মা বলেছেন সৌরভই গুলি চালান: পবন

হাসপাতালের বিছানায় উষা সিংহ। ঠিকমতো কথা বলতে পারছেন না এখনও। চিকিৎসকেরা কথা বলতে গেলে অনেকটাই ইশারায় বোঝাচ্ছেন, নয়তো ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে থাকছেন। হাসপাতালের বাইরে ছেলে পবন উত্তেজিত, মায়ের এই অবস্থায় বাবার ভূমিকা নিয়ে। আর ততটাই নিরুত্তাপ তৃণমূল বিধায়ক তথা উষাদেবীর স্বামী অর্জুন সিংহ।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

ব্যারাকপুর শেষ আপডেট: ২৮ জুন ২০১৫ ০৩:১২
Share:

হাসপাতালের বিছানায় উষা সিংহ। ঠিকমতো কথা বলতে পারছেন না এখনও। চিকিৎসকেরা কথা বলতে গেলে অনেকটাই ইশারায় বোঝাচ্ছেন, নয়তো ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে থাকছেন। হাসপাতালের বাইরে ছেলে পবন উত্তেজিত, মায়ের এই অবস্থায় বাবার ভূমিকা নিয়ে। আর ততটাই নিরুত্তাপ তৃণমূল বিধায়ক তথা উষাদেবীর স্বামী অর্জুন সিংহ। শুধু বলছেন, ‘‘গুলি চলার ঘটনা ভিত্তিহীন। ছেলে কিছু জানে না। কেউ ভুল বোঝাচ্ছে। এফআইআর তুলে নেওয়ার ব্যবস্থা করছি।’’ শুক্রবারই পবন তোপ দেগেছিলেন, ‘‘মাকে সৌরভ গুলি করেছে। বাবা আড়াল করছেন ওকে।’’

Advertisement

বাবা-ছেলের দ্বৈরথ শনিবারও অব্যাহত। ছেলেকে বুঝিয়ে এফআইআর তুলে নেওয়ার কথা অর্জুনবাবু বললেও পবন কিন্তু শনিবার স্পষ্টই জানিয়ে দিয়েছেন, তাঁর মাকে অর্জুনবাবুর নিরাপত্তারক্ষী ও বাড়ির অন্যদের সামনে সৌরভ গুলি করেছিল। সে কথা শনিবার উষাদেবী নিজের মুখে বলেছেন বলেও পবনের দাবি। যদিও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ পুলিশকে প্রথমে উষাদেবীর শরীরে আঘাতটি গুলিতে হয়েছে বলে জানালেও অসংখ্য এক্সরে ও অস্ত্রোপচার করেও গুলির হদিস মেলেনি। হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, উষাদেবীর শারীরিক অবস্থা আগের থেকে কিছুটা উন্নতি হচ্ছে। তবে এখনও আতঙ্ক আর যন্ত্রণার ঘোর কাটেনি।

তৃণমূল বিধায়কের রক্ষণশীল পরিবারের কাদা ছোড়াছুড়ির ঘটনা প্রকাশ্যে চলে আসায় বিধায়ক নিজেও মেজাজ হারাচ্ছেন মাঝে মাঝে। এমনিতেই ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলে অর্জুন সিংহ শাসক দলের অন্য নেতা ও বিধায়কদের থেকে স্বতন্ত্র ভাবে দল চালান নিজের এলাকায়। ভাটপাড়ায় তৃণমূল ‘অর্জুনের তৃণমূল’ নামে প্রচলিত। মুকুল রায় দলে ক্ষমতায় থাকাকালীনও অর্জুন সিংহকে

Advertisement

ঘাঁটাতে চাইতেন না ভাটপাড়া ও শিল্পাঞ্চলের অবাঙালি ভোটব্যাঙ্কের কথা মাথায় রেখে। সেখানে পারিবারিক দ্বন্দ নিয়ে সংবাদমাধ্যমে কাটাছেঁড়া হওয়ায় দলের মধ্যেও কিছুটা কোণঠাসা হওয়ার আশঙ্কা থাকছেই দোর্দণ্ডপ্রতাপ তৃণমূল বিধায়কের মনে। সাংবাদিক আর ঘনিষ্ঠদের খেদের সঙ্গে বলছেন, ‘‘কোন পরিবারে একটু-আধটু সমস্যা না হয় বলুন? আমারও ফোন খারাপ হয়েছিল বলে প্রথমে কারও সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারিনি। নয়তো জল এতদূর গড়াতই না। ছেলে বিদেশে থাকে। ও না বুঝে এফআইআর করেছে। ওকে কেউ ভুল বুঝিয়েছে। সত্যিটা বুঝতে পারলে ও নিজেই এফআইআর প্রত্যাহার করবে।’’

