কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য পদে সোনালি চক্রবর্তী বন্দ্যোপাধ্যায়কে পুনর্বহালের সিদ্ধান্ত খারিজ। — নিজস্ব চিত্র।
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য পদটিতে পুনর্বহালের সিদ্ধান্ত খারিজ করে দিল কলকাতা হাই কোর্ট। মঙ্গলবার এ কথা জানিয়েছে প্রধান বিচারপতি প্রকাশ শ্রীবাস্তব এবং বিচারপতি রাজর্ষি ভরদ্বাজের ডিভিশন বেঞ্চ। ওই পদে সোনালি চক্রবর্তী বন্দ্যোপাধ্যায়কে পুনর্নিয়োগ দিয়েছিল রাজ্য সরকার। সেই নিয়োগই হাই কোর্ট নির্দেশ দিয়ে খারিজ করে দিয়েছে।
ওই মর্মে একটি জনস্বার্থ মামলা কলকাতা হাই কোর্টে দায়ের করা হয়েছিল। আদালতের ওই নির্দেশের পর মামলাকারীর পক্ষে আইনজীবী বিল্বদল ভট্টাচার্য জানান, মামলাটির বহু দিন ধরে শুনানি হয়েছে। আদালত উভয় পক্ষের বক্তব্যই শুনেছে। তাঁর কথায়, ‘‘আদালতের রায়ে বলা হয়েছে, যিনি উপাচার্য, তিনি এই রায় ঘোষণার সময় থেকে আর উপাচার্য নন। তাঁকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে।’’
সরকারি সূত্রের খবর, কলকাতা হাই কোর্টের ওই নির্দেশের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন জানাবে রাজ্য সরকার। কিন্তু কলকাতা হাইকোর্ট তাদের রায়ে ২০২১ সালের ২৭ অগস্ট সোনালিকে পুনর্নিয়োগের সিদ্ধান্ত খারিজ করেছে। ফলে এখন তিনি ওই পদে রয়েছেন কি না, তা নিয়েও প্রশ্ন থাকছে। সরকারি সূত্রের খবর, ওই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে রাজ্য শিক্ষা দফতর।
শিক্ষা দফতর সূত্রের বক্তব্য, রাজ্যের যে ৩১টি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে, তার প্রতিটিতেই উপাচার্য নিয়োগ করা হয়েছিল বিধিবদ্ধ ভাবে সার্চ কমিটির সুপারিশ মেনে। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে সোনালিকেও সে ভাবেই নিয়োগ করা হয়েছিল। পুনর্নিয়োগের ক্ষেত্রে আর সার্চ কমিটির রিপোর্ট লাগে না। সরকারই সিদ্ধান্ত নিয়ে সরাসরি ফাইল পাঠাতে পারে রাজ্যপালের কাছে, যিনি পদাধিকার বলে রাজ্যের সমস্ত সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রেও সেটিই করা হয়েছিল। তৎকালীন আচার্য জগদীপ ধনখড় বিভিন্ন প্রশ্ন তুলে ফাইলটি ফেরত পাঠান। রাজ্যের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রেও তিনি এমন প্রশ্ন তুলেছিলেন বলে শিক্ষা দফতরের একটি সূত্রের দাবি।
আচার্য বিভিন্ন প্রশ্ন তোলায় বিষয়টি নিয়ে রাজভবন এবং নবান্নের মধ্যে ফাইল চালাচালি হচ্ছিল। এর মধ্যেই কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সোনালির পূর্বতম মেয়াদের শেষ দিন বিকেলে রাজ্য সরকার নির্দেশ দেয় ‘রিমুভাল অব ডিফিকাল্টি ক্লজ’-এর বলে সোনালিকে পুনর্নিয়োগ করতে। নচেৎ কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্যহীন হয়ে পড়ত। সেই নির্দেশে আচার্যের স্বাক্ষর বাধ্যতামূলক কি না, তা জানতে চেয়েই বিষয়টি একটি জনস্বার্থমূলক মামলার আবেদনের ভিত্তিতে আদালতে যায়। তার প্রেক্ষিতেই কলকাতা হাইকোর্ট জানিয়েছে, ওই নির্দেশ-সহ নিয়োগ, পুনর্নিয়োগ এবং মেয়াদবৃদ্ধি— সমস্ত ক্ষেত্রেই আচার্যের সম্মতিসূচক স্বাক্ষর প্রয়োজন।
যে হেতু বিষয়টি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় সংক্রান্ত এবং সেখানকার উপাচার্য পদে ছিলেন সোনালি, তাই মঙ্গলবার কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ জানিয়েছে, সোনালিকে দ্বিতীয় বার কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য পদে নিয়োগের সিদ্ধান্ত রাজ্য নিতে পারে না। ২০২১ সালের ২৭ অগস্ট সোনালিকে পুনর্নিয়োগের জন্য রাজ্য সরকার যে বিজ্ঞপ্তি জারি করেছিল, তা-ও খারিজ করে দেওয়া হয়েছে। একটি জনস্বার্থ মামলার প্রেক্ষিতে মঙ্গলবার এ কথা জানিয়েছে হাই কোর্ট।
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য পদে সোনালিকে নিয়ম মেনে পুনর্নিয়োগ করা হয়নি বলে অভিযোগের ভিত্তিতে কলকাতা হাই কোর্টে জনস্বার্থ মামলাটি দায়ের করেছিলেন অনিন্দ্যসুন্দর দাস নামে এক আইনজীবী। তাঁর অভিযোগ ছিল, সোনালির দ্বিতীয় বারের নিয়োগে পদ্ধতিগত ত্রুটি রয়েছে। তাঁর বক্তব্য, রাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়োগের নিয়ম অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য অর্থাৎ রাজ্যপালের কাছে রাজ্যের মনোনীত ব্যক্তির নাম পাঠাতে হয়। রাজ্যপাল ওই নামে সিলমোহর দিলে তবে তাঁকে সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য করা হয়ে থাকে। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে সেই নিয়ম মানা হয়নি।
সোনালি ঘটনাচক্রে, রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যসচিব তথা বর্তমানে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মুখ্য উপদেষ্টা আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্ত্রী। তবে শিক্ষা দফতর সূত্রের বক্তব্য, এর মধ্যে কোনও ‘ব্যক্তিগত উপাদান’ নেই। হাই কোর্ট বলেছে, এমন নিয়োগ বা পুনর্নিয়োগে আচার্যের স্বাক্ষর না-থাকলে বিষয়টি ‘অসম্পূর্ণ’ থেকে যাচ্ছে। তবে সরকারি আধিকারিকদের মতে, কলকাতা হাই কোর্টের এই নির্দেশের ফলে কলকাতা-সহ রাজ্যের অন্য সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলির ভাগ্যও নির্ধারিত হয়ে গেল। এর ফলে শিক্ষাক্ষেত্রে একটি সামূহিক অচলাবস্থা দেখা দেওয়ার সম্ভাবনাও তৈরি হল।