প্রতীকী ছবি।
দু’-দশ জন নয়, প্রতিদিন রাজ্যে ডেঙ্গি ধরা পড়ছে ৭০০-রও বেশি মানুষের! খোদ স্বাস্থ্য দফতরেরই হিসেব। তাঁরাই বলছেন, মোট আক্রান্তের সংখ্যা ১৮ হাজার ছাড়িয়ে গিয়েছে! এবং রোজকার মতোই ‘কিছুই হয়নি’ ভাব দেখিয়ে চলেছে প্রশাসন।
খাস কলকাতার কথাই ধরা যাক। শহরের অলিতে গলিতে ঘরে ঘরে রোগ। উপচে পড়ছে হাসপাতাল। রোজ নতুন নতুন মৃত্যুর খবর। অথচ পুরসভার মেয়র পারিষদ (স্বাস্থ্য) অতীন ঘোষ এখনও বলে চলেছেন, ‘‘পরিস্থিতি খুব একটা উদ্বেগজনক নয়!’’ কতটা রোগ ছড়ালে তবে ‘উদ্বেগ’ বলা যায়? এটাই এখন এ রাজ্যে কোটি টাকার প্রশ্ন। আক্রান্ত এবং মৃতের সংখ্যা নিত্যদিন বেড়েই চলেছে! আর তারই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে অব্যাহত রয়েছে পরিস্থিতি অস্বীকার করা এবং ধামাচাপা দেওয়ার প্রয়াস। বিরোধীদের অভিযোগ, ডেঙ্গি-পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে বলে নিজেদের দায় ঝেড়ে ফেলার নির্লজ্জ চেষ্টা চালাচ্ছে প্রশাসন।
এর মাঝেই সোমবার হাওড়ার শিবপুরের শরৎ চ্যাটার্জি রোডের বাসিন্দা রুনু দে (৩২) নামে এক মহিলা ডেঙ্গিতে মারা গিয়েছেন। নীলরতন মেডিক্যাল কলেজে মারা গিয়েছে হাবরা পুর এলাকার ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা পলাশ বৈরাগী (১৫)। রবিবার রাতে দুর্গাপুর মহকুমা হাসপাতালে গোবিন্দ বাগদি (২৩) নামে এক রোগীর মৃত্যু হয়। রবি ও সোমবার দেগঙ্গা-বাদুড়িয়ায় যে সাত জনের মৃত্যু হয়েছে, তাঁদের দু’জনের হাসপাতাল থেকে ছুটি মেলার পরেও জ্বর ফিরে এসেছিল। এই অবস্থায় সরকারি ব্যবস্থার উপরে ভরসা রাখতে না পেরে বিভিন্ন জায়গায় হোম-যজ্ঞ শুরু করেছেন সাধারণ মানুষ।
আরও পড়ুন: উপসর্গ আলাদা, আসলে ডেঙ্গিই
দৈনিক শ’য়ে শ’য়ে মানুষ ডেঙ্গিতে আক্রান্ত বলে জানিয়েও পরিস্থিতি সঙ্কটজনক বলে মানতে নারাজ রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা বিশ্বরঞ্জন শতপথী। তাঁর কথায়, ‘‘এই বছর ডেঙ্গি পজিটিভিটি রেট একটু বেশি ঠিকই, কিন্তু তা মারাত্মক বলা যায় না। গত বছর এই সময়ে রাজ্যে ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা ২০ হাজার ছাড়িয়ে গিয়েছিল।’’ এ বছর সরকারি হিসেব বলছে, ১৮ হাজার! অতএব ‘পরিস্থিতি উদ্বেগজনক নয়’! কলকাতার পরিস্থিতি প্রসঙ্গে অতীনবাবু এ দিন ঠিক এ কথাই বলেছেন, ‘‘কলকাতার ডেঙ্গি পরিস্থিতি খুব একটা উদ্বেগজনক বলে মনে করি না। কলকাতায় ৫০ লক্ষ লোকের বাস। দৈনিক আরও ৬০ লক্ষ মানুষ শহরে আসেন। জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত ১২ হাজার জনের রক্তপরীক্ষা হয়েছে পুর-ক্লিনিকে। এখনও অবধি ৬৫০ জনের ডেঙ্গি ধরা পড়েছে কলকাতায়।’’
প্রশাসন পরিস্থিতি ধামাচাপা দিতে চাইছে এমন অভিযোগ মানতে নারাজ তিনি এবং বিশ্বরঞ্জনবাবু দু’জনেই। স্বাস্থ্য অধিকর্তার কথায়, ‘‘প্রকৃত পরিস্থিতি গোপন করার কোনও অভিপ্রায় নেই। সেটা থাকলে প্রতিদিন ৭০০-র বেশি লোক ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হচ্ছেন, এই তথ্যও চাপা দেওয়া হতো।’’