গত কুড়ি বছর ধরে স্ত্রী যে মানসিক অবসাদে ভুগছেন তা জানিয়ে একতাড়া কাগজও বের করেন অর্জুনবাবু। বলেন, ‘‘অসুস্থ বলেই পাথরকে গুলি ভেবেছে। মনোরোগের চিকিৎসা করিয়ে ওষুধ খাচ্ছে। সে কথা পবনও জানে।

পবন দমবার পাত্র নন। বাবার বিরুদ্ধে তোপ দাগার পাশাপাশি তাঁর বক্তব্য, ‘‘হাসপাতাল বলছে গুলি লেগেছে আর বাবা, কাকারা অস্বীকার করছেন। আশ্চর্য! আমার বাবা ক্ষমতাশালী রাজনীতিক। পরিবারের থেকে তাঁর রাজনৈতিক জীবন ও স্বার্থ বড় বলে তিনি যাদের আড়াল করতে চাইছেন তারা আমার রক্তের সম্পর্কে ভাই হলেও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবেই আমাদের ক্ষতি চায়। মা ওদের আচরণে অনেক দিন থেকেই বিরক্ত হতেন। ভয় পেতেন আমাদের বাড়ি-ছাড়া করতে পারে বলে। ঘটনার আগে থেকেই আমাকে ফোন করে বলতেন আমি এসে যেন বিষয়টা দেখি। কিন্তু নিজের ব্যবসার কাজে ব্যস্ত থাকায় এতটা গুরুত্ব দিইনি। গুলি করতে পারে ভাবিনি।’’

হাসপাতাল পুলিশকে যে রিপোর্ট দিয়েছে, তাতে উষাদেবীর বাঁদিকের তলপেটে গুলিতে ক্ষত’র কথা লেখা আছে। ব্যারাকপুর ও কলকাতার হাসপাতালে অসংখ্য বার এক্স-রে করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার প্রায় তিন ঘণ্টা ধরে অস্ত্রোপচারও হয়েছে। তাতে অবশ্য গুলি বেরোয়নি। ঘটনার দিন অভিযুক্ত সৌরভ বিহারে এক আত্মীয়ের বাড়িতে ছিলেন বলে তাঁর পরিবার সূত্রে দাবি করা হয়েছে। এমনকী, তিনি কখনও উষাদেবীর সঙ্গে বিশেষ কথা বলতেন না বলেও জানানো হয়েছে। তবে একটা বিষয় স্পষ্ট, উষাদেবীর আহত হওয়ার ঘটনায় যে পারিবারিক কোন্দল

সামনে এসেছে, তা নিয়ে পবন মরিয়া হলেও বিষয়টি নিয়ে প্রকাশ্যে আলোচনা বন্ধ করতে চাইছেন অর্জুনবাবুরা। ঘটনার পর থেকেই সৌরভের বাবা ভীমবাবু বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার জন্য উঠেপড়ে লেগেছিলেন। এমনকী, উষাদেবীর আহত হওয়ার ঘটনাটাও ভুয়ো

বলে উড়িয়ে দেন তিনি। স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন উঠছে, সত্যিই যদি গুলি না চলে থাকে, তা হলে গোড়া

থেকে বিষয়টি এত আড়াল করার চেষ্টা কেন ছিল?

অর্জুনবাবু বলেন, ‘‘এ ভাবে অসম্মানিত হওয়াটা আমরাও ভাল ভাবে নিচ্ছি না। এর পর যদি প্রমাণ হয়ে যায় যে, গুলি চলেনি এবং সৌরভ এখানে ছিলই না তখন কী হবে?’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement