জোট বেঁধে প্রতিরোধ, সোমনাথে সহমত ইয়েচুরি

সূত্র দিলেন প্রাক্তন। পত্রপাঠ স্বীকার করে নিলেন বর্তমান। প্রয়াত প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসুর জন্মদিন উদযাপনই এ রাজ্যে ফের শাসক দলের মোকাবিলায় বৃহত্তর মঞ্চ গড়ার প্রস্তাবকে সামনে এনে ফেলল।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৯ জুলাই ২০১৫ ০৩:১৮
Share:

মেলালেন তিনি। জ্যোতি বসুর জন্মদিন উপলক্ষে স্মরণ অনুষ্ঠানের মঞ্চে সিপিএম থেকে বহিষ্কৃত প্রাক্তন স্পিকার সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে দলের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি। বুধবার। ছবি: শৌভিক দে

সূত্র দিলেন প্রাক্তন। পত্রপাঠ স্বীকার করে নিলেন বর্তমান। প্রয়াত প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসুর জন্মদিন উদযাপনই এ রাজ্যে ফের শাসক দলের মোকাবিলায় বৃহত্তর মঞ্চ গড়ার প্রস্তাবকে সামনে এনে ফেলল।

Advertisement

বসু-স্মরণকে উপলক্ষ করেই বুধবার দীর্ঘ দিন পরে ফের তাঁর পুরনো দল সিপিএমের সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে এক মঞ্চে দেখা গেল লোকসভার স্পিকার সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়কে। সিপিএমে প্রকাশ কারাটের জমানায় সোমনাথবাবুর বহিষ্কারের পরে যা অভাবনীয় ছিল! শুধু মঞ্চ ভাগ করেই থেমে যাননি বর্ষীয়ান এই রাজনীতিক। পশ্চিমবঙ্গের বর্তমান অবস্থার কথা উল্লেখ করে তাঁর ‘ইচ্ছা’র কথাও উত্থাপন করে দিয়েছেন সিপিএমের শীর্ষ নেতৃত্বের সামনে। আর তাঁর প্রস্তাব মেনে নিয়েই সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি জানিয়ে দিয়েছেন, এ রাজ্যে চলতি অপশাসনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধের আগুনই তাঁরা জ্বালবেন! এবং সে কাজ একা একটা দলের নয়। সব দলের, সব মতের মানুষকে সঙ্গে নিয়েই প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। যে বার্তার মধ্যে অদূর ভবিষ্যতে এ রাজ্যে তৃণমূল-বিরোধী গণতান্ত্রিক ও ধর্মনিরপেক্ষ শক্তির বৃহত্তর মঞ্চ গড়ে ওঠার প্রয়াসই দেখছে বাম শিবিরের বড় অংশ।

বিধাননগরের পূর্বাঞ্চলীয় সংস্কৃতি পরিষদের প্রেক্ষাগৃহে এ দিন বাম জমানায় রেকর্ড সময়ের মুখ্যমন্ত্রীর জন্মদিন পালনের অনুষ্ঠানের উদ্যোক্তা ছিল জ্যোতি বসু জন্মশতবর্ষ কমিটি। সেই আসরে বসুর অন্যতম প্রিয় শিষ্য সোমনাথবাবু এ দিন বলেন, ‘‘এখন কী হচ্ছে পশ্চিমবঙ্গে? মাঝে মাঝে ভাবি, জ্যোতিবাবু থাকলে কী বলতেন? আমার মনে হয়, জ্যোতিবাবু থাকলে শুধু প্রতিবাদ হতো না, প্রতিরোধও হতো!’’ ভিড়ে-ঠাসা প্রেক্ষাগৃহ সহর্ষ সমর্থন জানায় প্রাক্তন স্পিকারকে। পশ্চিমবঙ্গে কী ভাবে গণতন্ত্রের কণ্ঠরোধ হচ্ছে, সাধারণ মানুষকে কেমন ভয়ে ভয়ে দিন কাটাতে হচ্ছে, তার বিবরণ দিতে গিয়েই সোমনাথবাবু যোগ করেন, ‘‘আমি এক জন সাধারণ মানুষ। আমার কথায় হয়তো কিছু এসে যায় না! তবু আমি বলব, এটাকে দ্বিতীয় স্বাধীনতা সংগ্রাম হিসাবে দেখা উচিত। সবাই মিলেই দ্বিতীয় স্বাধীনতার যুদ্ধটা শুরু হোক না!’’

Advertisement

সোমনাথবাবু যেখানে শেষ করেছিলেন, ঠিক সেখান থেকেই শুরু করেন ইয়েচুরি। সিপিএমের ভিতরে-বাইরে যাঁর ভাবমূর্তি উদারপন্থী হিসাবেই। সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘‘সোমনাথদা প্রতিরোধের কথা বলেছেন। প্রতিরোধ অবশ্যই হবে। সেই কবে থেকে শুনে আসছি কবিতার কথা— আমার প্রতিবাদের ভাষা, আমার প্রতিরোধের আগুন! সোমনাথদা’কে বলছি, প্রতিরোধের আগুন জ্বলবেই!’’ ইয়েচুরি বুঝিয়ে দিয়েছেন, পশ্চিমবঙ্গে তাঁদের জমি পুনরুদ্ধার করতে হবে প্রতিরোধের পথেই। এবং সেই কাজে সঙ্গে নিতে হবে সব ধরনের মানুষকে। তাঁর কথায়, ‘‘সব মানুষকে একজোট করে প্রতিরোধ এবং সেখান থেকেই আমাদের পুনরুত্থান ঘটবে।’’

আগামী বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূলের সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করার লক্ষ্যে কংগ্রেস-সহ বিভিন্ন গণতান্ত্রিক ও ধর্মনিরপেক্ষ শক্তিকে সঙ্গে নিয়ে এগোনোর প্রস্তাবকে ঘিরে এখন জোরালো বির্তক চলছে রাজ্য রাজনীতিতে। প্রথম এই ভাবনা প্রকাশ্যে এনে সিপিএমের মধ্যে যিনি বিতর্কের সূচনা করেছিলেন, দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য গৌতম দেবও এ দিনের অনুষ্ঠানে হাজির ছিলেন। ছিলেন রাজ্যে কংগ্রেস জমানার
প্রাক্তন মন্ত্রী কাশীকান্ত মৈত্র, লেখক বুদ্ধদেব গুহ বা প্রাক্তন মুখ্যসচিব অমিতকিরণ দেবের মতো বাম বৃত্তের বাইরের ব্যক্তিত্বেরাও। সেই আসরে দলের শীর্ষ নেতৃত্বের বক্তব্য শুনে ভবিষ্যতে গণতান্ত্রিক ও ধর্মনিরপেক্ষ মঞ্চ গড়ে ওঠারই আশা দেখছে সিপিএমের একাংশ। দলের রাজ্য কমিটির এক সদস্যের কথায়, ‘‘শুরুরও একটা শুরু থাকে। প্রতিরোধ গড়ে তোলার জন্য আন্দোলনের মঞ্চটাই আগে ভাল ভাবে তৈরি হোক না। তার পরে অনেক পথ খুলতেই
তো পারে!’’

সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্রও এ দিন বলেছেন, টেটের ফর্ম নিতে গিয়ে পুলিশের লাঠি খাওয়াই হোক বা কলেজে ভর্তি হতে গিয়ে টাকা দিয়ে আসন কেনার হয়রানি, সারদায় প্রতারিতদের টাকা ফেরত পাওয়াই হোক বা সাত্তোরের নির্যাতিতার যন্ত্রণা— নানা অংশের মানুষের নানা সমস্যা এবং দাবিকে এক জায়গায় এনে সবাইকে সঙ্গে নিয়ে আন্দোলনই তাঁদের উদ্দেশ্য। বসুকে মনে রেখেই স্বৈরতান্ত্রিক শাসন এবং সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে সব শক্তির যৌথ লড়াইয়ের কথা বলেছেন বিধানসভার প্রাক্তন স্পিকার হাসিম আব্দুল হালিমও।

যা শুনে বাম শিবিরে চর্চা চলছে, তৃণমূল-বিরোধী বৃহত্তর মঞ্চের ভিত কি রচনা করবেন প্রয়াত বসুই?

দলে ফেরার জল্পনা

সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়ের দলে ফেরার জল্পনা ফের উস্কে দিলেন সিপিএম সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি। বুধবার জ্যোতি বসুর জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানের পরে ইয়েচুরিকে প্রশ্ন করা হয়, সোমনাথবাবুকে কি দলে ফেরানো হবে? ইয়েচুরির জবাব, ‘‘আমাদের দলে সব ব্যাপারেই একটা নির্দিষ্ট প্রক্রিয়া আছে। সেই প্রক্রিয়ায় মধ্যে দিয়ে যেতে হবে। কিছু হলে আপনারা খবর পাবেন।’’ এই মন্তব্যকে, সিপিএমের অন্দরে সোমনাথবাবুকে দলে ফেরানোর প্রক্রিয়া শুরুর ইঙ্গিত হিসেবে দেখছেন অনেকে।

এমনিতে সিপিএমের নিয়ম হল, কেউ ফিরতে চাইলে তাঁকে দলের কাছে আবেদন করতে হবে। দল নিজে থেকে কাউকে ফেরাবে না। সোমনাথবাবু জানিয়ে দিয়েছেন, তিনি কোনও আবেদন করতে রাজি নন। ইয়েচুরির এ দিনের মন্তব্যের পরে সিপিএম নেতাদের অনেকের ধারণা, সোমনাথও ফিরবেন, নিয়মও ভাঙবে না— এমন কোনও মধ্যপন্থার খোঁজ করেছেন কারাট-পরবর্তী শীর্ষ নেতৃত্ব।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement