Rampurhat Murder

Rampurhat Clash: কখন বগটুই ছেড়েছিল দমকল? সব নিয়ম কি মেনেছিল তারা? প্রশ্ন সিবিআইয়ের

তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানান সিবিআই-কর্তারা। সেই সঙ্গে তাঁরা জানাচ্ছেন, এই সব প্রশ্নের উত্তর পেতে বীরভূম জেলা পুলিশের কর্তা ও রামপুরহাট থানাক পুলিশকর্মীদের পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট দমকলকর্মীদেরও জিজ্ঞাসাবাদের প্রয়োজন রয়েছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৮ মার্চ ২০২২ ০৭:২১
Share:

বীরভূমের বগটুই গ্রামের রাস্তায় সিবিআইয়ের দল। নিজস্ব চিত্র

কোথাও আগুন নেভাতে গিয়ে দমকল কখন ঘটনাস্থল থেকে বিদায় নেয়?

Advertisement

প্রশ্নটা সিবিআইয়ের। এবং সাধারণ উত্তরটা তারাই দিচ্ছে যে, দমকলের নিয়ম অনুযায়ী আগুন নেভানোর বা সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে আসার পরে অকুস্থলে এক প্রস্ত তল্লাশি চালানো হয়। তার পরে সংশ্লিষ্ট ঘটনার সম্পূর্ণ বিবরণ লিপিবদ্ধ ও নথিভুক্ত করা হয় স্থানীয় থানায়। সেই সামগ্রিক বিবরণ থানায় জমা দেওয়ার পরে তবেই ঘটনাস্থল ছেড়ে যেতে পারে দমকল। প্রশ্ন উঠছে, ২১ মার্চ রাতে রামপুরহাটের বগটুই গ্রামে বাড়িতে অগ্নিসংযোগের রাতে দমকল কি প্রস্থানের সেই নিয়ম মেনেছিল? মেনে থাকলে পরের দিন সকালে ভস্মস্তূপ থেকে সাত-সাতটি মৃতদেহ পাওয়া গেল কী ভাবে?

সিবিআইয়ের বক্তব্য, নিয়মনির্দিষ্ট সময়ের আগেই সে-রাতে দমকল এলাকা ছেড়ে চলে গিয়েছিল এবং পুলিশকর্তারাও প্রায় একই সময়ে সেখান থেকে চলে যান বলে বিভিন্ন সূত্রে জানতে পেরেছে তারা। তাদের সন্দিগ্ধ প্রশ্ন, কারও বিশেষ কোনও নির্দেশ পেয়েই কি তা হলে দমকল ও পুলিশ একসঙ্গে এলাকা ছেড়েছিল?

Advertisement

বগটুইয়ের ঘটনায় সব দিক থেকে প্রশ্ন আর অভিযোগের বেড়াজালে মূলত পুলিশই। তবে রেহাই পাচ্ছে না দমকলও। সে-রাতে দমকলের ভূমিকা ঠিক কী ছিল, প্রশ্ন তুলছে সিবিআই। বীরভূমের বগটুই গ্রামের বাড়িতে আগুন লাগিয়ে অন্তত আট জনকে পুড়িয়ে মারার ঘটনায় সর্বশক্তি নিয়ে তদন্তে নেমেছে তারা। কেন্দ্রীয় ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞেরা নমুনা সংগ্রহের কাজ করছেন। আর সিবিআই বয়ান রেকর্ড করে চলেছে প্রত্যক্ষদর্শীদের। নানান দিক থেকে চলছে তদন্ত।

সেই সবিস্তার তদন্তেই দমকলের প্রসঙ্গ উঠে আসছে বলে সিবিআইয়ের দাবি। গত ২২ মার্চ সকালে বগটুইয়ের একটি বাড়ি থেকে পুড়ে খাক হয়ে যাওয়া সাতটি দেহ উদ্ধার করা হয়। সিবিআইয়ের বক্তব্য, ২১ মার্চ রাত সাড়ে ১০টা নাগাদ রামপুরহাট দমকল কেন্দ্রে বগটুই গ্রামের কিছু বাড়িতে অগ্নিসংযোগের ঘটনার খবর পৌঁছে গিয়েছিল। দমকলকর্মীরা ঘটনাস্থলে পৌঁছন রাত সাড়ে ১১টা নাগাদ। বিভিন্ন জ্বলন্ত বাড়ি থেকে কয়েক জনকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠান তাঁরা। তার পরে রাত আড়াইটে নাগাদ তাঁরা ঘটনাস্থল ছেড়ে চলে যান।

সিবিআইয়ের প্রশ্ন, দমকলকর্মীরা তখনই ঘটনাস্থল ছাড়েন, যখন আগুন পুরোপুরি নিভে যায় এবং অগ্নিদগ্ধ এলাকায় আর কেউ জীবন্ত বা মৃত ব্যক্তি যে নেই, সেই বিষয়ে তাঁরা নিশ্চিন্ত হন। কিন্তু বগটুইয়ের ক্ষেত্রে সেই নিয়ম মেনে চলা হয়েছিল কি? যদি নিয়ম মানা হয়ে থাকে, ২১ তারিখ (সোমবার) রাতে দমকল ঘটনাস্থল ছেড়ে চলে যাওয়ার পরে মঙ্গলবার (২২ তারিখ) সকালে গ্রামবাসী সোনা শেখের বাড়ি থেকে সাতটি পুড়ে যাওয়া দেহ উদ্ধার হয় কী ভাবে? ঠিক এখানেই খটকা লাগছে সিবিআইয়ের তদন্তকারীদের।

সিবিআইয়ের সন্দেহ, আগুন নেভানোর পরে এক দফা তল্লাশি, ঘটনার সম্পূর্ণ বিবরণ স্থানীয় থানায় লিপিবদ্ধ করে জমা দিয়ে ঘটনাস্থল ছেড়ে যাওয়ার নিয়ম বগটুইয়ে মানা হয়নি। সিবিআইয়ের প্রাথমিক অনুমান এবং অভিযোগ, সোমবার রাতে অগ্নিদগ্ধ কয়েক জন উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠানোর পরে সংশ্লিষ্ট বাড়িগুলির আগুন নিভিয়ে দিয়ে কোনও তল্লাশি না-করেই আড়াইটে নাগাদ দমকলকর্মীরা ঘটনাস্থল ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন। সিবিআই-কর্তাদের বক্তব্য, বিভিন্ন সূত্রে তাঁরা খবর পেয়েছেন যে, আশপাশে থাকা জেলা পুলিশের কর্তারাও এলাকা ছেড়ে চলে যান প্রায় একই সময়ে।

দমকল ও পুলিশকর্তারা প্রায় একই সময়ে এলাকায় ছাড়ায় প্রশ্ন তুলছেন সিবিআইয়ের তদন্তকারীরা। তাঁদের অভিযোগ, আগুন নিভে যাওয়ার পরে কয়েক ঘণ্টার জন্য ওই এলাকা একেবারে ফাঁকা করে দেওয়া হয়েছিল। মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে পরের দিন সকাল সাড়ে ৭টায়। তদন্তকারীদের প্রশ্ন, কারও নির্দেশে দমকল ও পুলিশ ঘটনার রাতে এলাকা ছেড়ে থাকলে সেই নির্দেশক কে? অগ্নিকাণ্ডের পর থেকে বেশ কয়েক জন গ্রামবাসী এখনও নিখোঁজ বলে সিবিআইয়ের কাছে অভিযোগ এসেছে। তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানান সিবিআই-কর্তারা। সেই সঙ্গে তাঁরা জানাচ্ছেন, এই সব প্রশ্নের উত্তর পেতে বীরভূম জেলা পুলিশের কর্তা ও রামপুরহাট থানাক পুলিশকর্মীদের পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট দমকলকর্মীদেরও জিজ্ঞাসাবাদের প্রয়োজন রয়েছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement