মেডিক্যালে শিক্ষক ধরে রাখতে অবসর ৭০-এ

রাজ্যের মেডিক্যাল কলেজগুলিতে শিক্ষক-চিকিৎসকের সংখ্যা বাড়ন্ত। তাই অবসরের বয়স আরও এক দফা বাড়িয়ে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার পথে হাঁটতে চলেছে স্বাস্থ্য দফতর।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৯ অক্টোবর ২০১৬ ০৩:২৯
Share:

রাজ্যের মেডিক্যাল কলেজগুলিতে শিক্ষক-চিকিৎসকের সংখ্যা বাড়ন্ত। তাই অবসরের বয়স আরও এক দফা বাড়িয়ে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার পথে হাঁটতে চলেছে স্বাস্থ্য দফতর।

Advertisement

শুক্রবার নবান্নে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে স্বাস্থ্যকর্তাদের ‘রিভিউ মিটিং’-এ এই সিদ্ধান্ত হয়েছে। দফতর সূত্রের খবর, শিক্ষক-চিকিৎসকদের অবসরের বয়স ৬৫ থেকে বাড়িয়ে ৭০ করা হচ্ছে। স্বাস্থ্যকর্তাদের বক্তব্য— নতুন যে মেডিক্যাল কলেজগুলি খুলবে তার জন্য তো বটেই, এমনকী বর্তমান কলেজগুলিতে পঠনপাঠন টিকিয়ে রাখতে গেলেও এ ছাড়া পথ নেই।

এ দিন মুখ্যমন্ত্রী তথা স্বাস্থ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে বৈঠক করার পর দফতরের সচিব রাজেন্দ্র শুক্ল জানান, রাজ্যে আরও পাঁচটি নতুন মেডিক্যাল কলেজ খোলা হবে। তাই ৬৫-র পরেও শিক্ষক-চিকিৎসকদের কাজ চালিয়ে যেতে বলা হবে। সেটা কত দিন? এর কোনও স্পষ্ট উত্তর দেননি তিনি। তবে দফতরের খবর, দু’বছর আগে শিক্ষক-চিকিৎসকদের অবসরের বয়স ৬২ থেকে বেড়ে ৬৫ করা হয়েছিল। এ বার তা ৭০ করা হচ্ছে।

Advertisement

কিন্তু এতেও সমস্যার সমাধান হবে না বুঝে বেসরকারি হাসপাতাল থেকে ডাক্তার ‘ধার’ করার পরিকল্পনাও নিয়েছে সরকার। এ ব্যাপারে শীঘ্র বিজ্ঞপ্তি জারি হবে। শুক্ল জানিয়েছেন, বেসরকারি হাসপাতালের যে ডাক্তাররা সরকারি হাসপাতালে পরিষেবা দিতে ইচ্ছুক, তাঁদের নির্দিষ্ট সময়ের জন্য, নির্দিষ্ট ভাতার বিনিময়ে কাজ করানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। রিভিউ বৈঠকে ছিলেন স্বরাষ্ট্র সচিব মলয় দে-ও।

রাজ্যে যে নতুন পাঁচটি মেডিক্যাল কলেজ হবে, তা আগেই জানিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। কোচবিহার, রায়গঞ্জ, রামপুরহাট, পুরুলিয়া ও ডায়মন্ড হারবারে ওই কলেজগুলি চালু হবে। প্রত্যেকটি কলেজে ১০০টি করে মোট ৫০০ আসন থাকবে। পাশাপাশি, কামারহাটি, ঘাটাল, ঝাড়গ্রাম, বসিরহাট, উলুবেড়িয়া, বারাসত ও জঙ্গিপুরে খোলা হবে সাতটি নার্সিং প্রশিক্ষণ কলেজ।

স্বাস্থ্যকর্তাদের একাংশের বক্তব্য— মেডিক্যাল কাউন্সিল অব ইন্ডিয়া (এমসিআই)-র চাহিদা অনুয়ায়ী শিক্ষক-চিকিৎসক এবং অন্যান্য পরিকাঠামোর ব্যবস্থা করতে না পেরে আগে একাধিক বার বিপাকে পড়তে হয়েছে সরকারকে। সরকারি-বেসরকারি একাধিক মেডিক্যাল কলেজে আসন সংখ্যা কমিয়ে দিয়েছে এমসিআই। এমনকী কখনও কখনও বেসরকারি মেডিক্যালের ক্ষেত্রে ছাত্র ভর্তি বন্ধ রাখার নির্দেশও দেওয়া হয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে সচিব জানান, মেডিক্যাল কলেজ খোলার ক্ষেত্রে এমসিআই-র নিয়মকানুন শিথিল করার আর্জি জানিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারকে চিঠি দেবে সরকার।

মেডিক্যাল কলেজগুলিতে চিকিৎসক-শিক্ষকদের হাজিরা ও কাজ নিয়ে দিন কয়েক আগে সুপ্রিম কোর্ট-নির্দেশিত ওভারসাইট কমিটি এবং এমসিআই একগুচ্ছ নিয়মকানুন ঘোষণা করে। স্বাস্থ্যকর্তাদের একাংশের মতে, নতুন নিয়মকানুন জানার পরে চিকিৎসক-শিক্ষকদের হাজিরা নিয়ে কোনও ঝুঁকি নিতে চায় না রাজ্য। তাই অবসরের বয়ঃসীমা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হল। প্রসঙ্গত, এমসিআই-এর নিয়ম অনুযায়ী, এ দেশে চিকিৎসক-শিক্ষকদের অবসরের বয়স সর্বোচ্চ ৭০ হতে পারে। নেপালের মতো বেশ কিছু দেশে অবশ্য চিকিৎসক ও শিক্ষকদের অবসরের কোনও সময়সীমা নেই।

তবে চিকিৎসক-শিক্ষকদের অনেকের বক্তব্য, ৬৫-র পরে অনেকেরই কাজের সক্ষমতা অথবা ইচ্ছা থাকে না। কেউ কেউ অসুস্থ হয়ে পড়েন। এমন ক্ষেত্রে ‘স্বেচ্ছাবসর’-এর ব্যবস্থা না-থাকলে বিষয়টা অমানবিক পর্যায়ে চলে যাবে। একই কথা বলেছেন বামপন্থী সরকারি চিকিৎসকদের সংগঠন ‘অ্যাসোসিয়েশন অব হেলথ সার্ভিস ডক্টর্স’-এর নেতারাও। এই নিয়ে প্রশ্ন করায় স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা সুশান্ত বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘স্বেচ্ছাবসরের ব্যবস্থা অবশ্যই রাখা উচিত। তবে এখন মানুষের আয়ু এবং কর্মক্ষমতা বেড়েছে। অনেকেই ৬৫-র পরেও তরতাজা থাকেন, কাজ করতে চান। এমন চিকিৎসকেরা স্বেচ্ছায় কাজ করতে চাইলে তা করতে পারবেন।’’

আশা কর্মী, অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী, চুক্তির ভিত্তিতে নিযুক্ত কর্মীদের স্বাস্থ্য বিমার আওতায় আনার কথাও এ দিন ঘোষণা করা হয়েছে। এ জন্য ‘স্বাস্থ্যসাথী’ নামে একটি প্রকল্প চালু হতে চলেছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement