প্রতীকী ছবি।
কোনও কোনও স্কুলে প্রধান শিক্ষক থাকা সত্ত্বেও সেই পদে অন্য এক জনকে নিয়োগের জন্য নতুন করে ‘রেকমেন্ডেশন লেটার’ বা সুপারিশপত্র পাঠানো হচ্ছে। আবার পুরুষ শিক্ষক পাঠানোর সুপারিশপত্র পাচ্ছে মেয়েদের স্কুল। শিক্ষক বদলির জন্য উৎসশ্রী পোর্টাল চালু হয়েছে। তবে প্রশাসনিক বদলিও চলছে। সেই প্রশাসনিক বদলির প্রক্রিয়া ঘিরেই এই ধরনের বিভ্রান্তির অভিযোগ উঠছে।
শতদল গায়েন নামে এক প্রধান শিক্ষক মাস দেড়েক আগে হাওড়ার বিবেকানন্দ ইনস্টিটিউশনে প্রধান শিক্ষকেরই পদে নিযুক্ত হন। কিন্তু সম্প্রতি হাওড়ার অন্য একটি স্কুলের প্রধান শিক্ষককে বিবেকানন্দ ইনস্টিটিউশনেই প্রধান শিক্ষক হিসেবে বদলির জন্য সুপারিশপত্র দেওয়া হয়েছে। শতদলবাবু জানান, রোজ ৮০ কিলোমিটার মোটরবাইক চালিয়ে এত দিন তিনি হাওড়ার একটি প্রত্যন্ত স্কুলে প্রধান শিক্ষকতা করতে যেতেন। সেই জন্য উৎসশ্রীতে বদলির আবেদন করেন। তার পরে বদলি হয়ে তিনি আসেন বাড়ির কাছে বিবেকানন্দ ইনস্টিটিউশনে। কিন্তু দেড় মাস কাটতে না-কাটতেই তাঁর স্কুলে আবার অন্য এক জনকে প্রধান শিক্ষকের পদে নিয়োগের সুপারিশপত্র দিয়ে পাঠানোয় তিনি বেজায় ঘাবড়ে যান। শতদলবাবু বলেন, ‘‘বিষয়টি ঠিক করে নেওয়ার জন্য জেলা স্কুল পরিদর্শককে জানিয়েছি। উনি বিষয়টি দেখবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন।’’
মেয়েদের স্কুলে পুরুষ শিক্ষককে বদলি করার নিয়ম নেই। কিন্তু হাওড়াতেই মেয়েদের স্কুলে বদলি করা হয়েছে এক পুরুষ শিক্ষককে। হাওড়ার চিরন্তনী বিদ্যাপীঠ ফর বয়েজ় থেকে এক শিক্ষককে সাঁতরাগাছি কেদারনাথ ইনস্টিটিউট ফর গার্লসে বদলির সুপারিশপত্র দেওয়া হয়েছে। সেই বদলিও হয়েছে প্রশাসনিক পদ্ধতিতে। শিক্ষকদের একাংশের বক্তব্য, এগুলো মোটেই আবেদন-ভিত্তিক বদলি নয়। এগুলো হল বাধ্যতামূলক প্রশাসনিক বদলি। তাই এই ধরনের বদলি নিয়ে সমস্যা দেখা দিলে শিক্ষকদের অনেক বেশি বিভ্রান্তিতে পড়তে হচ্ছে।
হাওড়ার জেলা স্কুল পরিদর্শক অবশ্য জানান, বিবেকানন্দ ইনস্টিটিউশনে প্রধান শিক্ষকের পদে সুপারিশপত্র পাঠানো বা মেয়েদের স্কুলে পুরুষ শিক্ষক বদলির ঘটনায় সংশ্লিষ্ট কাগজপত্রে লেখার কিছু ভুল হয়েছিল। তা শুধরে নেওয়া হচ্ছে।
হাওড়ার জেলা স্কুল পরিদর্শক কাগজ-কলমের ভুলের কথা বললেও শিক্ষকদের একাংশের অভিযোগ, প্রশাসনিক বদলির নামে শিক্ষকদের যে-ভাবে বদলি করা হচ্ছে, তাতে রীতিমতো আতঙ্কের সৃষ্টি হয়েছে। উৎসশ্রী পোর্টালের মাধ্যমে বদলির সূত্রে শিক্ষকেরা বাড়ির কাছাকাছি আসার সুযোগ পাচ্ছেন। কিন্তু প্রশাসনিক বদলির মাধ্যমে অনেক সময়েই দূরের স্কুলে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের। একটি শিক্ষক সংগঠনের অভিযোগ, পশ্চিম মেদিনীপুরের এক শিক্ষিকা যে-স্কুলে পড়াতেন, তার থেকে প্রায় একশো কিলোমিটার দূরের অন্য একটি স্কুলে সম্প্রতি তাঁকে বদলি করা হয়েছে।
শিক্ষক, শিক্ষাকর্মী, শিক্ষানুরাগী ঐক্য মঞ্চের রাজ্য সম্পাদক কিঙ্কর অধিকারী জানান, তাঁরা জানতে পেরেছেন, অনেক জুনিয়র হাইস্কুলে পড়ুয়ার সংখ্যা খুব কম হয়ে যাওয়ায় সেখানকার অতিরিক্ত শিক্ষকদের অন্য স্কুলে বদলি করা হচ্ছে প্রশাসনিক পদ্ধতিতে। এর ফলে অনেকেই বাড়ি থেকে অনেক দূরে বদলি হচ্ছেন। কিঙ্করবাবু বলেন, ‘‘উৎসশ্রীর মাধ্যমে যেখানে বাড়ির কাছে স্কুলে বদলি করা হচ্ছে, তা হলে আবার প্রশাসনিক বদলিতে বাড়ি থেকে আরও দূরে পাঠানো হচ্ছে কেন। কেন এই ভিন্ন নীতি? আমরা এর প্রতিবাদ জানিয়ে শিক্ষা দফতরে চিঠি লিখেছি।’’