি জানান।