সবুজে সবুজ।— প্রতীকী ছবি।
বিরোধীদের ধূলিসাৎ করে পুর নির্বাচনে অব্যাহত রইল তৃণমূলের জয়যাত্রা। ভোটের ফল তৃণমূল ৭, বিরোধী ০। অর্থাৎ যে ৭টি পুরসভায় নির্বাচন হল, তার কোনওটিতেই বোর্ড দখল করতে পারল না বিরোধীরা। উত্তরবঙ্গের দু’টি পুরসভা ধূপগুড়ি এবং বুনিয়াদপুরে বিজেপি কিছুটা দাগ কাটতে পেরেছে। ধূপগুড়িতে এক লাফে বিজেপির আসন সংখ্যা ১ থেকে বেড়ে হয়েছে ৪। বুনিয়াদপুরে এ বারই প্রথম পুর নির্বাচন। পুরসভা তৃণমূলের দখলে গেলেও বিজেপি খাতা খুলতে পেরেছে সেখানে। কিন্তু দক্ষিণবঙ্গে এসে বিজেপি-ও প্রায় মুখ থুবড়ে পড়েছে তৃণমূলের মোকাবিলায়। পাঁশকুড়ায় ১টি মাত্র আসনে জিততে পেরেছেন পদ্মফুলের প্রার্থী। নলহাটি, দুর্গাপুর, হলদিয়া, কুপার্সে কোনও আসন নেই। সিপিএম আর কংগ্রেসের অবস্থা আরও শোচনীয়। কোথাও কোনও আসন পায়নি এই দুই দল। বাম শরিক ফরওয়ার্ড ব্লক নলহাটিতে ১টি আসন পেয়েছে। নলহাটির আর ১টি ওয়ার্ডে জিতেছেন এক নির্দল প্রার্থী। বাকি সব জায়গায় তৃণমূল ঝড়।
বিরোধীদের তরফে অবশ্য আগেই বলা হয়েছিল, পুর নির্বাচনে ভোটই হয়নি, প্রহসন হয়েছে। অভিযোগ পুরোপুরি ভিত্তিহীন নয়। ভোটের দিন প্রায় সব এলাকা থেকেই অশান্তির খবর এসেছিল। বুথ দখল, ছাপ্পা ভোট, বিরোধী এজেন্টদের বার করে দেওয়া, বোমাবাজি, অগ্নিসংযোগের ছবি দেখা গিয়েছিল দিনভর। তৃণমূল নির্বাচন দখল করে নিয়েছে বলে বিরোধীরা অভিযোগ করেছিল। তৃণমূল অবশ্য সে সব অভিযোগে পাত্তা দেয়নি। পরাজয় নিশ্চিত জেনেই বিরোধীরা এই ধরনের অভিযোগ করছে বলে তৃণমূলের তরফে বলা হয়েছিল। ভোটযন্ত্র খোলা হতেই দেখা গেল, সর্বত্র জয়যাত্রা তৃণমূলের। তবে অনেকটা পিছিয়ে থেকেও বিজেপি দেখিয়ে দিল, পশ্চিমবঙ্গে প্রধান বিরোধী শক্তি হিসেবে উঠে আসছে তারাই।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্বাভাবিক ভাবেই তৃণমূলের জয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন। বৃহস্পতিবার বিকেলে তিনি নবান্নে বলেছেন, ‘‘এটা মানুষের জয়। যাঁরা লম্ফ-ঝম্প করছিলেন তৃতীয়, চতুর্থ, পঞ্চম হওয়ার জন্য, আমি দেখলাম ০.১ শতাংশ ভোট পেয়েছে। একটা-দুটো আসনও পায়নি।’’ মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, ‘‘৭ পুরসভায় এই জয় মা-মাটি-মানুষের জয়।’’
