কেমন ভাবে চলবে স্কুল? প্রধান শিক্ষক ও সহকারী প্রধান শিক্ষকের কর্তব্য কী হওয়া উচিত? পরিচালন সমিতিরই বা দায়িত্ব কী হবে?
প্রকাশিত খসড়া গেজেট বিজ্ঞপ্তিতে এই বিষয়ে নানান প্রস্তাব-দিয়ে শিক্ষাজগতের মতামত জানতে চাইল রাজ্যের স্কুলশিক্ষা দফতর।
প্রস্তাবিত নীতিনিয়মের মোদ্দা কথা: পরিচালন সমিতির অধিকাংশ ক্ষমতাই হাতে নেবে পর্ষদ তথা সরকার। প্রধান শিক্ষক পাবেন প্রভূত বাড়তি ক্ষমতা। অর্থাৎ ক্ষমতার পাল্লা ভারী হচ্ছে প্রধান শিক্ষকের। হাল্কা হচ্ছে পরিচালন সমিতির ক্ষমতার বোঝা। সমিতিকে এড়িয়ে পর্ষদ তথা সরকারের সঙ্গে সরাসরি যোগ বাড়ছে প্রধান শিক্ষকের। শুনেই এক শিক্ষাবিদের মন্তব্য, ‘‘ব্যাপারটা কি অনেকটা ‘পিএম (প্রধানমন্ত্রী) টু ডিএম (জেলাশাসক) মাইনাস সিএম (মুখ্যমন্ত্রী)-এর মতোই দাঁড়াচ্ছে না!’’
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে:
• প্রয়োজনে সরকারের সঙ্গে আলোচনা করে স্কুলের পরিচালন সমিতি ভেঙে দিতে পারবে মধ্যশিক্ষা পর্ষদ।
• কোনও কারণ না-দেখিয়েই সরকার-পোষিত স্কুলের পরিচালন সমিতির মনোনীত সভাপতি এবং অন্য দুই সদস্যকে সরিয়ে দিতে পারবে সরকার।
• আর্থিক দুর্নীতি অথবা প্রতিষ্ঠান-বিরোধী কাজের জন্য সমিতির সদস্য বা স্কুল প্রশাসককেও সরকার সরিয়ে দিতে পারবে।
রাজ্যে এখন সরকার-পোষিত স্কুলই বেশি। রাষ্ট্রীয় মাধ্যমিক শিক্ষা অভিযানের সাহায্য পেতে হলে স্কুলগুলিকে সরকার-পোষিত হতেই হয়। এই রাজ্যে পোষিত স্কুলের পরিচালন সমিতির সভাপতিকে এবং শিক্ষানুরাগীদের মধ্য থেকে দুই সদস্যকে মনোনীত করে সরকার।
খসড়া-প্রস্তাবে দেখা যাচ্ছে, কর্মকর্তা অপসারণের ক্ষমতা পর্ষদের হাতে তো যাচ্ছেই। পোষিত এবং সাহায্যপ্রাপ্ত স্কুলের পরিচালন সমিতির ক্ষমতাও অনেক খর্ব করা হচ্ছে। আগে সমিতি যে-সব কাজ করত, তার বেশির ভাগেরই দায়িত্ব দিয়ে দেওয়া হচ্ছে প্রধান শিক্ষককে। পর্ষদের নির্দেশে শুধু প্রধান শিক্ষককেই কাজে যোগদান করানোর দায়িত্ব সমিতির হাতে থাকছে। অন্যান্য শিক্ষক কাজে যোগ দেবেন পর্ষদের নির্দেশে এবং প্রধান শিক্ষকের মাধ্যমে। চাকরি পাকা করার জন্য শিক্ষকদের আবেদনও প্রধান শিক্ষকের মাধ্যমে যাবে পর্ষদে।
পরিচালন সমিতিকে আগের মতোই জল, মিড-ডে মিল, অগ্নি নির্বাপক ব্যবস্থার পাশাপাশি পড়ুয়াদের শৌচাগারের ব্যবস্থা করার দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে। ছেলে, মেয়ে এবং রূপান্তরকামী পড়ুয়াদের জন্য আলাদা আলাদা শৌচাগার তৈরির ভার পাবে সমিতি। আগে স্কুল স্তরে রূপান্তরকামী পড়ুয়াদের জন্য আলাদা শৌচাগার তৈরির বন্দোবস্ত ছিল না।
বিজ্ঞপ্তিতে স্কুলের পঠনপাঠনের বিষয়ে অনেক দায়িত্ব সহকারী প্রধান শিক্ষকদের দেওয়ার প্রস্তাব আছে। ক্লাস, পরীক্ষাসূচি-সহ পঠনপাঠনের দায়িত্ব সহকারী প্রধান শিক্ষকদেরই দিতে বলা হচ্ছে। শিক্ষকদের বেতন, ছুটি, পেনশন সংক্রান্ত বিষয়ের দায়িত্ব প্রধান শিক্ষকদের হাতে থাকছে।
মধ্যশিক্ষা পর্ষদের ক্ষমতা বৃদ্ধির বিষয়টি অন্য একটি খসড়া বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে আগেই। সেই বিজ্ঞপ্তিতে শিক্ষকদের ২৪ দফা আচরণবিধির কথাও বলা হয়েছে। যা নিয়ে চলছে তুমুল বিতর্ক। সব ক’টি খসড়া বিজ্ঞপ্তির বিষয়ে ৩০ দিনের মধ্যে মতামত জানাতে বলা হয়েছে। স্কুলশিক্ষা দফতরের এক আধিকারিক জানান, স্কুলশিক্ষক, শিক্ষাকর্মীদের কাছ থেকেই এ বিষয়ে মতামত চাওয়া হচ্ছে। শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় সোমবার জানান, আচরণবিধির বিজ্ঞপ্তি নিয়ে বিভ্রান্তিমূলক প্রচার চলছে। আজ, মঙ্গলবার বিষয়টি নিয়ে তিনি তাঁর বক্তব্য জানাবেন।
ক্ষমতা অদলবদলের প্রস্তাব সম্পর্কে মতামত জানানোর আগেই শুরু হয়েছে সমালোচনা। বঙ্গীয় শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী সমিতির সহ-সাধারণ সম্পাদক স্বপন মণ্ডল বলেন, ‘‘সরকার নিজেদের মনোনীত সদস্যদের উপরেই আস্থা রাখতে পারছে না।’’ অ-বাম পশ্চিমবঙ্গ শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক নবকুমার কর্মকার বলেন, ‘‘এই সরকার নিজেরা পছন্দ করে পরিচালন সমিতিতে লোক পাঠাচ্ছে।। আবার নিজেরা সরিয়ে দেবে বলছে। সবই রাজনীতির খেলা!’’