নীলাদ্রি দাস। ছবি: সংগৃহীত।
চার বছর আগে চাকরি সংক্রান্ত দুর্নীতি এবং প্রতারণার মামলায় ধরা পড়েছিলেন নীলাদ্রি দাস। কিন্তু এক মাসের মধ্যেই জামিন পেয়ে যান তিনি। মামলার চার্জশিটেও তাঁর নাম উল্লেখ করা হয়নি। সূত্রের দাবি, কলকাতা হাই কোর্টে নীলাদ্রির জামিনের বিরোধিতাও করেনি সিআইডি। সূত্রের আরও দাবি, বরং তদন্তকারী আধিকারিক সশরীরে হাজির হয়ে জানিয়েছিলেন, নীলাদ্রিকে আটকে রাখার প্রয়োজন নেই। এই ঘটনার প্রেক্ষিতে প্রশ্ন উঠেছে, নিয়োগ দুর্নীতিতে অভিযুক্ত এবং সম্প্রতি ধৃত নীলাদ্রিকে এত সহজে কেন ছেড়ে দিয়েছিল সিআইডি? আরও প্রশ্ন, সেই সময়ে নীলাদ্রির সঙ্গে এসএসসি-র তৎকালীন চেয়ারম্যান সুবীরেশ ভট্টাচার্যের যোগসূত্র পাওয়ার পরেও কেন সিআইডি কোনও পদক্ষেপ করেনি?
এক সিআইডি কর্তার কথায়, ‘‘সঠিক পথেই তদন্ত হয়েছে। ওই মামলার বিচার প্রক্রিয়া চলছে। এখন কোনও মন্তব্য করা যাবে না।’’
যদিও সিবিআই সূত্রের দাবি, এই তদন্তে প্রয়োজনে সিআইডি আধিকারিকদেরও তলব করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হতে পারে। তদন্তকারী সংস্থার বক্তব্য, তারা জানতে চায়, নীলাদ্রির কি পুলিশ-প্রশাসনের শীর্ষ মহলেও যোগাযোগ ছিল? না হলে তিনি এত সহজে ছাড় পেলেন কী করে? সুবীরেশের ক্ষেত্রেও কেন কোনও পদক্ষেপ করা হয়নি, সেই রহস্য উদ্ঘাটনে করতে চায় সিবিআই। তাদের মতে, তা করতে পারলে অন্তত দু’টি বিষয় স্পষ্ট হবে: ১) সুবীরেশ কতটা প্রভাবশালী ছিলেন, তা সহজেই আদালতে তুলে ধরা যাবে। ২) রাজ্য পুলিশের কর্তারাও এই দুর্নীতিতে জড়িত ছিলেন কি না, সেই প্রশ্ন তোলা যেতে পারে।
পুলিশ সূত্রের খবর, পূর্ব মেদিনীপুরের পটাশপুর থানায় সিআইডি-র দায়ের করা এফআইআর-এ প্রাথমিক শিক্ষক, করণিকের চাকরি, স্কুলের গ্রুপ ডি নিয়োগ, পুরসভা, পরিবহণ দফতরের চাকরি দুর্নীতির অভিযোগ ছিল। রেল এবং সেনার চাকরির নামে প্রতারণার কথাও বলা হয়েছিল। এফআইআর-এ বিস্তারিত ভাবে ৯ জনের নাম বলা হয়। তাঁরা পূর্ব মেদিনীপুর, পশ্চিম মেদিনীপুর, দক্ষিণ ২৪ পরগনা, মুর্শিদাবাদের বাসিন্দা। অবৈধ ভাবে নিযুক্ত কয়েক জনের নামও ছিল।
নীলাদ্রিকে পাকড়াও-ও করেন তদন্তকারীরা। তবে তাঁকে গ্রেফতারের পরেই তদন্ত ধীর হতে শুরু করেছিল বলে দাবি।
পুলিশের খবর, এর পরে সিআইডি যে চার্জশিট পেশ করে, তাতে ১২ জনের নাম ছিল, যাঁরা নেহাতই চুনোপুটি বলে পরিচিত। সেই চার্জশিট তমলুক জেলা আদালতের বিশেষ কোর্টে জমা পড়লেও এখনও চার্জ গঠন হয়নি। ওই ‘চুনোপুটি’রাও শর্তাধীনে জামিন পেয়েছেন। নীলাদ্রির নাম বাদ যাওয়ার ব্যাপারে সদুত্তর মেলেনি সরকার পক্ষের আইনজীবীদের কাছ থেকেও। তবে তাঁদের দাবি, অভিযুক্তদের গরহাজিরার কারণে চার্জ গঠনে দেরি হচ্ছে।
ইতিমধ্যে কেন্দ্রীয় সংস্থার তদন্তে দাবি, ২০১৫ সাল থেকে শিক্ষা দফতরের পরীক্ষার সঙ্গে যুক্ত নীলাদ্রি। সুবীরেশের সঙ্গে নীলাদ্রির যোগসূত্রও মিলেছে বলে দাবি করেছে সিবিআই। বর্তমানে যে নিয়োগ নিয়ে তোলপাড় চলছে, সেগুলির বেশির ভাগই ২০১৯ সালের আগে হয়েছে। অর্থাৎ, সিবিআই নিয়োগ দুর্নীতিতে নীলাদ্রির যে ভূমিকার কথা বলেছে, তা তত দিনে হয়ে যাওয়ার কথা। দুর্নীতির চক্র ঘাঁটতে গিয়েই শিক্ষা দফতর, এসএসসি-র শীর্ষ মহলের যোগসূত্র জানতে পেরেছিল সিআইডি। প্রশ্ন ওঠে, সে ক্ষেত্রে কি তদন্ত বন্ধ করার নির্দেশ সিআইডি-র তৎকালীন শীর্ষ মহল থেকেই এসেছিল? আইনজীবীরা বলছেন, তেমন হলে এই দুর্নীতিতে সিআইডি-র তৎকালীন শীর্ষ মহলও দায় এড়াতে পারবেন না। সিআইডির গাফিলতির বিষয়ে হাই কোর্টেরদৃষ্টি আকর্ষণ করতে চান চাকরিপ্রার্থীদের অনেকে।
সহ-প্রতিবেদন: আনন্দ মণ্ডল