বিধানসভা নির্বাচনে দুর্গাপুরের দুই কেন্দ্রেই শোচনীয় হার সত্ত্বেও নগর নিগম দখলে রাখতে পেরে উল্লসিত তৃণমূল:
বামের ধূলিসাৎ হয়ে গিয়েছে এই পুর নির্বাচনে। কংগ্রেস প্রায় নিশ্চিহ্ন, খাতাই খুলতে পারেনি তারা। কিন্তু জনসমর্থন বাড়ানোর ধারা বজায় রেখে প্রায় সর্বত্র দ্বিতীয় স্থানে উঠে এসেছে বিজেপি। ধূপগুড়িতে ৪টি ওয়ার্ডে জয়ী হয়েছে বিজেপি। বুনিয়াদপুর, পাঁশকুড়াতেও তারা আসন পেয়েছে। হলদিয়া এবং নলহাটির বেশ কিছু ওয়ার্ডে তৃণমূল প্রার্থীদের কড়া টক্করের মুখে ফেলেছে বিজেপি।
ধূপগুড়িতে তৃণমূলের জেলা সভাপতি সৌরভ চক্রবর্তীর সঙ্গে জয়ী প্রার্থীরা। —নিজস্ব চিত্র।
• ধূপগুড়ি পুরসভায় নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে জয় তৃণমূলের। ১৬টি ওয়ার্ডের মধ্যে ১২টি-তেই জিতে গিয়েছে শাসক দল।
• বিজেপি ৪টি আসনে জয়ী হয়েছে। অধিকাংশ ওয়ার্ডেই দ্বিতীয় স্থানে বিজেপি।
• হেভিওয়েট বাম প্রার্থী তথা ধূপগুড়ির প্রাক্তন বাম বিধায়ক মমতা রায় নিজের ওয়ার্ডে পরাজিত। তৃণমূল বনাম বিজেপি লড়াইয়ে প্রায় নিশ্চিহ্ন বাম-কংগ্রেস।
১৬
আরও পড়ুন: জলমগ্ন এলাকায় মৃত ১৪, রিপোর্ট রাজ্যে
• বুনিয়াদপুর নতুন পুরসভা। এ বারই প্রথম পুর নির্বাচন হল দক্ষিণ দিনাজপুরের এই এলাকায়।
• ১৪টি আসনের মধ্যে ১৩টিতেই জয়ী হয়েছেন তৃণমূল প্রার্থীরা। ১টি আসন পেয়েছে বিজেপি।
১৪
• নদিয়ার কুপার্স পুরসভার সব আসনে তৃণমূলের জয় হয়েছে। সকালে গণনা শুরু হতেই হু হু করে একের পর এক ওয়ার্ডে এগিয়ে যেতে শুরু করেন তৃণমূল প্রার্থীরা। সেই ধারা শেষ পর্যন্ত ধরে রেখে সব ওয়ার্ড দখল করল তৃণমূল।
• পাঁচ বছর আগের পুর নির্বাচনেও বিপুল জয় হয়েছিল কংগ্রেসের। পরে অবশ্য কংগ্রেস কাউন্সিলররা তৃণমূলে যোগ দেন। বোর্ড যায় শাসক দলের দখলে।
• এ বার কুপার্সে ভোটের আগে এলাকার কংগ্রেস বিধায়ক তথা দাপুটে নেতা শঙ্কর সিংহ তৃণমূলে যোগ দেন। তাই কুপার্সের ভোটে তৃণমূলের জয় কিছুটা প্রত্যাশিতই ছিল।
কুপার্স ক্যাম্প (এগিয়ে/জয়ী)
মোট ওয়ার্ড তৃণমূল বিজেপি কংগ্রেস বাম অন্যান্য
১২ ১২ ০ ০ ০ ০
নলহাটি থেকে পরিস্থিতি জানাচ্ছেন আনন্দবাজারের প্রতিনিধি সব্যসাচী ইসলাম:
