কখনও প্রশ্ন লোপাট। কখনও বা পরীক্ষার আগেই প্রশ্ন প্রকাশ। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগের পরীক্ষা টেট নিয়ে অভিযোগ উঠছে বারে বারে। টাকা নিয়ে প্রশ্ন বিক্রির অভিযোগ তো আছেই। সেই সঙ্গে পুরো কারচুপির জন্য শাসক দলের একাংশের দিকেই আঙুল তুলছে বিরোধী শিবির। একটি নিয়োগ পরীক্ষা নিয়ে অস্বচ্ছতার এত অভিযোগ কেন, শিক্ষামন্ত্রীকেই সেটা খতিয়ে দেখতে বললেন রাজ্যপাল।
বুধবার একটি অনুষ্ঠানে টেট নিয়ে প্রশ্ন করা হলে রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠী বলেন, ‘‘বিষয়টি নিয়ে কিছু অভিযোগ পেয়েছি। তবে আমি নিজে কোনও সিদ্ধান্ত নেব না। শিক্ষামন্ত্রীকেই বিষয়টি দেখতে বলেছি।’’ ৩০ অগস্ট পরীক্ষার ৪৮ ঘণ্টা আগে টেটের প্রশ্নপত্রের একটি প্যাকেট উধাও হয়ে যাওয়ায় ব্যাপক তোলপাড় হয়। পরীক্ষা স্থগিত করে দেয় রাজ্য সরকার। ১১ অক্টোবর ওই পরীক্ষার নতুন দিন ঘোষণা করেন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়।
নির্ধারিত দিন অর্থাৎ ১১ অক্টোবর পরীক্ষা শুরু হওয়ার কিছু আগেই সংবাদমাধ্যমের হাতে চলে আসে একটি প্রশ্নপত্র। ফলে প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগ ওঠে নতুন করে। যা নিয়ে পরে পরীক্ষা বাতিলের দাবি ওঠে। শিক্ষামন্ত্রীর ইস্তফা চেয়েও সরব হন বিরোধীরা। ঘটনার সিবিআই তদন্ত চেয়ে হাইকোর্টে মামলা পর্যন্ত হয়।
এই পরিস্থিতিতে এখন একটি অন্য প্রশ্নও সামনে এসেছে। তা হল— পদে পদে যখন এতই বিভ্রাট, তখন টেট চালিয়ে যাওয়ার কি আদৌ যুক্তি আছে? রাজ্য সরকার কেন এমন একটি পরীক্ষার আয়োজন করবে, উঠছে সেই প্রশ্নও। বরং শিক্ষাবিদের একটি বড় অংশের বক্তব্য, প্রাথমিক স্কুলগুলি নিজেদের চাহিদামতো নিয়োগের ব্যবস্থা করুক, দরকারে তারা আগের মতো কর্মসংস্থান কেন্দ্রের সাহায্য নিক। ২০০৯ সালে টেট চালু করার ব্যাপারে কেন্দ্রীয় সরকারের ঘোষণার আগে অনেকে ক্ষেত্রে এ ভাবেই নিয়োগ হতো প্রাথমিক স্কুলে। শিক্ষাবিদদের ওই অংশ টেটের মাধ্যমে নির্বাচন ও নিয়োগের পদ্ধতিটিকেই অপ্রয়োজনীয় বলে মনে করেন।
শিক্ষাবিদদের পর্যবেক্ষণ, বিরোধী শিবির ও পরীক্ষার্থীদের দাবি সত্ত্বেও শিক্ষামন্ত্রী নিজের অবস্থানে অনড়। তাঁর দাবি, টেট নির্বিঘ্নেই হয়েছে। ত্রিপাঠীর বক্তব্য শুনে মন্তব্য না-করেও পার্থবাবু বলেন, ‘‘২৩ লক্ষ পরীক্ষার্থী যে শান্তিপূর্ণ ভাবে পরীক্ষা দিয়েছেন, সেটাই বড় সাফল্য।’’