RG Kar Medical College Hospital Incident

আঘাতের রকমফেরে উঠছে প্রশ্ন

বিবস্ত্র করার সময় বা ধর্ষণের সময় নির্যাতিতার তরফে বাধা দেওয়াই স্বাভাবিক। তা হলে কি সেই বাধা দেওয়ার ক্ষমতা নির্যাতিতার ছিল না?

Advertisement

কুন্তক চট্টোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২৬ জানুয়ারি ২০২৫ ০৭:১৪
Share:

ধর্ষণের আগে নির্যাতিতার সঙ্গে এমন কোনও ঘটনা কি ঘটেছিল, যার ফলে তিনি নিস্তেজ হয়ে পড়েছিলেন? —প্রতীকী চিত্র।

শ্বাসরোধ করে খুনের চিহ্ন আর জি করের নির্যাতিতার নাকে, মুখে, গলায় ছিল। কিন্তু গোপনাঙ্গ বাদে ধর্ষণের কোনও আঘাতের চিহ্নের কথা আদালতে বলেননি ময়না তদন্তকারী চিকিৎসক। এজলাসের জেরা পর্বে এ ব্যাপারে সঞ্জয়ের আইনজীবীরাও তেমন কোনও প্রশ্ন তোলেননি। তবে অনেকেই বলছেন, আঘাতের এই ‘রকমফের’ নিয়ে ধোঁয়াশা রয়েছে। কারণ, বিবস্ত্র করার সময় বা ধর্ষণের সময় নির্যাতিতার তরফে বাধা দেওয়াই স্বাভাবিক। তা হলে কি সেই বাধা দেওয়ার ক্ষমতা নির্যাতিতার ছিল না? ধর্ষণের আগে নির্যাতিতার সঙ্গে এমন কোনও ঘটনা কি ঘটেছিল, যার ফলে তিনি নিস্তেজ হয়ে পড়েছিলেন?

Advertisement

এই ঘটনায় সঞ্জয় ছাড়াও একাধিক ব্যক্তির যোগসাজশের অভিযোগ করেছিল নির্যাতিতার পরিবার। রায়ের ক্ষেত্রে শিয়ালদহ আদালতের বিচারক সেই অভিযোগের যৌক্তিকতা খুঁজে পাননি। সিবিআইও শুধু সঞ্জয়কেই অভিযুক্ত হিসেবে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছিল। অনেকেই বলছেন, ময়না তদন্তের রিপোর্টে আঘাতের ধরনগুলি নিয়ে প্রশ্ন তুললে হয়তো নতুন কিছু উঠে আসতে পারত।

তদন্তকারীদের রিপোর্টে বলা হয়েছে, নির্যাতিতার নিম্নাঙ্গ অনাবৃত ছিল। জিন্স পাশে পড়েছিল। ঊর্ধ্বাঙ্গের কুর্তি উপর দিকে ওঠানো ছিল এবং অন্তর্বাস পাশে সরে গিয়েছিল। উর্ধ্বাঙ্গ আংশিক অনাবৃত ছিল। ময়না তদন্তের রিপোর্টে বলা হয়েছে যে, ধর্ষণের সময় নির্যাতিতার শরীরে প্রাণ ছিল। তার ফলেই গোপনাঙ্গের আঘাত থেকে রক্তক্ষরণ হয়েছে। সঞ্জয়ের সঙ্গে ধ্বস্তাধ্বস্তির ফলে তার ব্লু-টুথ হেডফোন ছিঁড়ে গিয়েছিল। যা এই মামলার অন্যতম প্রমাণ।