• নলহাটিতে তৃণমূল সবক’টি আসনেই জয়ী হবে, ভোটের আগে এমনই দাবি করেছিলেন তৃণমূলের জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল।
• সব আসনে অবশ্য তৃণমূলের জয় হল না। ১টি ওয়ার্ডে জয়ী হলেন ফরওয়ার্ড ব্লক প্রার্থী। ১টি আসনে নির্দল প্রার্থী জয়ী হলেন।
• ১৬টি আসনের মধ্যে ১৪টি দখলে নিয়ে নলহাটিতে বোর্ড গড়তে চলেছে তৃণমূল।
নলহাটি (এগিয়ে/জয়ী)
মোট ওয়ার্ড তৃণমূল বিজেপি কংগ্রেস বাম অন্যান্য
১৬ ১৪ ০ ০ ১ ১
• বিরোধী শূন্য হল দুর্গাপুর নগর নিগম। ৪৩টি ওয়ার্ডের সবক’টিতেই জয়ী হল তৃণমূল।
• বিজেপি, বাম, কংগ্রেস সে ভাবে দাঁত ফোটাতে পারেনি শিল্পনগরীতে।
• এই প্রথম দুর্গাপুর নগর নিগম বিরোধীশূন্য হল।
দুর্গাপুর (এগিয়ে/জয়ী)
মোট ওয়ার্ড তৃণমূল বিজেপি কংগ্রেস বাম অন্যান্য
৪৩ ৪৩ ০ ০ ০ ০
আরও পড়ুন: মানিকের বক্তৃতা নিয়ে সুর চড়াচ্ছে দু’পক্ষই
হলদিয়া পুরসভায় প্রথম বার নির্বাচনে জয়ী হল তৃণমূল, ফলাফল জানাচ্ছেন আনন্দবাজারের প্রতিনিধি আরিফ ইকবাল খান:
• হলদিয়ায় বিরোধীদের মুছে দিল তৃণমূল। ২৯টি ওয়ার্ডের ফলই ঘোষিত। সবক’টিতেই জয়ী তৃণমূল।
• এই প্রথম নির্বাচনে জিতে হলদিয়ার দখল নিতে চলেছে তৃণমূল। পাঁচ বছর আগের নির্বাচনেও হলদিয়ায় জয় হয়েছিল বামেদের। পরে দল ভাঙিয়ে বোর্ডের দখল নেয় তৃণমূল।
• এ বার হলদিয়া বিরোধীশূন্য হয়ে গেল।
হলদিয়া (এগিয়ে/জয়ী)
মোট ওয়ার্ড তৃণমূল বিজেপি কংগ্রেস বাম অন্যান্য
২৯ ২৯ ০ ০ ০ ০
পাঁশকুড়ার একমাত্র জয়ী বিজেপি প্রার্থী সিন্টু সেনাপতি। —নিজস্ব চিত্র।
• পাঁশকুড়া পুরসভাতেও তৃণমূলের বড় জয় হয়েছে। ১৭টি আসনেই জিতে গিয়েছেন তৃণমূল প্রার্থীরা।
• ১০ নম্বর ওয়ার্ডে প্রায় ১১০০ ভোটে জয়ী রাজ্যের মন্ত্রী সৌমেন মহাপাত্রের স্ত্রী সুমনা মহাপাত্র।
• ৬ নম্বর ওয়ার্ডে চমক বিজেপির। তৃণমূল প্রার্থী শ্যামল পাড়িয়ালকে হারিয়ে জিতলেন বিজেপির সিন্টু সেনাপতি। তিনি ৩২৬ ভোটে জিতেছেন।
• ভোটের আগেই পাঁশকুড়ায় ২টি আসন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতে নিয়েছিল তৃণমূল।
পাঁশকুড়া (এগিয়ে/জয়ী)
মোট ওয়ার্ড তৃণমূল বিজেপি কংগ্রেস বাম অন্যান্য
১৮ ১৭ ১ ০ ০ ০