গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ
আদালতে ডিভোর্সের মামলার এখনও নিষ্পত্তি হয়নি। তার মধ্যেইশোভন-রত্না বিবাদ এবার গড়াল মহিলা কমিশনেও। কমিশনে চিঠি লিখে রত্নার নালিশ, ‘‘আমার স্বামীকে আমার বিরুদ্ধে বিষিয়ে তুলেছেন বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়। আমাকে অপমান করেছেন, ছেলেমেয়েদের বাবার সঙ্গে দেখা করতে দিচ্ছেন না বৈশাখী।’’ অর্থাৎ, রত্নার নিশানায় যতটা না তাঁর স্বামী শোভন চট্টোপাধ্যায়, তার কয়েক গুণ বেশি বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়।
রত্নার এ রকম এক গুচ্ছ অভিযোগের পাল্টা হিসেবে শোভন চট্টোপাধ্যায়ও একটি চিঠি লিখেছেন কমিশনে। তাতে রত্নার অভিযোগ যেমন খণ্ডন করেছেন শোভন, তেমনই তাঁর বিরুদ্ধেও এক গুচ্ছপাল্টা অভিযোগ তুলেছেন। দু’জনের চিঠিতেই প্রায় ছত্রে ছত্রে বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম উল্লেখ করা হয়েছে।
যাঁকে ঘিরে এই ‘পত্রযুদ্ধ’, সেই বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায় অবশ্য আগের মতোই বিষয়টি গায়ে মাখতে চাইছেন না। তাঁর বক্তব্য, ‘‘যতক্ষণ পর্যন্ত রত্না চট্টোপাধ্যায়ের এই সব আজগুবি অভিযোগের জবাব দিচ্ছেনশোভন চট্টোপাধ্যায়, ততক্ষণ আর এর মধ্যে আমি জড়াতে চাই না। শোভন চট্টোপাধ্যায় যেহেতু নিজেই সব অভিযোগের জবাব দিয়েছেন, তখন এর মধ্যে আমার আর কোনও বক্তব্য থাকতে পারে বলে আমি মনে করি না।’’
বিভিন্ন সময়ে সংবাদমাধ্যমে রত্না নানা অভিযোগ তুলেছেন বৈশাখীর বিরুদ্ধে। এ বার সেটাই লিখিত আকারে মহিলা কমিশনে পাঠিয়েছেন। দু’পাতার ওই চিঠি মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সনের উদ্দেশে পাঠানো হয়েছে। যদিও ওই চিঠিতে কোনও তারিখ নেই। ফলে কবে সেই চিঠি পাঠানো হয়েছে, তা নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি। চিঠির বিষয়বস্তু হিসেবে শোভনের বৈবাহিক জীবন, বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায় এবং বর্তমান পরিস্থিতিও রয়েছে।
কী লিখেছেন রত্নাদেবী? শুরুতেই ১৯৯৫ সালের ৬ ডিসেম্বর তাঁর সঙ্গে শোভন চট্টোপাধ্যায়ের বিয়ের কথা উল্লেখ করেছেন। তার পর লিখেছেন, ‘‘২০১৭ সালের অগস্টে বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায় নামে এক মহিলা তাঁদের বিবাহিত জীবনে তথা স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কে হস্তক্ষেপ করতে শুরু করেন এবং আমার বিরুদ্ধে আমার স্বামীর মন বিষিয়ে তোলেন। তার জেরে আমার স্বামী বিবাহ বিচ্ছেদের মামলা করেন।’’ চিঠিতে রত্নাদেবীর বক্তব্য, ‘‘বর্তমানে বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায় আমার স্বামীর সঙ্গে গোলপার্কের ফ্ল্যাটে থাকছেন। নিজেকে আমার স্বামীর শুভাকাঙ্খী বলে দাবি করেও বিভিন্ন সময়ে আমার সম্মানহানি করেছেন, আমাদের সম্পর্ক নিয়ে কটু মন্তব্য করেছেন।’’
ছেলেমেয়েদেরও বাবার সঙ্গে দেখা করতে দেওয়া হচ্ছে না, এই অভিযোগ তুলে রত্নার দাবি, ‘‘ওদের উপর মানসিক অত্যাচার করা হচ্ছে। যার ফলে আমার মেয়ে সুহানি চট্টোপাধ্যায়কে নিয়মিত মানসিক চিকিৎসা করাতে হচ্ছে। আমার সন্তানদের ভবিষ্যৎ নিয়েও আমি উদ্বিগ্ন।’’
বৈশাখীর বিরুদ্ধে রত্না যতই অভিযোগ তুলেছেন, তার জবাব দিতে বরাবরই এগিয়ে এসেছেন শোভন চট্টোপাধ্যায়। কমিশন যুদ্ধেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। প্রাক্তন মেয়র পাল্টা একটি চিঠি লিখে কার্যত ধরে ধরে রত্নার অভিযোগগুলির জবাব দিয়েছেন। প্রথমেই চিঠির বক্তব্য অসত্য এবং আজগুবি বলে উড়িয়ে দিয়েছেন শোভন। বিচারাধীন একটি বিষয়ে এই ধরনের একটি ভিত্তিহীন অভিযোগের চিঠি কমিশন কী ভাবে গ্রহণ করে, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন শোভন। এর পর প্রতিটি অভিযোগ ধরে ধরে জবাব দিয়েছেন তিনি।
বৈশাখীর বিরুদ্ধে রত্নার সম্মানহানির অভিযোগের জবাবে শোভন চট্টোপাধ্যায় লিখেছেন, ‘‘বৈশাখীর মিডিয়া ট্রায়াল হয়েছে। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, কমিশনও সে বিষয়ে অবগত। রত্না এবং তাঁর বাবা দুলাল দাস যে সব নারীবিরোধী এবং অসংসদীয় কথাবার্তা বলেছেন, কমিশন সেগুলি শুনলে আমি খুশি হব।’’ রত্নাদেবীর মানসিক স্থিরতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে শোভনের দাবি, কোনও মহিলা (বৈশাখী) যদি কাউকে শুভাকাঙ্খী হিসেবে দাবি করে, সে কী করে অপরাধমূলক কোনও কাজ করতে পারে?’’
বৈশাখীর বিরুদ্ধে তাঁর কাছ থেকে কার্যত শোভনকে কেড়ে নেওয়ার অভিযোগ তুলেছেন রত্না চট্টোপাধ্যায়। বৈশাখীর পাশে দাঁড়িয়ে শোভনের বক্তব্য, ‘‘মানসিক নির্যাতন, আর্থিক শোষণের কারণেই আমি বিবাহবিচ্ছেদের মামলা করেছি। সেই মামলায় আমার বা রত্নাদেবীর লিখিত বয়ানে কোথাও বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়ের নামোল্লেখ নেই।’’ সন্তানদের তাঁর সঙ্গে দেখা করতে বৈশাখী বাধা দিচ্ছেন এই অভিযোগও উড়িয়ে দিয়েছেন শোভন। বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায় কখনও আমার সন্তানদের সঙ্গে সাক্ষাতে বা অন্য কোনও ভাবে কোনও কথা বলেননি। বলেও জানিয়েছেন শোভন।
মহিলা কমিশন সূত্রে খবর, দু’জনকেই বক্তব্য শোনার জন্য ডেকে পাঠানো হয়েছে। তবে নির্দিষ্ট দিনক্ষণ এখনও জানা যায়নি। অন্য দিকে চিঠির বিষয়ে বৃহস্পতিবার রত্না চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘কমিশন ডেকেছে। যা জবাব দেওয়ার কমিশনের সামনেই দেব।’’
https://www.anandabazar.com/topic/baishakhi-banerjee
https://www.anandabazar.com/topic/ratna-chatterjee
https://www.anandabazar.com/topic/sovan-chatterjee
আরও পড়ুন: উরির চেয়েও অনেক বড়! পুলওয়ামায় জৈশ হামলায় হত ৩০ জওয়ান, নিন্দায় গোটা দেশ
আরও পডু়ন: রাজীব কুমারকে জেরা করে উল্লেখযোগ্য তথ্য হাতে এসেছে, দাবি সিবিআইয়ের