Advertisement

পুলিশেরই একা‌ংশের প্রশ্ন, ঘুমন্ত অবস্থায় যৌন হেনস্থা হতে পারে। কিন্তু বিবস্ত্র করতে গেলে ঘুম ভেঙে বাধা দেওয়া স্বাভাবিক। জিন্স, কুর্তির মতো আঁটোসাঁটো পোশাক চট করে খোলাও সম্ভব নয়। সেই পরিস্থিতিতে ধ্বস্তাধ্বস্তি হলে নির্যাতিতার কোমর, উরু ইত্যাদি জায়গায় আঘাতের চিহ্ন থাকবে। কিন্তু তেমন কোনও চিহ্ন মেলেনি! স্তনে সঞ্জয়ের লালার উপস্থিতি থাকলেও কামড় বা আঁচড়ের চিহ্ন নেই। অথচ সঞ্জয়ের শরীরে নখের আ‌ঁচড়ের দাগ আছে। যা নির্যাতিতার বাধা দেওয়ার চিহ্ন হিসেবে কোর্ট মেনে নিয়েছে। প্রশ্ন উঠতে পারে, তা হলে জোর করে নিম্নাঙ্গের পোশাক খোলার সময় সঞ্জয়ের আঁচড়ের দাগ কেন নির্যাতিতার শরীরে পাওয়া গেল না? বাঁ হাঁটুতে এবং গোড়ালিতে আঘাতের চিহ্নের কথা ময়না তদন্তকারী চিকিৎসক কোর্টে বলেছেন। তবে সেগুলি যে ধর্ষণের বাধা দেওয়ার আঘাত, তা স্পষ্ট করেননি।

ময়না তদন্তের সময় নির্যাতিতার নখের নমুনা নেওয়া হয়েছিল কিন্তু সেখানে সঞ্জয়ের দেহকোষের কোনও উপস্থিতি মিলেছে কি না, তারকোনও সাক্ষ্য ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞ কোর্টে দেননি। সঞ্জয়ের নখের নমুনাতেও নির্যাতিতার দেহকোষ বা অন্য কোনও বস্তুর উপস্থিতিমেলেনি। এ ক্ষেত্রে অবশ্য ধরে নেওয়া যেতে পারে যে, সঞ্জয় তার পরের দিন হাত ধুয়েছেন, স্নান করেছেন।তাই নমুনা মুছে গিয়েছে। ফরেন্সিক রিপোর্টে এ-ও বলা হয়েছে যে, নির্যাতিতার জিন্স এবং নিম্নাঙ্গের অন্তর্বাসে রক্তের উপস্থিতি মিলেছে এবং সেই রক্তের সঙ্গে নির্যাতিতার ডিএনএ মিলেছে। আর জি করের পড়ুয়া-চিকিৎসক পূজা রাই আদালতে দেওয়া সাক্ষ্যে বলেছেন, নির্যাতিতার নিম্নাঙ্গ অনাবৃত ছিল এবং জিন্স পাশে পড়েছিল। তিনি কোনও অন্তর্বাস দেখেননি। অনেকেরই প্রশ্ন, ধর্ষণের আগে বিবস্ত্র করলে জিন্সে কি রক্তের দাগ লাগা সম্ভব? এ ব্যাপারেও তদন্তে ধোঁয়াশা রয়ে গিয়েছে বলে মনে করছেন অনেকেই।

ধোঁয়াশা যেখানে

সঞ্জয়ের শরীরে নির্যাতিতার নখের আঁচড়ের দাগ আছে

তবে নির্যাতিতার নখের নমুনায় সঞ্জয়ের দেহকোষের চিহ্ন নেই

জোর করে বিবস্ত্র করা হলেও নির্যাতিতার কোমর, থাইয়ে আঁচড় বা বাধা দানের চিহ্ন নেই

স্তনে সঞ্জয়ের লালারসের উপস্থিতি পাওয়া গেলেও কামড় বা আঁচড়ের চিহ্ন নেই

ধর্ষণের আগে বিবস্ত্র করা হলে এবং দেহের পাশে জিন্স উদ্ধার হলে রক্তের দাগ এল কী ভাবে?

যা থেকে বোঝা যায়, ধর্ষণের আগে নির্যাতিতাকে বিবস্ত্র করা হয়েছিল।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement