কান্দি-কাণ্ডে ফের সাজানো ঘটনার তত্ত্ব সামনে আনলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মঙ্গলবার বিধানসভায় তিনি দাবি করেন, কোনও একটি টিভি চ্যানেল টাকাপয়সা দিয়ে কান্দিতে তৃণমূলের ওই মিছিলে লোক ঢুকিয়েছিল। এবং প্রাথমিক সেই তথ্য অনুযায়ী তাদেরকেই পিস্তল হাতে মিছিলে দেখা গিয়েছে বলে জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।
তবে, আসল পিস্তল নিয়ে মিছিল প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী নরম অবস্থান নিলেও, সেই বিষয়ে নকল পিস্তল নিয়ে বিক্ষোভ দেখানোয় বেদম চটেছেন তিনি। এ দিন বিধানসভায় যাঁরা ওই বিক্ষোভ দেখিয়েছেন সেই বাম-বিধায়কদের গ্রেফতার করা উচিত বলেও মন্তব্য করেন মুখ্যমন্ত্রী।
এ দিন অধিবেশন বসতেই কান্দি-কাণ্ড নিয়ে বিধানসভায় নকল পিস্তল নিয়ে বিক্ষোভ দেখান বাম বিধায়কেরা। স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁদের সেই পিস্তল বাজেয়াপ্ত করেন। শেষে টানা হইহট্টগোলের পর সভা ছেড়ে বেরিয়ে তাঁরা। এর পরই বিধানসভায় আসেন মুখ্যমন্ত্রী। বামেদের এই আচরণে প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ হন তিনি। জিরো আওয়ারের পরে তাঁকে বলার সুযোগ দেওয়া হলে তিনি বলেন, ‘‘ভাগ্যিস এমন একটা বিক্ষোভের সময় আমি সভায় ছিলাম না। এটা অসৌজন্য, অশোভনীয়ই শুধু নয়, গণতন্ত্রের কলঙ্কজনক দিন। এ ভাবে অস্ত্র নিয়ে যারা বিক্ষোভ করেছে, তাদের গ্রেফতার করা উচিত।’’
কান্দির মিছিলের প্রসঙ্গে এর পর তিনি বলেন, ‘‘মিছিলের খবর পেয়েই আমি পুলিশকে ব্যবস্থা নিতে বলেছি। তদন্ত চলছে। তবে প্রথামিক তথ্য একটা পেয়েছি। একটি টিভি চ্যানেল টাকাপয়সা দিয়ে ওখানে মিছিলে লোক ঢুকিয়েছিল। যদি এটা সত্যি হয়, তা হলে তাদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’ মুখ্যমন্ত্রীর এ দিনের মন্তব্যেও তীব্র প্রতিক্রিয়া হয়েছে বিরোধী শিবিরে। সভার বাইরে কান্দির কংগ্রেস বিধায়ক অপূর্ব সরকারের প্রশ্ন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী বলছেন তদন্ত চলছে। প্রসাসনকে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। আবার তিনি বলছেন, একটা চ্যানেল লোক ঢুকিয়ে তাকতে পারে। তা হলে আর তদন্তের দরকার কি?’’
তাঁকে সমর্থন করেছেন অন্য কংগ্রেস বিধায়কেরাও। পক্ষান্তরে ইনসার, আমজাদ, রামেশ্বরের মতো বাম বিধায়কদের সমস্বরে প্রতিক্রিয়া, ‘‘আমরা গ্রেফতার হতে তৈরি। উনি (মুখ্যমন্ত্রী) আমাদের গ্রেফতার করুন!’’
এ দিন বিধানসভায় পরিষদীয়মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ও বলেন, ‘‘কান্দির ওই ঘটনায় যে দলের যারাই জড়িত থাকুক না কেন, তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’’ সেই নির্দেশ মেনেই এ দিন মুর্শিদাবাদ পুলিশ অস্ত্র আইনে স্বতঃপ্রণোদিত ভাবে একটি মামলা রুজু করেছে। তবে সেখানে কারও নাম উল্লেখ করা হয়নি। অজ্ঞাতপরিচয় কয়েক জন ব্যক্তির নামে ওই মামলা রুজু করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। তবে সোমবারের ওই মিছিলে যারা পিস্তল নিয়ে হাজির হয়েছিল, সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ পাওয়া ছবি দেখে তাদের প্রত্যেককেই চিনতে পেরেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। তবে কেন, অজ্ঞাত পরিচয় হিসেবে মামলা? এ প্রশ্নের কোনও জবাব মেলেনি পুলিশের কাছে।
পরে মুখ্যমন্ত্রী জানান, কান্দি-কাণ্ডে দুই অভিযুক্তকে গ্রেফতার করা হয়েছে।