রানাঘাটকে দেখে নিজের কথা মনে পড়ছে কামদুনির

রানাঘাটের মধ্যে বছর দেড়েক আগের কামদুনিকেই দেখতে পাচ্ছেন ওঁরা। টিভি-র খবর, খবরের কাগজের ছবিতে ক্ষুব্ধ জনতার রাগের ভঙ্গিটা অবিকল সে-দিনের মতো। মঙ্গলবারের থমথমে দুপুরে সেই কথা ভেবেই দীর্ঘশ্বাস ফেলছিলেন টুম্পা ও মৌসুমি কয়াল। দেড় বছর আগে কামদুনিতে কলেজছাত্রীর ধর্ষণ ও খুনের ঘটনার পরে রানাঘাটের মতোই পথে নেমেছিল কামদুনি।

Advertisement

পারিজাত বন্দ্যোপাধ্যায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৮ মার্চ ২০১৫ ০৪:৩৭
Share:

টুম্পা ও মৌসুমি কয়াল। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য।

রানাঘাটের মধ্যে বছর দেড়েক আগের কামদুনিকেই দেখতে পাচ্ছেন ওঁরা।

Advertisement

টিভি-র খবর, খবরের কাগজের ছবিতে ক্ষুব্ধ জনতার রাগের ভঙ্গিটা অবিকল সে-দিনের মতো। মঙ্গলবারের থমথমে দুপুরে সেই কথা ভেবেই দীর্ঘশ্বাস ফেলছিলেন টুম্পা ও মৌসুমি কয়াল।

দেড় বছর আগে কামদুনিতে কলেজছাত্রীর ধর্ষণ ও খুনের ঘটনার পরে রানাঘাটের মতোই পথে নেমেছিল কামদুনি। গ্রামে পা-রাখা মুখ্যমন্ত্রীর কাছে প্রতিবাদে সরব হওয়া টুম্পা এখন তিন মাসের ‘বিট্টু’র মা। কোলের ছেলেকে সামলাতে সামলাতেই তরুণী মা বলছেন, “কী আশ্চর্য! দেড় বছরে কিছুই বদলাল না। পরিস্থিতিও না, প্রশাসনও না!” মৌসুমি কয়াল ফুঁসে উঠে বলছেন, “আমাদের গায়ে মাওবাদী-ছাপ্পা পড়েছিল! এখন রানাঘাটকে সিপিএম-বিজেপি বলা হচ্ছে।” টুম্পা-মৌসুমি এখনও হাল ছাড়েননি। কিন্তু দেড় বছর আগের ঝাঁঝালো ক্ষোভ এখন দীর্ঘশ্বাসে মিশে যাচ্ছে। শাসক দলের নিরন্তর চাপের মুখে গ্রামের মানুষজনও গুটিয়ে গিয়েছেন। গ্রাম্য ক্লাব-চত্বরে, মাটির দাওয়ায় পাতা মাদুরে, আকন্দ ঝাড়ের নীচে তাসের আড্ডায় প্রতিবাদের নামগন্ধ নেই। গ্রামের লোক হাত জোড় করে বলছেন, দয়া করে নাম-ধাম জানতে চেয়ে বিপদে ফেলবেন না। তার মধ্যেই কয়ালি সঙ্ঘের বটগাছতলায় গামছায় মুখ আড়াল করে পাঁচ বৃদ্ধ শোনালেন, ক’দিন ধরে গ্রামে ঘটা করে ক্রিকেট ম্যাচ, ফুটবল খেলা হল! নেতারা এসে কত প্রাইজ দিলেন। বিপিএল কার্ড, দু’টাকায় চাল, আরও ক-ত টোপ! সঙ্গে চোখরাঙানি! ব্যস, সব শেষ...

Advertisement

মৌসুমি দাবি করছেন, “গ্যারান্টি দিচ্ছি, রানাঘাটের আন্দোলনের কোমর ভাঙতেও ওরা এ রকমই করবে।”

কামদুনির মুখ যেমন আজ বন্ধ। বেশ কিছু দিন হয়ে গেল, গ্রাম ছেড়ে গিয়েছে নিহত তরুণীর পরিবার। প্রতিবাদী আন্দোলনের আর এক মুখ প্রদীপ মুখোপাধ্যায়কেও কামদুনি থেকে শাসনের তেহাটা স্কুলে বদলি করা হয়েছে। তবে মৌসুমি-টুম্পা বলছিলেন, মেয়েটির বাড়ির লোক এখনও গ্রামে ফোন করেন। এ দিনও মেয়েটির দাদু ফোনে বললেন, “কী করব! নাতিকে বাধ্য হয়ে সরকারি চাকরি নিতে হয়েছে।”

কামদুনির অবস্থাও পাল্টায়নি। নিহত তরুণী যেখানে পড়তেন, সেই ডিরোজিও কলেজ ছাড়িয়ে বড় রাস্তা থেকে বাঁ দিকে ঘুরে গ্রামের রাস্তার মুখে একলা শহিদ বেদী। দু’দিকে ভেড়িতে ঘেরা প্রায় দু’কিলোমিটার লম্বা নির্জন রাস্তা এখনও সমান অরক্ষিত। সন্ধের পরে কার্যত বাতি জ্বলে না। অথচ এখন ৭ জুন গ্রামের মেয়ের মৃত্যুদিনে ফুল দেওয়া ছাড়া প্রতিবাদের কথা ভাবার সাহসই নেই কামদুনির। প্রদীপবাবু অবশ্য আজ, বুধবারই রানাঘাটে যাওয়ার কথা বলছেন। টুম্পা-মৌসুমিরাও এক দিন যেতে চান। টুম্পার কথায়, “রানাঘাটের মধ্যে ওরা যাতে ভাঙন ধরাতে না-পারে, তার একটা শেষ চেষ্টা অন্তত করতে হবে!”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement